ধর্মশালায় রানের মাঠে স্বপ্নের শুরুর অপেক্ষায় বাংলাদেশ
৬ অক্টোবর ২০২৩
বিশ্বকাপের শেষ চারে যাওয়ার স্বপ্নযাত্রার প্রথম পদক্ষেপে পা হড়কানো চলবে না- এমন সমীকরণ নিয়ে ধর্মশালায় খেলতে নামছে বাংলাদেশ। উইকেটে রান থাকবে প্রচুর, কিন্তু টপ অর্ডারের তো জ্বলে উঠতে হবে। ওপেনিংয়েই বা লিটন দাসের সঙ্গে কে নামবে? এত দিন ধরে এত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সেরা একাদশই বা কীভবে সাজানো হবে। সমীকরণ তাই মেলাতে হবে আরও।
দেশের কোটি কোটি ক্রিকেটপ্রেমীদের মতো দলেরও আশা এবার সেমি-ফাইনাল খেলা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ অভিযান শুরুর আগের দিন শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে সেটা উসকে দিলেন জাতীয় দলের হেড কোচ চান্ডিকা হাথুরুসিংহে।
“বিশ্বকাপটা ভালোভাবে কাটানো আর ম্যাচ জেতা আমার লক্ষ্য। আমাদের লক্ষ্য সেমি-ফাইনালে খেলা। এটা স্বপ্নও হতে পারে, লক্ষ্যও হতে পারে।”
শুধু স্বপ্ন না, বাস্তবিক সম্ভবনা হিসেবেই সেমি-ফাইনাল দেখতে পারছেন কোচ।
“যদি চার-পাঁচটা ম্যাচ জিতি তাহলে সেমি-ফাইনালে খেলার বা নক-আউট পর্বে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা তৈরি করতে পারব। এটা আমাদের প্রথম লক্ষ্য। এটি করার জন্য আমাদের যথেষ্ট ভালো দল আছে।”
স্বপ্নের পাশাপাশি ধর্মশালার পিচে অনেক রানও দেখছেন হাথুরুসিংহে। জানিয়েছেন, খুব ভালো স্পোর্টিং উইকেটে বড় সংগ্রহ আশা করা যায়।
তবে আগে ব্যাট করলে তো ব্যাটারদের সেটা করে দেখাতে হবে। বিশ্বকাপের মূল পর্ব শুরুর আগে গুয়াহাটিতে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। সেখানে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে ব্যাট ও বল হাতে দল দারুণ পারফর্ম করলেও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাট হাতে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি টাইগাররা।
চোটের শঙ্কায় প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতে দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান মাঠে না নামলেও আফগানদের বিপক্ষে মাঠে দেখা যাবে তাকে। তাতে ব্যাটে-বলে গভীরতা নিয়ে ভাবতে হবে না। ব্যাট হাতে তানজিদ তামিম ও মেহেদী হাসান মিরাজ রয়েছেন দারুণ ছন্দে। ব্যাট হাতে দুজনই দিয়েছেন নিজেদের সামর্থ্যের পরিচয়। লঙ্কানদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে তানজিদ খেলেন ৮৪ রানের দারুণ এক ইনিংস। অন্যদিকে, টপ-অর্ডারে নেমে মিরাজ ৬৭ রানের ইনিংস খেলে পরিচয় দেন ব্যাট হাতে নিজের যোগ্যতার।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে বাকি ব্যাটাররা তেমন সুবিধা না করতে পারলেও তানজিদ ও মিরাজ সেদিনও নিজের সেরাটা উজাড় করে দেন।
তবে ওপেনিংয়ে লিটনে সঙ্গে কে নামবে সেটা এখন দেখার বিষয়। সংবাদ সম্মেলনে ওপেনিং জুটি নিয়ে এই দুই বিকল্পই রেখে দিলেন হাথুরুসিংহে।
“আমাদের কাছে অল্পই বিকল্প আছে এবং আমরা আগামীকাল (শনিবার) সিদ্ধান্ত নিব। আপনারা তখনই দেখতে পাবেন কে একে ও দুইয়ে ব্যাট করছে এবং কারা ওপেনিংয়ে থাকছে।”
আর দলের কম্বিনেশন ম্যাচের দিনই চূড়ান্ত করার কথা জানালেন কোচ, “কম্বিনেশন নিয়ে আমরা আগামীকাল (শনিবার) সকালে সিদ্ধান্ত নেব আরেকবার উইকেট দেখে।”
প্রস্তুতি ম্যাচে বল হাতে দারুণ পারফর্ম করেন দলের বোলাররাও। লঙ্কানদের বিপক্ষে নিজেদের স্পিন শক্তিমত্তার জানান দেন বাংলাদেশ স্পিনাররা। অন্যদিকে অল্প পুঁজিতেও ইংলিশদের বিপক্ষে পেসাররা ভালো বল করেন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে আসা অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী খেলোয়াড়দের ওপর আস্থা রাখার কথা জানান হাথুরুসিংহে। তার প্রত্যাশা এই বিশ্বকাপে শরীফুল ইসলাম, তাওহীদ হৃদয়, তানজিদ তামিম ও তানজিম হাসান সাকিব দলের জন্য ইতিবাচক কিছু করে দেখাবে।
দল ও দেশের সমর্থকরাও তাকিয়ে থাকবে এই তরুণ প্রতিভাদের ওপর। সঙ্গে তাকিয়ে থাকবে লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাটের দিকেও।
গত মাসে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপে আফগান বোলারদের নিয়ে রীতিমত ছেলেখেলা করে মিরাজ-শান্তরা। এই দুই ব্যাটারের জোড়া শতকে ওই ম্যাচে ৮৯ রানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।
ওয়ানডেতে এখন পর্যন্ত ১৫ বার একে-অপরের মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান। বাংলাদেশ ৯ ম্যাচে জয় পেলেও দেশের মাটিতে সবশেষ সিরিজে ২-১ ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ।
তবে বিশ্বকাপে আফগানদের সঙ্গে মুখোমুখি দুইবারের দেখায় বেশ দাপুটে জয় পায় টাইগাররা। ২০১৫ বিশ্বকাপে ১০৫ রানে এবং ২০১৯ বিশ্বকাপে ৬২ রানে আফগানদের হারায় সাকিব-মুশফিকরা।
শক্তিমত্তার বিবেচনায় আফগানরাও কোনো অংশে বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে নেই। এশিয়া কাপে বাংলাদেশের কাছে হারলেও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তীরে এসে তরি ডোবে রশিদ খানদের। বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচেও বেশ দাপটের সঙ্গেই হারায় লঙ্কানদের।
দলে রয়েছে মোহাম্মদ নবি, রশিদ ও মুজিব উর রহমানের মতো স্পিনাররা। ব্যাট হাতে দারুণ ছন্দে রয়েছেন রহমত শাহ, ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদি। আরও আছেন বাংলাদেশকে সামনে পেলেই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা বাঁহাতি পেসার ফজলহক ফারুকি।
বিশ্বকাপের বেশিরভাগ ম্যাচের মতো বাংলাদেশের শুরুর ম্যাচটি দিবা-রাত্রির না। খেলা শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সকাল ১১টায়।
মন্তব্য করুন: