বাঘে-সিংহের জমজমাট লড়াইয়ের অপেক্ষা
৯ অক্টোবর ২০২৩
থ্রি-লায়ন্স তো কোণঠাসাই থাকবে? আর অমন শিকারের পর টাইগারদের ক্ষুধা তো বেশি থাকারই কথা - মুখোমুখি হওয়ার আগে দুই দলের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা বোঝা দায়। ইংলিশ ক্রিকেটারদের কথা শুনলে মনে হবে রাজত্ব ধরে রাখতে জার্সির মুকুট পরা তিনটা সিংহের মতোই তারা দ্বিগুণ আগ্রাসী হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে। সেই তুলনায় বাংলাদেশ যথেষ্ট বিনয়ী, একটা একটা করে শিকার ধরেই এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা তাদের।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে দাপুটে জয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়লেও আসরে বাংলাদেশের প্রথম বড় পরীক্ষা মঙ্গলবার ধর্মশালায় এই ইংল্যান্ড ম্যাচ। যাদের শুরুটা আবার উল্টো, উদ্বোধনী ম্যাচে নিউ জিল্যান্ডের কাছে শোচনীয় হার।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে ইংলিশদের স্মৃতি মোটেও সুখকর নয়। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে চারবার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ড। দুই দলই জিতেছে সমান দুইটি করে ম্যাচ। তবে শেষ তিনবারের দেখায় দুটিতেই জয় টাইগারদের। ২০১১ সালে চট্টগ্রামে শফিউল ইসলামের ঝড়ো ২৪ রানে ২ উইকেটের জয় পায় স্বাগতিকরা।
তবে দেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে স্মরণীয় জয়টি হয়তো ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংলিশদের বিদায় করে কোয়ার্টার-ফাইনালে যাওয়াটিই হবে। অ্যাডিলেইডের হওয়া ম্যাচে রুবেল হোসেনের বোলিং নৈপুণ্যে বাংলাদেশ জয় পায় ১৫ রানে। সেই ম্যাচ হারার পরেই নিজেদের পুরো ওয়ানডে দলকেই পাল্টিয়ে ফেলে ইংল্যান্ড। ফলাফল, পরের আসরে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে বিশ্বকাপের সোনালী ট্রফির স্পর্শ।
এবারের আসরে দুই দলে ২০১৫ বিশ্বকাপের ওই ম্যাচের একাদশের চারজন করে খেলোয়াড় খেলছেন। বিশ্বকাপে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে শতক হাঁকানো মাহমুদইল্লাহ রিয়াদ, ৭৭ বলে ৮৯ করা মুশফিকুর রহিম, বাটলারের উইকেট নেওয়া পেসার তাসকিন আহমেদ ও দেশসেরা অল-রাউন্ডার সাকিব আল হাসান আছেন বাংলাদেশ দলে। অন্যদিকে, ইংল্যান্ড দলে আছেন জস বাটলার, জো রুট, মঈন আলী ও ক্রিস ওকস।
সোমবার ধর্মশালায় সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব আসরে বাংলাদেশ আবার হুমকি হয়ে উঠতে পারে কি না প্রশ্নের উত্তরে ইংল্যান্ড অধিনায়ক বাটলার বলেন, “না, না। কোনোমতেই নয়। বাংলাদেশের বিপক্ষে আমরা চমৎকার কিছু ম্যাচ খেলেছি। ওরা ভালো দল। আর যাদের বিপক্ষে খেলি, সব দলকে আমরা সম্মান করি। আর বিশ্বকাপে তো কঠিন প্রতিপক্ষই প্রত্যাশা করতে হবে।”
আগের দিন ইংলিশ পেসার লিয়াম লিভিংস্টোন হুমকি দিয়ে রেখেছিলেন, দ্বিগুণ কঠিন ও দ্বিগুণ আগ্রাসী হয়ে বাংলাদেশের মুখোমুখি হবে তার দল।
“এক ম্যাচ টুর্নামেন্ট নির্ধারণ করে না। আমরা যখন হারি তখন এই দল যে কাজটি সবচেয়ে ভালো করে তা হলো আগ্রাসন দ্বিগুণ করা। আমরা মঙ্গলবারই এটা করার সুযোগ পাব। … আগে যা হয়েছে তা কাটিয়ে উঠে আমরা দ্বিগুণ কঠিন হতে চাই।”
ফুরফুরে মেজাজে থাকা বাংলাদেশ দলে চিন্তার একটা জায়গা লিটন দাসের ফর্ম। মঙ্গলবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লিটন যদি সেটা ফিরে না পান - তাহলে চলতি আসরে ওপেনিংয়ে ভুগবে বাংলাদেশ দল। ম্যাচের আগের দিন স্পিন কোচ রঙ্গনা হেরাথ অবশ্য ইতিবাচক কথাই শোনালেন।
“সবারই এ রকম বাজে সময় যেতে পারে। আসল বিষয়টা হচ্ছে, আপনি কতটা ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়ালেন। আমি নিশ্চিত যে লিটন খুব ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়াবে। ব্যাটিংয়ে আমাদের ভালো জুটি দরকার। এটাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। তাই, ভালো জুটি গড়তে হবে এবং এটা করার পর আমাদের বড় স্কোর করতে হবে।”
ম্যাচ শুরু হওয়া আগে আলোচনায় আছে ধর্মশালার মাঠও। শনিবার বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচে চোটের ঝুঁকি নিয়ে ফিল্ডিং করতে হয়েছে খেলোয়াড়দের। বেশ কয়েকজন ফিল্ডার ডাইভ দেওয়ার সময় বাজেভাবে পড়েও গেছেন। ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনেও উঠে আসে এই প্রসঙ্গ।
মাঠ নিয়ে কোনো রাখঢাক না করেই বাটলার বলেন, “আমার মতে, এটা খারাপ। আপনাকে যদি সব সময় ডাইভ দিতে গিয়ে কিংবা ফিল্ডিং করতে গিয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়, তাহলে একটি দল হিসেবে আপনি যা করতে চান- এটা তার বিরুদ্ধে যায়। সুতরাং স্পষ্টতই এটা আদর্শ নয়, মাঠ কিংবা আউটফিল্ড। তবে এটাকে আমরা অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করব না, এটার সঙ্গে মানিয়ে নেব।”
অবশ্য ধর্মশালার কন্ডিশন কিছুটা ইংলিশদের মতো হওয়ায় বাংলাদেশের সামনে তাদের পুরো পেস আক্রমণকেই নাময়ে দিতে পারে তারা। তবে বাংলাদেশও পেস বোলিংয়ে ইংলিশদের চেয়ে কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই। গত বিশ্বকাপের পর থেকে উইকেট শিকারের দিক দিয়ে ইংলিশদের চেয়ে বেশ এগিয়ে আছে তাসকিন-মুস্তাফিজরা। বাংলাদেশি পেসারদের ২২৯ উইকেট শিকারের বিপরীতে ইংল্যান্ড পেসারদের শিকার ২০২টি।
চোট থেকে পুরোপুরি সেরে না ওঠায় বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে বেন স্টোকসের। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষেও মাঠে নামেননি এই তারকা অল-রাউন্ডার।
ভারতের অন্যান্য যে কোনো পিচের চেয়ে ধর্মশালার কন্ডিশন পেস বোলারদের জন্য বেশি সহায়ক। শনিবার আফগানিস্তানকে হারানো ম্যাচে বাংলাদেশ যে পিচে খেলে তা ছিল তুলনামূলক ধীরগতির। তবে মঙ্গলবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নতুন এক পিচে মাঠে নামবে বাংলাদেশ, যা ভালো ব্যাটিং সহায়ক হতে পারে। দলে একজন বাড়তি পেসার নিয়ে খেলতে পারে ইংলিশরা। অন্যদিকে বাংলাদেশ নামতে পারে একজন বাড়তি স্পিনার নিয়ে।
নিউ জিল্যান্ডের কাছে শোচনীয় পরাজয়ের পর বাংলাদেশের কাছে হারলে ইংল্যান্ডের জন্য শিরোপা ধরে রাখাটা হবে পর্বত আরোহন করার মতোই দুঃসাধ্য। আর বিশ্বকাপে ইংলিশদের আবার হারাতে পারলে শেষ চারের পথে আরেক ধাপ এগুবে সাকিবের দল।
মঙ্গলবার ধর্মশালায় বাঘে-সিংহের লড়াইটা শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সকাল ১১টায়।
মন্তব্য করুন: