বিধ্বংসী দ. আফ্রিকায় গুঁড়িয়ে গেল বাংলাদেশ
২৪ অক্টোবর ২০২৩
দক্ষিণ আফ্রিকা স্কোরবোর্ডে ৩৮২ তুলে ফেলতেই বলতে গেলে বাংলাদেশের জয়ের আশা শেষ হয়ে যায়। দেখার বিষয় ছিল লড়াইটা কেমন হয়। বোলারদের মতো তাতেও চরমভাবে ব্যর্থ একজন বাদে সব ব্যাটারই। বিশাল ব্যবধানে হেরে সেমি-ফাইনালে খেলার স্বপ্নটা তাই প্রায় মিলিয়েই গেল সাকিব আল হাসানের দলের।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের লড়াকু শতকে পরাজয়ের ব্যবধানটা কমে ভদ্রস্থ হয়নি। নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে বাংলাদেশের চতুর্থ হার ১৪৯ রানে। ফলে এখন পয়েন্ট তালিকার তলানিতে অবস্থান করছে দল।
মঙ্গলবার নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব চোট কাটিয়ে দলে ফেরায় যেটুকু স্বস্তি পেয়েছিলেন সমর্থকরা তা উড়ে যায় টসে জিতে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের ব্যাটিং সহায়ক পিচে দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায়। কুইন্টন ডি ককের বড় শতক আর শেষ দিকে হাইনরিখ ক্লাসেন আর ডেভিড মিলারের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে ৫ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশকে ৩৮৩ রানের লক্ষ্য দেয় প্রোটিয়ারা। টপ আর মিডল অর্ডার ধসে পড়ায় বাংলাদেশ ৪৬ ওভার ৪ বলে ২৩৩ রানে অল-আউট হয়ে যায়।
লাগাতার ব্যর্থ হতে থাকা ওপেনিং জুটি আগের ম্যাচে কেবল আশা জাগিয়েছিল। এই ম্যাচে আবার হতাশ করলেন লিটন দাস ও তানজিদ হাসান। ধীরে শুরু করা ওপেনিং জুটি ভাঙে ৩০ রানে। সপ্তম ওভারের প্রথম বলে মার্কো ইয়েনসেনের বাউন্সার পুল করতে গিয়ে উইকেটরক্ষক ক্লাসেনের হাতে ক্যাচ দিয়ে আগের ম্যাচে অর্ধ-শতক হাঁকানো তানজিদ ফেরেন ১২ রান করে।
পরের বলেই লেগ স্ট্যাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে নিজের উইকেট বিলিয়ে দেন নাজমুল হোসেন শান্ত। এই নিয়ে আসরের দুই ম্যাচে প্রথম বলেই কোনো রান না করেই ফিরলেন বাঁহাতি এই ব্যাটার।
পরের ওভারেই অফ-স্ট্যাম্পের বাইরের বল ড্রাইভ করতে গিয়ে ক্লাসেনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ১ রানে সাজঘরে ফেরেন সাকিব। বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি আরেক অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমের ইনিংসও। কুটসিয়ার বলে ৮ রান করে দলীয় ৪২ রানে থার্ড ম্যানে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।
দলীয় ৫৮ রানে থামে লিটনের হতাশাজনক ব্যাটিং। কাগিসো রাবাদার বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন এই ওপেনার। ৪৪ বলের ইনিংসের ২২ রানের ১৮ রানই আসে বাউন্ডারি থেকে।
মেহেদী হাসান মিরাজ ১১ রানে বিদায় নেওয়ার পর ব্যাটিংয়ের হাল ধরেন রিয়াদ। ৮১ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর লোয়ার-অর্ডার ব্যাটারদের নিয়ে ছোটো জুটি গড়তে শুরু করেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। নবম উইকেটে মুস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে ৫৬ বলে ৬৮ রানের এক জুটি গড়ে দলের সংগ্রহ ২২০ পার করেন রিয়াদ। ১১১ বলে ১১ চার ও ৪ ছক্কায় ১১১ রানে থামে তার লড়াকু ইনিংস। বিশ্বকাপে তার শতক হলো মোট তিনটি। আর বাংলাদেশের সব ব্যাটার মিলে আছে আরও তিনটি।
ডি কক আগ্রাসী হওয়ার আগে বোলিংয়ে বাংলাদেশের শুরুটা অবশ্য ভালোই করেছিলেন মিরাজ ও শরিফুল ইসলাম। প্রথম ১০ ওভারে দুই উইকেট তুলে নিয়ে প্রোটিয়াদের বেশ চাপেই রাখে বাংলাদেশ বোলাররা।
সপ্তম ওভারের প্রথম বলেই গত ম্যাচে অর্ধ-শতক হাঁকানো রিজা হেনড্রিকসের স্ট্যাম্প ভাঙেন বাঁহাতি শরিফুল। দুই ওভার পরে দারুণ ছন্দে থাকা রাসি ফন ডার ডুসেনকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলের মিরাজ।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে ডি কক ও অধিনায়ক এইডেন মারক্রাম যোগ করেন ১৩১ রান। ব্যক্তিগত ৬০ রানে মারক্রামকে সাকিব ফেরালেও বড় সংগ্রহের ভিত তৈরি হয়ে যায় প্রোটিয়াদের।
এরপরই বাংলাদেশ বোলারদের ওপর তাণ্ডব চালানো শুরু করেন ডি কক-ক্লাসেন জুটি। চতুর্থ উইকেট জুটিতে মাত্র ৮৭ বলে ১৪২ রানের জুটি গড়েন এই দুই ব্যাটার। দলীয় ৩০৯ রানে হাসান মাহমুদ দুইশ’র দিকে এগুতে থাকা ডি কককে ফেরান। ১৪০ বলে ১৫ চার ও ৭ ছক্কায় আসরের তৃতীয় শতক হাঁকিয়ে ১৭৪ রানে থামে ম্যাচসেরা ডি ককের ইনিংস।
এরপর বোলারদের ওপর ঝড় তোলেন ক্লাসেন ও মিলার। পঞ্চম উইকেট জুটিতে ২৫ বলে ২ চার ও ৭ ছক্কায় ৬৫ রান করে এবারের আসরের দ্রুততম অর্ধশত রানে জুটি গড়েন তারা।
ক্লাসেন খেলেন মাত্র ৪৯ বলে ৮ ছক্কা আর ২ চারে ৯০ রানের এক বিধ্বংসী ইনিংস। আর শেষ ১০ ওভারে প্রোটিয়ারা তোলে ১৪৪ রান। তাতেই প্রথম ইনিংস শেষে মিলিয়ে যায় বাংলাদেশের আশা।
হাসান ২ উইকেট নিলেও ৬ ওভারে দেন ৬৭ রান।
[বিস্তারিত তথ্য পরবর্তীতে সংযোজন করা হয়েছে]
মন্তব্য করুন: