রান-বন্যার রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে নিউ জিল্যান্ডকে হারাল অস্ট্রেলিয়া

২৮ অক্টোবর ২০২৩

রান-বন্যার রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে নিউ জিল্যান্ডকে হারাল অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়ার গড়া রানের পাহাড়ের চূড়ায় প্রায় পৌঁছে গিয়েছিল নিউ জিল্যান্ড। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয়ের খুব কাছে গিয়েও থামতে হলো কিউইদের। নিজেদের ষষ্ঠ ম্যাচে চতুর্থ জয়ে সেমি-ফাইনালের পথে অনেকটাই এগিয়ে গেল পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।

শনিবার ধর্মশালায় টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ডেভিড ওয়ার্নার ও ট্র্যাভিস হেডের বিধ্বংসী উদ্বোধনী জুটিতে কিউইদের ৩৮৯ রানের বিশাল লক্ষ্য দেয় অস্ট্রেলিয়া। রাচিন রবীন্দ্রর শতকের পর জিমি নিশামের বিস্ফোরক ইনিংসে শেষ বল পর্যন্ত টিকে ছিল নিউ জিল্যান্ডের আশা। শেষ পর্যন্ত জয় থেকে মাত্র ৬ রান দূরে ৩৮৩ রানে থামে নিউ জিল্যান্ডের ইনিংস। ৫ রানের জয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচে অজিরা।

এর আগে বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে কিউইদের দারুন শুরু এনে দেন ডেভন কনওয়ে ও উইল ইয়ং। অষ্টম ওভারের দ্বিতীয় বলে কনওয়েকে ফিরিয়ে ৬১ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন জশ হ্যাজেলউড। ব্যক্তিগত ৩২ রানে আরেক ওপেনার ইয়ংকে ফেরান ডানহাতি এই পেসার।

এরপরই ড্যারিল মিচেলকে নিয়ে দলের হাল ধরেন রবীন্দ্র। ৫৪ রানে করা মিচেল ফিরলে অধিনায়ক টম ল্যাথামকে নিয়ে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন রবীন্দ্র। তবে ল্যাথাম বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি। বল হাতে অস্ট্রেলিয়াকে আটকে রাখা গ্লেন ফিলিপসও ফেরেন দ্রুতই।

রবীন্দ্রের ব্যাটে রান তাড়াতেই অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সমান তালে পাল্লা দিচ্ছিল নিউ জিল্যান্ড। ৪০ ওভার পর্যন্ত অজিদের সমান ৫ উইকেটে ২৯২ রান করে কিউইরা।

দলীয় ২৯৩ রানে ৮৯ বলে ৯ চার ও ৫ ছক্কায় ১১৬ রান করে লং-অফে মারনাস লাবুশেনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় শতক পাওয়া রবীন্দ্র। এরপর মিচেল স্যান্টনারকে নিয়ে দলকে লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যেতে থাকেন নিশাম।

জয় থেকে মাত্র ছয় রান দূরে থামে নিশামের ৫৮ রানের ইনিংসশেষ ওভারে জয়ের জন্য কিউইদের প্রয়োজন ছিল ১৯ রান আর অজিদের দুই উইকেট। প্রথম বলে এক রান নিয়ে নিশামকে স্ট্রাইকে আনেন ট্রেন্ট বোল্ট। পরেই বলে নিশামকে লেগ-স্ট্যাম্প বরাবর ইয়র্কার দিতে গেলে তা ওয়াইড হয়ে যায়। বলটি উইকেটরক্ষক ধরতে ব্যর্থ হলে তা বাউন্ডারি হয়ে যায়। পরের তিন বলে নিশাম তিনটি ডাবলস নিলে সমীকরণ দাঁড়ায় শেষ দুই বলে ৭ রানের। পঞ্চম বলেও দুই রান নেওয়ার চেষ্টা করেন নিশাম। কিন্তু ডিপ মিড-উইকেট থেকে লাবুশেনের দারুণ এক থ্রোতে এবং উইকেটরক্ষক জস ইংলিসের অসাধারণ দক্ষতায় রান-আউটে শেষ হয় বাঁহাতি এই ব্যাটারের ৩৯ বলে ৫৮ রানের বিস্ফোরক ইনিংস। শেষ বলে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ছক্কা আর মারতে পারেননি লকি ফার্গুসন।

দিনের শুরুতে অস্ট্রেলিয়া যেভাবে নিজেদের শুরুটা করেছিল তাতে দলীয় সংগ্রহ আরও বড় হতে পারত। কিন্তু মাঝের ওভারগুলোতে কিউই স্পিনারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে চারশ রানের মুখ দেখেনি তারা। ২৪ ওভারে ১ উইকেটে ২০০ রানে থাকা অস্ট্রেলিয়া ১৮৮ রান তুলতে বাকি ৯ উইকেট হারায়।

প্রথম ১০ ওভারেই দলের খাতায় ওয়ার্নার ও হেড যোগ করেন ১১৮ রান। আগের দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করা ওয়ার্নার অর্ধ-শতক তুলে নেন মাত্র ২৮ বলে।

দলের প্রথম সারির সব বোলার যখন এই দুই বাঁহাতি ব্যাটারের হাতে বেদম মার খাচ্ছিল তখন কিউইদের ত্রাণকর্তা হয়ে আসেন গ্লেন ফিলিপস। ৬৫ বলে ৮১ রান করা ওয়ার্নারকে ফিরিয়ে দলকে স্বস্তি দেন ডানহাতি এই স্পিনার।

নিজের প্রথম বিশ্বকাপ ম্যাচ খেলতে নেমেই ৫৯ বলে শতক তুলে নেন ম্যাচসেরা হেড। ৬৭ বলে ১০ চার ও ৭ ছক্কায় ১০৯ রান করা হেডেরও মিডল স্ট্যাম্প ভাঙেন ফিলিপস।

বিধ্বংসী উদ্বোধনী জুটিতে ১৭৫ রান যোগ করেন ওয়ার্নার ও হেডপ্রথম ১৯ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে ১৭৫ রান করা অস্ট্রেলিয়া পরের ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে তুলতে পারে ১০৪ রান।

এদিন ফিল্ডিংয়ে বেশ নিষ্প্রভ ছিল নিউ জিল্যান্ড। ত্রাস সৃষ্টি করা হেডেরই দুটি ক্যাচ ফেলেন কিউই ফিল্ডাররা। পুরো ম্যাচে ৫টি ক্যাচ ছাড়ার পাশাপাশি একটি রান-আউটের সুযোগ হাত ছাড়া করে তারা।

শেষ দিকে আগের ম্যাচে রেকর্ড সেঞ্চুরি হাঁকানো গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ২৪ বলে ৪১, উইকেটরক্ষক জশ ইংলিসের ২৮ বলে ৩৮ এবং অধিনায়ক কামিন্সের ১৪ বলে ৩৭ রানের ঝোড়ো তিন ইনিংসে ৪৯ ওভার ২ বলে ৩৮৮ রানে থামে ইনিংস। ২০টি ছক্কা হাঁকিয়ে ওয়ানডেতে এক ইনিংসে নিজেদের সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড গড়েন অজি ব্যাটাররা। আর প্রথম দল হিসেবে টানা তিন ওয়ানডেতে ৩৫০ এর বেশি রান করার রেকর্ড গড়ে প্যাট কামিন্সের দল।

তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট শিকার করা ফিলিপস রান বন্যার ইনিংসেও ১০ ওভারে মাত্র ৩৭ রান দেন।

ট্রেন্ট বোল্টের ৩ উইকেটের সবকটিই পান শেষ ওভারে। মিচেল স্যান্টনারের নেন ২ উইকেট।

[বিস্তারিত তথ্য পরবর্তীতে সংযোজন করা হয়েছে]

মন্তব্য করুন: