ব্যাটে-বলে শ্রীলঙ্কাকে গুঁড়িয়ে সেমিতে ভারত

২ নভেম্বর ২০২৩

ব্যাটে-বলে শ্রীলঙ্কাকে গুঁড়িয়ে সেমিতে ভারত

ব্যাটে-বলে একটা দল কতটা দাপট দেখাতে পারে বোঝাল ভারত। কোহলি-গিল-আইয়ারের ব্যাটে চার-ছক্কার সময় জবাব ছিল না বোলারদের। সিরাজ-শামির সুইং আর তোপেরও জবাব খুঁজে পায়নি ব্যাটাররা। পাহাড়সম লক্ষ্য দেওয়ার পর আগুন ঝরানো বোলিংয়ে তাই ৩০২ রানে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সবার আগে সেমি-ফাইনালে চলে গেল ভারত।

মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে শুবমান গিল, বিরাট কোহলি ও শ্রেয়স আইয়ারের কেবল শতক করাটাই বাকি ছিল।  তাদের দাপুটে ব্যাটিংয়ে লঙ্কানদের ৩৫৮ রানের বিশাল লক্ষ্য দেয় ভারত। লক্ষ্য তাড়ায় ভারতের পেসত্রয়ী বিশেষ করে মোহাম্মদ শামির সামনে দাঁড়াতেই পারেনি কেউই। রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফেরেন ৫ ব্যাটার। ১৯ ওভার ৫ বলে মাত্র ৫৫ রানে অল-আউট হয় ১৯৯৬ সালের চ্যাম্পিয়নরা। বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্বিতীয় দল হিসেবে তিনশ রানের বেশি ব্যবধানে হারল তারা।

রান তাড়া করতে নামার প্রথম বলেই পাতুম নিসাঙ্কাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন যশপ্রীত বুমরাহ। পরের ওভারের প্রথম বলেই আরেক ওপেনার দিমুথ করুণারত্নেকেও একইভাবে সাজঘরে ফেরান মোহাম্মদ সিরাজ। ওভারের পঞ্চম বলে তৃতীয় স্লিপে থাকা আইয়ারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন দারুণ ছন্দে থাকা সাদিরা সামারাবিক্রমা। এরপর ঘুরে দাঁড়ানোর আর কোনো সুযোগই পায়নি শ্রীলঙ্কা।

নিজের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে অধিনায়ক কুশল মেন্ডিসের অফ-স্টাম্প ভাঙেন সিরাজ। এরপরই দৃশ্যপটে আগমন ঘটে শামির। প্রথম ওভারেই তুলে নেন দুই লঙ্কান ব্যাটারকে। শুরুটা করেন চারিত আসালাঙ্কাকে দিয়ে। পরের বলেই কট-বিহাইন্ডে দাশুন হেমন্তকে ফেরান ডানহাতি এই পেসার। এই নিয়ে আসরে টানা তিন ম্যাচে হ্যাটট্রিকের করার সম্ভাবনা জাগান তিনি।

শামির এই ইন-সুইংয়ের কোনো জবাব ছিল না ম্যাথিউসের দারুণ এক ইন-সুইংয়ে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের লেগ-স্ট্যাম্প উপড়ে দেন শামি। কাসুন রাজিতাকে ফিরিয়ে ওয়ানডেতে ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ চারবার ৫ উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়েন ডানহাতি এই পেসার। যার তিনটিই নিয়েছেন বিশ্বকাপের মঞ্চে। ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ১৮ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরাও হয়েছেন তিনি।

মাত্র ১৪ ম্যাচে ৪৫ উইকেট নিয়ে ভারতের হয়ে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক এখন শামি।

দিনের শুরুতে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় বলেই রোহিত শর্মার অফ-স্টাম্প উড়িয়ে দেন দিলশান মাদুশঙ্কা। তবে গিল ও কোহলি রানের গতি কমতে দেননি। ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলে দুশমন্তা চামিরা কোহলির ফিরতি ক্যাচ তালুবন্দী করতে ব্যর্থ হলে তাকে আর থামানো যায়নি।

আর কোনো সুযোগ না দিয়ে সমান তালে রান তুলতে থাকেন গিল ও কোহলি। একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে তুলে নেন নিজেদের ফিফটি। পাল্লা দিয়ে এগুচ্ছিলেন নিজেদের শতকের দিকেও। কিন্তু ৩০তম ওভারের শেষ বলে মাদুশঙ্কার ধীরগতির বাউন্সার বুঝতে না পেরে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দিয়ে সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ৮ রান দূরে থেকে সাজঘরে ফেরেন গিল। ভাঙে দ্বিতীয় উইকেটে ১৮৯ রানের জুটি।

দ্বিতীয় উইকেট জুটিতেই ভারতের রান পাহাড়ের ভিত গড়ে দেন কোহলি-গিলনিজের পরের ওভারে আবার আঘাত হানেন মাদুশঙ্কা। এবার বাঁহাতি এই পেসারের কাটারে শর্ট-কভারে থাকা পাতুম নিসাঙ্কার হাতে সহজ ক্যাচ দেন দারুণ খেলতে থাকা কোহলি। ৮৮ রানে তারকা এই ব্যাটার সাজঘরের পথ দেখলে দীর্ঘ হয় তার শচীন টেন্ডুলকারের রেকর্ড ৪৯ ওয়ানডে শতকের রেকর্ড ছোঁয়ার প্রতীক্ষা।

এরপর লঙ্কান বোলারদের ওপর আক্রমণ চালানো শুরু করেন আইয়ার। পঞ্চম উইকেটে লোকেশ রাহুলকে নিয়ে গড়েন ৬০ রানের জুটি। ২১ রান করে রাহুল ফিরলে সূর্যকুমার যাদব ও রবীন্দ্র জাদেজাকে নিয়ে দলের সংগ্রহ বাড়াতে থাকেন আইয়ার। ৬ ছক্কা ও ৩ চারে ৫৬ বলে তার এই ব্যাটারের ৮২ রানের তাণ্ডব থামান মাদুশঙ্কা।

শেষ পর্যন্ত ২৪ বলে জাদেজার ৩৫ রানের ইনিংসে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩৫৭ রান তোলে স্বাগতিকরা। ১০ ওভারে ৮০ রান দিয়ে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ৫ উইকেট নেন মাদুশঙ্কা।

[বিস্তারিত তথ্য পরবর্তীতে সংযোজন করা হয়েছে]

মন্তব্য করুন: