নাটকীয় ম্যাচে অবশেষে বাংলাদেশের জয়
৬ নভেম্বর ২০২৩
টানা হারের বৃত্তে থাকার পর অবশেষে বিশ্বকাপে কাপে আরেকটি জয়ের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে তা সহজে ধরা দেয়নি। ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে প্রতিপক্ষের ব্যাটারকে ইতিহাস গড়ে ‘টাইমড আউট’ করেছেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ব্যাট করতে নেমে নিজেও ‘যুদ্ধ’ করেছেন নাজমুল হোসেন শান্তকে সঙ্গে নিয়ে। এ জুটির সৌজন্যে খুব কাছে আসা জয়টাকে আবার কঠিন বানানোর পর শ্রীলঙ্কাকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে টাইগাররা।
রানবন্যার মাঠে চারিত আসালাঙ্কার শতকের পরেও বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ৩ বাকি থাকতেই লঙ্কানদের ২৭৯ রানে অল-আউট করে বাংলাদেশ। জবাবে ৫৩ বল হাতে রেখেই টানা ছয় হারের পর আসরে নিজেদের দ্বিতীয় জয় তুলে নেয় সাকিবের দল।
তবে ম্যাচে বাংলাদেশের জয় ছাপিয়ে আলোচনায় থাকবে সাকিবের কথা অনুযায়ী ‘যুদ্ধে জিততে’ লঙ্কান অল-রাউন্ডার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট প্রথম ‘টাইমড আউট’ করানোর ঘটনা। ওই ঘটনায় তেতে ছিলেন দুই দলের ক্রিকেটাররা। বল হাতে ম্যাথিউসে আর ব্যাট হাতে সাকিবের লড়াই ম্যাচটিকে করেছে রোমাঞ্চকর। ম্যাচের পর নাটকের শেষ অঙ্কে আবার হাত মেলাননি দুই দলের ক্রিকেটাররা।
সোমবার দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে এদিনও ব্যর্থ হয় ওপেনিং জুটি। তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে দিলশান মাদুশঙ্কার বল আকাশে তুলে পাতুম নিসাঙ্কার হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন তানজিদ হাসান তামিম। অপরপ্রান্তে থাকা লিটন দারুণ শুরু করলেও বেশিদূর এগুতে পারেননি। মাদুশঙ্কার নিখুঁত ইয়র্কারে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন ২৩ রান করে।
এদিন চারে ব্যাট করতে নেমে শান্তকে নিয়ে দলের হাল ধরেন ম্যাচসেরা সাকিব। তবে ব্যক্তিগত ৭ রানে থাকা সাকিবকে শুরুতেই ফেরাতে পারত লঙ্কানরা। কিন্তু আসালাঙ্কা সহজ ক্যাচ ফেলে দেওয়ায় তা আর হয়নি। দারুণ সব শটে এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম শতরানের জুটি গড়েন এই দুই বাঁহাতি ব্যাটার।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে ফিফটির পর প্রথমবারের মতো দুই অঙ্কের রানের ছোঁয়া পাওয়া শান্ত তুলে নেন আসরে নিজের দ্বিতীয় অর্ধ-শতক। সাকিবও তুলে নেন আসরে নিজের প্রথম ফিফটি। পাল্লা দিয়ে এগুচ্ছিলেন নিজেদের শতকের দিকেও।
তবে ৩২তম ওভারে দৃশ্যপট পাল্টে দেন তেতে থাকা ম্যাথিউস। ডানহাতি এই অল-রাউন্ডারের স্লোয়ার ঠিক মতো বুঝতে না পেরে আগেই ব্যাট চালিয়ে দেন সাকিব। তবে এবার বল তালুবন্দী করতে কোনো ভুল করেননি আসালাঙ্কা। ৬৫ বলে ১২ চার ও ২ ছক্কার ৮২ রানের দারুণ ইনিংসে সাকিব ফিরলে ভাঙে ১৬৯ রানের জুটি। পরের ওভারেই ৯০ রানে থাকা শান্তকেও ফেরান ম্যাথিউস।
এই দুই ব্যাটার ফিরলে দলের হাল ধরেন দুই অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম। রান-রেট বাড়ানোর চেষ্টায় ১০ রান করে মুশফিক, ২২ রান করে রিয়াদ এবং ৩ রানে মেহেদী হাসান মিরাজকে সাজঘরে ফেরান লঙ্কানরা। তবে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন তাওহিদ হৃদয়।
দিনের শুরুতে টসে হেরে ব্যাট করে নামা লঙ্কানদের প্রথম আঘাতটা দেন শরিফুল ইসলাম। ওভারের শেষ বলে মুশফিকের উড়ন্ত এক ক্যাচে কুশল পেরেরাকে সাজঘরে ফেরান বাঁহাতি এই পেসার।
দলীয় ৬৬ রানে ব্যাট হাতে তেমন সুবিধা করতে না পারা লঙ্কান অধিনায়ক কুশল মেন্ডিস সাকিবকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং-অনে থাকা শরিফুলের হাতে ধরা পড়েন।
এক ওভার পরেই ইনসাইড এজে ৪১ রান করা ওপেনার পাতুম নিসাঙ্কার মিডল-স্ট্যাম্প ভাঙেন তানজিম হাসান সাকিব। চতুর্থ উইকেটে আসালাঙ্কা ও সাদিরা সামারাবিক্রমার ৬৩রানের জুটি ভাঙেন অধিনায়ক সাকিব। সাকিবকে চার মারার পরের বলে আবার বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে ডিপ স্কোয়ার-লেগে রিয়াদের হাতে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথ দেখেন সামারাবিক্রমা।
বৈরিতার শুরুটা হয় লঙ্কান ইনিংসের চতুর্থ উইকেটের পর আসেন ম্যাথিউস ক্রিজে আসলে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বল মোকাবেলায় প্রস্তুত হতে না পারায় বাংলাদেশের আবেদনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৪৬ বছর ইতিহাসের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ‘টাইমড-আউট’হন ম্যাথিউস।
ম্যাথিউসের বিদায়ে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে বাংলাদেশের ওপর চড়াও হয়ে খেলতে থাকেন আসালাঙ্কা ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। মেহেদী হাসান মিরাজের বলে মুশফিকের বুদ্ধিদীপ্ত স্ট্যাম্পিংয়ে ৩৪ রান করা ডি সিলভা ফিরলে ভাঙে ৭৮ রানের জুটি।
এক প্রান্ত আগলে রেখে লোয়ার-অর্ডার ব্যাটরদের নিয়ে রানের চাকা সচল রেখে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় শতক তুলে নেন আসালাঙ্কা। ২৭৮ রানে তানজিমকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বাউন্ডারির কাছে লিটনের তালুবন্দী হয়ে সাজঘরে ফেরেন ১০৮ রান করা আসালঙ্কা।
শেষ ১০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ৫৬ রানের বেশি তুলতে পারেনি লঙ্কানরা। ৩ বল বাকি থাকতেই গুটিয়ে যায় তাদের ইনিংস।
বিশ্বকাপে অভিষেক ম্যাচে খরুচে বোলিং করলেও ৩ উইকেট নেন তানজিম। শরিফুল ও সাকিবের শিকার দুটি করে উইকেট।
[বিস্তারিত তথ্য পরবর্তীতে সংযোজন করা হয়েছে]
মন্তব্য করুন: