ম্যাক্সওয়েল এবং ওয়ানডে ইতিহাসের সেরা ইনিংসগুলো

৮ নভেম্বর ২০২৩

ম্যাক্সওয়েল এবং ওয়ানডে ইতিহাসের সেরা ইনিংসগুলো

আফগানিস্তানের বিপক্ষে অবিশ্বাস্য এক ইনিংস খেলে শুধু অস্ট্রেলিয়ার হার এড়াননি সঙ্গে সেমি-ফাইনালে জায়গা নিশ্চিত করেছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ৯১ রানে সাত উইকেট পড়ার পর প্যাট কামিন্সের সঙ্গে ২০২ রানের জুটি গড়েন ম্যাক্সওয়েল। যেখানে কামিন্সের অবদান মাত্র ১২ রান।

চোট নিয়ে খেলে ২১টি চার ও ১০টি ছক্কায় ১২৮ বলে ২০১ রান করে ম্যাচ জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন ম্যাক্সওয়েল। অজি অল-রাউন্ডারের ইনিংসটি ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে সেরা কিনা তা নিয়ে চলছে আলোচনা।

“কোনো সন্দেহ ছাড়াই এটাই ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে সেরা ইনিংস।” এই সিদ্ধান্তে অনড় ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন।

ভন বিবিসিকে বলেন, “আপনি সম্ভবত মানুষদের বলতে যাচ্ছেন এটা সর্বকালের সেরা ইনিংস।”

“আমি কখনও এমন কিছু দেখিনি। কোনোভাবেই অস্ট্রেলিয়ার এই ম্যাচ জেতার কথা নয়।”

২৯২ রান তাড়া করতে নেমে ৪৯ রানে চার উইকেট চলে যাওযার পর ম্যাক্সওয়েল ক্রিজে আসেন এবং আজমতউল্লাহ ওমরজাইর হ্যাটট্রিক বল মোকাবেলা করেন। ২৪ ও ৩৩ রানে দুইবার জীবন পান ম্যাক্সওয়েল। ২৭ রানে এলবিডব্লিইউর আবেদন হলে আম্পায়ার আউট ঘোষণা করেন। কিন্তু রিভিউ নিলে দেখা যায় বল স্ট্যাম্পের ওপর দিয়ে চলে যায়। এই যাত্রায়ও বেঁচে যান ম্যাক্সওয়েল।

মুজিব দ্বিতীয়বার ক্যাচ ছাড়ার পর না আফগানিস্তানের বোলিং, না পিঠে ব্যথা ও ক্র্যাম্প সমস্যায় ব্যথার যন্ত্রণা, কোনো কিছুই ম্যাক্সওয়েলকে থামাতে পারেনি।

অস্ট্রেলিয়ার জেতার জন্য ১০০ রান বাকি তখন দৌড়ে রান নিতে সংগ্রাম করতে হয়েছে তাকে। যখন ৭৫ রান প্রয়োজন শট খেলার জন্য পা নাড়াতে কষ্ট হচ্ছিল ম্যাক্সওয়েলের।

ওয়ানডে ক্রিকেটে রান তাড়া করতে নেমে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে দ্বিশতক হাঁকানোর কীর্তি গড়েন ম্যাক্সওয়েল। ওপেনার নন এমন ক্রিকেটার হিসেবেও প্রথম ম্যাক্সওয়েল।

টিএমএস ধারাভাষ্যকার জেফ লেমন বলেন, “আজ রাতে ম্যাক্সওয়েল অলৌকিক ঘটনা ঘটিয়েছেন।”

২০২ রানের রেকর্ড জুটিতে ১২ রান করা অধিনায়ক কামিন্স ম্যাক্সওয়েলের ইনিংস নিয়ে বলেন, “এখন পর্যন্ত এটি সেরা ওয়ানডে ইনিংস।”

ম্যাক্সওয়েলর ইনিংসটি সেরা কিনা সেটা সময়ই বলবে। দেখে নেওয়া যাক এটি ছাড়াও ওয়ানডে ক্রিকেটে আর কোন ইনিংসগুলো সর্বকালের সেরা ইনিংসগুলোর মধ্যে আছে।

কপিল দেব (ভারত) - ১৭৫* বনাম জিম্বাবুয়ে, ১৯৮৩ বিশ্বকাপ

৯ রানে চার উইকেট পড়ার পর ক্রিজে আসেন কপিল দেব। ১৭ রানের মধ্যে পাঁচ উইকেট হারায় ভারত। ১৬টি চার এবং ছয়টি ছক্কায় ১৩৮ বলে অধিনায়ক কপিলের অপরাজিত ১৭৫ রানের ইনিংসের ওপর ভর করে আট উইকেট হারিয়ে ২৬৬ রান করে ভারত।

ম্যাক্সওয়েলের এই কীর্তি গড়ার আগ পর্যন্ত কপিলের ওই ইনিংসই ছিল ওয়ানডেতে ছয় বা তার নীচে ব্যাটিংয়ে নেমে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। ঐ সময়ে ওয়ানডেতে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটিও ছিল কপিলের এই ইনিংস।

ভিভ রিচার্ডস (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)- ১৮৯* বনাম ইংল্যান্ড, ১৯৮৪

ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ক্রিজের একপ্রান্ত থেকে ব্যাটারদের আসা যাওয়ার মিছিল দেখছিলেন ভিভ রিচার্ডস। রিচার্ডসের রান যখন ৯৬ তখন ক্যারিবীয়দের সংগ্রহ নয় উইকেট হারিয়ে ১৬৬ রান। শেষ ব্যাটার মাইকেল হোলডিংকে নিয়ে স্কোর বোর্ডে আরও ১০৬ রান যোগ করেন এই ব্যাটার।

২১টি চার ও পাঁচ ছক্কায় ১৭০ বলে ১৮৯ রানে অপরাজিত থাকেন রিচার্ডস। ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত এটি ছিল ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। জবাব দিতে নেমে ১৬৮ রানে অল-আউট হয ইংল্যান্ড এবং ৪৫ রান দিয়ে দুই উইকেট নেন রিচার্ডস।

অরবিন্দ ডি সিলভা (শ্রীলঙ্কা)- ১০৭* বনাম অস্ট্রেলিয়া, ১৯৯৬ বিশ্বকাপ ফাইনাল

১৯৯৬ বিশ্বকাপ ফাইনালে লাহোরে অস্ট্রেলিয়ার দেয়া ২৪২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ২৩ রানে দুই উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। গ্লেন ম্যাকগ্রা ও শেন ওয়ার্নদের নিয়ে গড়া বোলিং আক্রমণ ধীরস্থিরভাবে মোকাবেলা করে শ্রীলঙ্কাকে বিশ্বকাপ জেতান ডি সিলভা। বিশ্বকাপ ফাইনালে রান তাড়া করতে নেমে শতক হাঁকানো একমাত্র ব্যাটার ডি সিলভা।

হার্শেল গিবস (দক্ষিণ আফ্রিকা)- ১৭৫ বনাম অস্ট্রেলিয়া, ২০০৬

সর্বকালের অন্যতম সেরা ওয়ানডেতে জোহান্সবার্গে পঞ্চম এবং সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৪৩৫ রানের টার্গেট দেয় অস্ট্রেলিয়া।

গিবসের ১১১ বলে ১৭৫ রানের ইনিংসের ওপর ভর করে এক উইকেটের রোমাঞ্চকর এক জয় পায় প্রোটিয়ারা। এটি ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে সফল রান তাড়া করার রেকর্ড।

অ্যাডাম গিলক্রিস্ট (অস্ট্রেলিয়া) – ১৪৯ বনাম শ্রীলঙ্কা, ২০০৭ বিশ্বকাপ ফাইনাল

ব্রিজটাউনে ২০০৭ বিশ্বকাপ ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৩টি চার এবং আট ছক্কায় ১০৪ বলে ১৪৯ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। গিলক্রিস্টের এই ইনিংসেই ম্যাচ লঙ্কানদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

বিশ্বকাপ ফাইনালে এটি সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের রেকর্ড।

কেভিন ও’ব্রায়ান (আয়ারল্যান্ড)- ১১৩ বনাম ইংল্যান্ড, ২০১১ বিশ্বকাপ

বেঙ্গলুরুতে ইংল্যান্ডের দেয়া ৩২৮ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে ১০৬ রানে চার উইকেট হারায় আয়ারল্যান্ড। ক্রিজে এসেই ঝড় তুলে ৫০ বলে সে সময়ের বিশ্বকাপের দ্রুততম শতক হাকান ও’ব্রায়ান। ১৩টি চার এবং ছয় ছক্কায় ৬৩ বলে ১১৩ রান করেন এই ব্যাটার। ও’ব্রায়ানের দুর্দান্ত ইনিংসের ওপর ভর করে সে সময়ে ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড গড়ে আয়ারল্যান্ড।

রিকি পন্টিং (অস্ট্রেলিয়া)- ১৪০* বনাম ভারত, ২০০৩ বিশ্বকাপ

২০০৩ বিশ্বকাপ ফাইনালে টসে জিতে অস্ট্রেলিয়াকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় ভারত। এই সিদ্ধান্তকে ভুল প্রমাণ করে ৫০ ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে ৩৫৯ রান করে অজিরা। এতে ব্যাট হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন অধিনায়ক পন্টিং। চারটি চার এবং আট ছক্কায় ১২১ বলে ১৪০ রানের অপরাজিত এক ইনিংস খেলেন পন্টিং। সে সময় বিশ্বকাপ ফাইনালে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস ছিল এটি।

রোহিত শর্মা (ভারত)- ২৬৪ বনাম শ্রীলঙ্কা, ২০১৪

২০১৪ সালে কলকাতায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে রোহিত শর্মার ২৬৪ রানের ইনিংসটি এখন পর্যন্ত ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের রেকর্ড। ১০০ বলে শতক হাঁকানোর পর আরও আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে থাকেন রোহিত। ৩৩টি বাউন্ডারি এবং নয় ছক্কায় ১৭৩ বলে ২৬৮ রানের বিধ্বংসী ইনিংসটি খেলেন এই ওপেনার। এটি ছিল ওয়ানডেতে রোহিতের দ্বিতীয় দ্বিশতক।

তিনটি দ্বিশতক হাঁকানো একমাত্র ক্রিকেটার হলেন রোহিত।

মার্টিন গাপটিল (নিউ জিল্যান্ড)- ২৩৭* বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ২০১৫ বিশ্বকাপ

২০১৫ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২৩৭ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস খেলেন গাপটিল, যা ওয়ানডে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ এবং ওয়ানডে ফরম্যাটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের রেকর্ড। ২৩৭ রানের ইনিংস খেলার পথে ২৪টি চার এবং ১১টি ছক্কা হাঁকান কিউই এই ওপেনার।

এবি ডি ভিলিয়ার্স (দক্ষিণ আফ্রিকা)- ১৪৯ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ২০১৫

জোহানেসবার্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩১ বলে শতক হাঁকিয়ে ওয়ানডেতে দ্রুততম শতকের রেকর্ড গড়েন ভিলিয়ার্স।

মাঠের চারদিকে চার ছক্কার ফুলঝুড়ি ফুটিয়ে ৪৪ বলে ১৪৯ রান করেন এই প্রোটিয়া ব্যাটার। এই ম্যাচে এক ইনিংসে যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৬টি ছক্কা মারার রেকর্ড গড়েন ভিলিয়ার্স।

ক্রিস গেইল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)- ২১৫ বনাম জিম্বাবুয়ে, ২০১৫ বিশ্বকাপ

বিশ্বকাপে প্রথম ব্যাটার হিসেবে দ্বিশতক হাঁকানোর রেকর্ড গড়েন ক্রিস গেইল। ইনিংসের শেষ বলে আউট হওয়ার আগে ১০টি চার এবং ১৬টি ছক্কায় ১৪৭ বলে ২১৫ রান করেন গেইল।

মন্তব্য করুন: