ব্যাটিংয়ে ব্যর্থ দলে ব্যতিক্রম মাহমুদউল্লাহ
১১ নভেম্বর ২০২৩
এবারের বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে রানের ফুলঝুরি ফোটাচ্ছেন প্রায় সব দেশের ব্যাটাররা। ব্যাতিক্রম শুধু বাংলাদেশ। টানা ব্যাটিং ব্যর্থতায় মাত্র দুই জয়ে এবারের আসর শেষ করেছে সাকিব আল হাসানের দল। নেদারল্যান্ডসের কাছে হারের পর অধিনায়ক সাকিব তো বলেই দিয়েছেন এবারের বিশ্বকাপটাই বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে আসর। আর এই বাজে আসরে দলের একমাত্র ব্যাটার হিসেবে আলো ছড়িয়েছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাট।
এবারের আসরে একমাত্র বাংলাদেশী ব্যাটার হিসেবে তিনশ’রানের বেশি করেছেন রিয়াদ। ৮ ম্যাচ খেলে ৭ ইনিংসে করেছেন ৩২৮ রান। আসরে বাংলাদেশের একমাত্র শতকটিও আসে তার ব্যাট থেকেই। দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে শোচনীয় পরাজয়ের ম্যাচে ১১১ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন ডানহাতি এই ব্যাটার। অথচ বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাওয়া নিয়েই শঙ্কা ছিল অভিজ্ঞ রিয়াদের।
গড়ের দিক দিয়েও সবার চেয়ে ঢের এগিয়ে রিয়াদ, রান তুলেছেন ৫৪ দশমিক ৬৬ গড়ে। তার পরের অবস্থানে থাকা তাওহিদ হৃদয়ের গড় ৩২ দশমিক ৮০।
বিশ্বকাপে অন্য দেশের ব্যাটাররা যেখানে দ্রুতগতিতে রান তোলায় ব্যস্ত, সেখানেও পিছিয়ে বাংলাদেশ ব্যাটাররা। দলের স্বীকৃত ব্যাটারদের মধ্যে ৯১ দশমিক ৬২ স্ট্রাইক-রেট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন রিয়াদ। হাঁকিয়েছেন সর্বোচ্চ ১৪টি ছক্কাও। ৯৫ দশমিক ৩৯ স্ট্রাইক-রেট নিয়ে শীর্ষে আছেন ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম।
ব্যাটিংয়ে সবচেয়ে বেশি হতাশ করেছে নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাট। এ বছর দলের হয়ে সর্বোচ্চ রান-সংগ্রাহক হয়ে বিশ্বকাপে যান শান্ত। তবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে অর্ধ-শতক ছাড়া পুরো আসরে ব্যাট হাতে খুঁজে পাওয়া যায়নি বাঁহাতি এই ব্যাটারকে। পরের ৬ ম্যাচে ব্যাট হাতে দুই অঙ্কেরই মুখ দেখেননি তিনি। কোনো রান না করে ফেরেন দুই ম্যাচে। শেষ দুই ম্যাচে ৯০ ও ৪৫ রানের দুটি ইনিংস খেললেও তা এসেছে বড্ড দেরিতে। বিশ্বকাপের সব ম্যাচ খেলে ২৭ দশমিক ৭৫ গড়ে রান করেন ২২২।
আগের বিশ্বকাপে অসাধারণ ফর্মে থাকা সাকিবকে যেন এবারের আসরে ব্যাট হাতে খুঁজেই পাওয়া যায়নি। লঙ্কানদের বিপক্ষে ম্যাচজয়ী ৬৫ বলে ৮২ রানের ইনিংস ছাড়া বলার মতো তেমন কিছু করে দেখাতে পারেননি। ৭ ম্যাচে ২৬ দশমিক ৫৭ গড়ে রান করেছেন ১৮৬। যেখানে গত আসরে ৮ ম্যাচে দুই সেঞ্চুরিসহ ৬০৬ রান করেছিলেন।
ব্যক্তিগত ব্যাটিং পারফরমেন্স মন্দের ভালো হলেও দলীয় পারফরমেন্সের অবস্থা আরও করুণ। জয় কেবল আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ৪ ম্যাচে দল অল-আউট হয়েছে ৫০ ওভারের আগেই। যেখানে এখন পর্যন্ত এই বিশ্বকাপে চারশর বেশি স্কোর হয়েছে দুই ম্যাচে, দুটি ম্যাচে দলীয় সংগ্রহ হয়েছে ৩৯৯ রানের এবং তিনশ’র ওপর স্কোর হয়েছে ২০বার, সেখানে নিজেদের শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আসরে প্রথমবারের মতো তিনশ রান পার করে বাংলাদেশ।
শুধু কি তাই! আইসিসির সহযোগী দেশ নেদারল্যান্ডসের কাছে অল-আউট হয়েছে মাত্র ১৪২ রানে।
অন্যদিকে, পুরো আসরজুড়েই ব্যর্থ ছিল দলের টপ-অর্ডার। বিশেষ করে ওপেনিংয়ের কথা না বললেই তো নয়। উদ্বোধনী জুটি থেকে গড়ে রান এসেছে ২৯ দশমিক ৭৮। ৯ ম্যাচে লিটন ও তানজিদ জুটি পঞ্চাশের উপর রান যোগ করতে পেরেছে মাত্র দুই ম্যাচে। সর্বোচ্চ ৯৩ রানের জুটিটি এসেছিল ভারতের বিপক্ষে। আর কোনো রান না করেই এ জুটি ভেঙেছে দুই ম্যাচে।
ওপেনিংয়ে রান না পাওয়া দলকে যতটা না ভুগিয়েছে, তার চেয়েও বেশি ভুগিয়েছে ভালো শুরু পেয়েও লিটনের উইকেট বিলিয়ে আসাটা। ৯ ম্যাচের ৬টিতেই ভালো শুরু করেও নিজের ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হন ডানহাতি এই ওপেনার। আরেক ওপেনার তানজিদের অবস্থা তার সঙ্গীর চেয়েও খারাপ। ভারতের বিপক্ষে এক ফিফটি ছাড়া আসরজুড়ে মলিন ছিল তার ব্যাট। ১৬ দশমিক ১১ গড়ে করেছেন কেবল ১৪৫ রান।
ছন্নছাড়া ব্যাটিংয়ের মূলে ছিল প্রায় সব ম্যাচেই দলের ব্যাটিং-অর্ডারের রদবদল। যদিওবা টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে বারবার বলা হয় এসব কিছুই দলের প্রয়োজনে করা হয়েছে কিন্তু বাস্তবে তার ফলাফল ছিল শূন্য। এক মেহেদী হাসান মিরাজই ৯ ম্যাচে ব্যাট করেছেন ৫টি ভিন্ন ভিন্ন পজিশনে। আর তাকে জায়গা দিতে অন্য ব্যাটারদের ছেড়ে দিতে হয়েছে তাদের জায়গা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ৩ নম্বরে খেলা শান্তর কথা। ৩ ম্যাচে মিরাজকে সুযোগ দিতে তিনি ব্যাট করেন ৪ নম্বর পজিশনে।
পুরো আসরে বাংলাদেশের পঞ্চাশোর্ধ রানের জুটি হয়েছে মাত্র নয় বার। লঙ্কানদের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ১৬৯ রানের জুটিটি আসে শান্ত ও সাকিবের ব্যাট থেকে। আর কোনো রান না করেই জুটি ভেঙেছে মোট ৭টি। যার মধ্যে আবার ৪টিই টপ-অর্ডারের।
আলাদা করে বলতে হয় দলের ডট বল খেলার প্রবণতার কথাও। ৯ ম্যাচে মোট ৪০৮ ওভার ২ বল মোকাবেলায় ডট খেলেছে ২৩২ ওভার ১ বল। অর্থাৎ ৫৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ বলে কোনো রানই করতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাটাররা।
মন্তব্য করুন: