নিউ জিল্যান্ডকে হতাশায় ডুবিয়ে ফাইনালে ভারত

১৫ নভেম্বর ২০২৩

নিউ জিল্যান্ডকে হতাশায় ডুবিয়ে ফাইনালে ভারত

ম্যাচের ফল এক রকম নির্ধারিত হয়ে যায় দুই শতকেরেকর্ড গড়ে বিরাট কোহলির শতক আর ঝড় তুলে শ্রেয়াস আইয়ারের সেঞ্চুরি। এরপরও ভারতের দেওয়া পাহাড়সম লক্ষ্যের দিকে ছোটার চেষ্টা করেছিলেন কেইন উইলিয়ামসন ড্যারিল মিচেল, কিন্তু মোহাম্মদ শামির অবিস্মরণীয় বোলিংয়ে তা আর হয়নি। বিশ্বকাপের প্রথম সেমি-ফাইনালে নিউ জিল্যান্ডকে হতাশায় ডুবিয়ে ৭০ রানের জয়ে ফাইনালে উঠে গেল স্বাগতিকরা।

বুধবার মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ৩৯৮ রানের লক্ষ্য লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারে ডেভন কনওয়ে রাচিন রবীন্দ্রকে হারিয়ে চাপে পড়ে নিউ জিল্যান্ড। দুই ওপেনারকেই সাজঘরে ফেরান শামি। এরপরই দলের হাল ধরেন অধিনায়ক উইলিয়ামসন মিচেল। 

ভারতীয় বোলারদের দেখেশুনে খেলে অর্ধ-শতক তুলে নেন উইলিয়ামসন। অপরপ্রান্তে ৮৫ বলে আসরের দ্বিতীয় শতক তুলে নেন মিচেল। ৫২ রানে থাকা কিউই অধিনায়কের সহজ ক্যাচ ফেলে তাকে জীবন দিলেও তার ইনিংস বেশি বড় করতে দেননি শামি। নিজের তৃতীয় স্পেলে এসেই ৬৯ রানে অধিনায়ককে ফিরিয়ে বিশ্বকাপে তৃতীয় উইকেটে কিউইদের সর্বোচ্চ ১৮১ রানের জুটি ভাঙেন ডানহাতি এই পেসার। দুই বল পরেই টম ল্যাথামকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন তিনি।

তৃতীয় উইকেটে বিশ্বকাপে কিউইদের হয়ে রেকর্ড ১৮১ রানের জুটি গড়েন উইলিয়ামসন ও মিচেলগ্লেন ফিলিপসকে নিয়ে তাও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন মিচেল। কিন্তু যশপ্রীত বুমরাহর প্রথম শিকার হয়ে ফিলিপস ৪১ রান করা ফিরলে আর বেশি দূর এগুতে পারেনি কিউইরা। পঞ্চম উইকেটে তাদের ৬১ বলে ৭৫ রানের জুটি শুধু ব্যবধান কমাতেই ভূমিকা রাখে।

১১৯ বলে চার ছক্কায় ১৩৪ করা মিচেলকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখিয়ে এই আসরে তৃতীয়বারের মতো পাঁচ উইকেট শিকার করেন ম্যাচসেরা শামি। শেষ দুই ব্যাটারকে ফিরিয়ে প্রথম ভারতীয় বোলার হিসেবে ম্যাচে উইকেট পান ডানহাতি এই পেসার। বল আগেই ৩২৭ রানে থামে কিউইদের ইনিংস।

এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে কিউই বোলারদের ওপর তাণ্ডবের সূচনা করেন রোহিত শর্মা। উদ্বোধনী জুটি থেকে আসে ৭১ রান। ছক্কায় ২৯ বলে ৪৭ রান করে টিম সাউদির বলে উইলিয়ামসনের অসাধারণ এক ক্যাচে সাজঘরে ফেরেন ভারত অধিনায়ক। আউট হওয়ার আগে ভাঙেন এক বিশ্বকাপে ক্রিস গেইলের ২৬ ছক্কার রেকর্ড।

দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে কোহলিকে সঙ্গে নিয়ে দ্রুতগতিতে রান যোগ করে আসরের চতুর্থ ফিফটি তুলে নেন শুবমান গিল। কিন্তু ২৩তম ওভারে দলীয় ১৬৪ রানে পায়ে টান পড়ায় ৭৯ রানে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়েন গিল।

গিল ফিরলেও আইয়ারকে নিয়ে নিউ জিল্যান্ড বোলারদের তুলোধুনো করা চালিয়ে যান কোহলি। সমান তালে রান তুলে দুজনই তুলে নেন নিজেদের ফিফটি। আর কোহলি ভাঙেন বিশ্বকাপের এক আসরে শচীন টেন্ডুলকারের করা সর্বোচ্চ ৬৭৩ রানের রেকর্ড।

শচীনের দুটি বিশ্বকাপ রেকর্ডের পাশাপাশি সর্বোচ্চ শতকের রেকর্ডও ভাঙেন কোহলি রেকর্ডের ম্যাচে কোহলির মহাকাব্য লেখা তখনও বাকি। লকি ফার্গুসনের বল ডিপ মিড-উইকেটে ঠেলে দিয়ে দুই রান নিয়ে গড়েন ইতিহাস। প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডে ক্রিকেটে হাঁকান ৫০টি শতক। এবারের বিশ্বকাপের এটা তার তৃতীয়। কোহলির ১১৩ বলে চার ছক্কার ১১৭ রানের এই রাজসিক ইনিংসটি থামান সাউদি। একই সঙ্গে এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ আটবার পঞ্চাশোর্ধ রানের রেকর্ডও এখন কোহলির। 

অপরপ্রান্তে একের পর এক ছক্কা হাঁকিয়ে ৬৭ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন আইয়ারও। টানা দুই ম্যাচে শতক হাঁকানো ডানহাতি এই ব্যাটারের ৭০ বলে ছক্কার ইনিংসটি থামে ১০৫ রানে। শেষ দিকে লোকেশ রাহুলের ২০ বলে ৩৯ রানে উইকেট হারিয়ে ৩৯৭ রানে থামে ভারতে ইনিংস।

ভারতীয় ব্যাটারদের সামনে অসহায় কিউই বোলাররা কোনো সুবিধাই করতে পারেনি। ১০০ রান দিয়ে উইকেট নেন সাউদি। অন্যদিকে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে খরুচে বোলিংয়ে ৮৬ রানে উইকেট নেন ট্রেন্ট বোল্ট।

মন্তব্য করুন: