স্ত্রীর মামলা, আদালতে ছোটাছুটি সামলে ২২ গজের রাজা শামি

১৬ নভেম্বর ২০২৩

স্ত্রীর মামলা, আদালতে ছোটাছুটি সামলে ২২ গজের রাজা শামি

বাইশ গজে যে বোলারটি উইকেট শিকারের পর বুনো উদযাপনে মেতে ওঠেন, ব্যক্তিজীবন তার মোটেও সুখের নয়। ক্রিকেট মাঠ থেকে বেরোলেই হয়তো তার মুখের হাসিটা মিইয়ে যায়। কারণ, মোহাম্মদ শামির জীবন সমস্যায় ভরপুর! তার ব্যক্তিজীবনের দিকে ফিরে তাকালে যে কেউ অবাক বিস্ময়ে প্রশ্ন করবেন- কীভাবে সম্ভব! ব্যক্তিগত জীবনের এত ঝড়-ঝঞ্ঝা মোকাবেলা করে কীভাবে ক্যারিয়ার এগিয়ে নিচ্ছেন শামি?

উত্তরপ্রদেশের সহাসপুর গ্রাম থেকে উঠে আসা শামি যেন একাগ্রতা আর অধ্যবসায়ের বিরল এক দৃষ্টান্ত। ক্রিকেটার হিসেবে শামির উত্থান শুরু হয় কলকাতায়। উত্তররপ্রদেশে পর্যাপ্ত সুযোগ না পেয়ে ক্রিকেটার হতে কলকাতায় গিয়েছিলেন শামি। ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো করে ২০০৮ সালে ডাক পান আইপিএলে। কলকাতা নাইট রাইডার্সের জার্সিতে দুই বছর কাটালেও কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি! তখন পাকিস্তানের পেস কিংবদন্তি ওয়াসিম আকরাম ছিলেন নাইটদের কোচ। এই সুযোগটা হাতছাড়া করেননি শামি। সুলতান অব সুইং-এর থেকে দীক্ষা নিয়ে প্রস্তুত করেন নিজেকে। অবশেষে ২০১‌৩ সালে ডাক পান জাতীয় দলে। পাকিস্তানের বিপক্ষে দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে অভিষেকও হয়ে যায়।

মোহাম্মদ শামির ক্রিকেট ক্যারিয়ার যতটা উজ্জ্বল, ব্যক্তিজীবন ততটাই আঁধারে ঢাকা। ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন মডেল হাসিন জাহানকে। একপর্যায়ে সংসারে ভাঙন ধরে। শামি এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে শারিরীক নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করেন হাসিন। মেয়েকে নিয়ে তিনি শামির থেকে আলাদা হয়ে যান। সেইসঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিরামহীনভাবে শামির বিরুদ্ধে বিষেদগার করে যান। এখনও মাঝেমধ্যেই শামিকে নিয়ে হাসিনকে মুখ খুলতে দেখা যায়। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেই অপ্রিয় সব প্রশ্ন শুনতে হয়। হাসিমুখে সেসব এড়িয়ে যান শামি।

ব্যক্তিজীবনের এই ভয়াবহ পরিস্থিতি শামিকে টলাতে পারেনি। ক্রিকেট থেকে তার মনোযোগ বিন্দুমাত্র সরে যায়নি। এতকিছুর পরও স্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কখনই কোনো মন্তব্য করেননি শামি। শুধু মন দিয়ে মাঠে পারফর্ম করে গেছেন। ব্যক্তিজীবনের প্রভাব মাঠের খেলায় কখনো পড়তে দেননি এই পেসার। তারপরও ভারতীয় দল তাকে শুধু টেস্টে বিবেচনা করছিল। সাদা বলের ক্রিকেটে সুযোগই পাচ্ছিলেন না। চলতি বিশ্বকাপ দলে তার সুযোগ পাওয়া নিয়েও বিতর্ক হয়েছে। কারণ সর্বশেষ এক বছর শামি সাদা বলের ক্রিকেট খুব কমই খেলেছেন। সমস্যার এখানেই শেষ নয়, বিশ্বকাপ দলে নাম ঢোকানোর আগে স্ত্রীর করা মামলায় আদালতে গিয়ে জামিনও নিতে হয়েছে শামিকে।

ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপ শুরুর পর শামিকে নামতে হয় অন্য লড়াইয়ে। প্রথম চার ম্যাচে একাদশেই সুযোগ পাননি। বেঞ্চে বসে শামি হয়তো প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, একটা সুযোগ পেলেই নিজেকে নিয়ে যাবেন অন্য উচ্চতায়। হার্দিক পান্ডিয়ার ইনজুরিতে সেই সুযোগটা আসে। মুফতে পাওয়া সুযোগ কীভাবে কাজে লাগাতে হয়, প্রথম ম্যাচেই সেটার জ্বলন্ত্ব উদাহরণ সৃষ্টি করেন। এখন পর্যন্ত ৬ ম্যাচে ২৩ উইকেট, পাঁচ উইকেট তিনবার! নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ৭ উইকেট নিয়ে ভারতকে তুললেন ফাইনালে। আগামী রোববার ফাইনালে আহমেদাবাদের দর্শকরা নিশ্চয়ই অপেক্ষা করে থাকবেন শামির সুইং ভেলকি দেখার জন্য।

মন্তব্য করুন: