যে প্রশ্নের জবাব ২ দশক ধরে খুঁজে ফিরছে দক্ষিণ আফ্রিকা
১৭ নভেম্বর ২০২৩
‘যত গর্জে তত বর্ষে না’- বাংলা এই বাগধারাটা দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলের সঙ্গে মিলে যায় বারবার। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই তারা ফেবারিট থাকে, দুর্দান্ত পারফর্মেন্সে সমর্থকদের মনে আশার সঞ্চার করে, তারপর নক-আউট এলেই বেজে ওঠে তাদের বিদায়ঘণ্টা। লিগ পর্বের তর্জন গর্জনই সার, নক-আউটে গেলেই দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটাররা কেন যেন সবকিছু গুলিয়ে ফেলে! এক-দুটি আসর নয়, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এভাবেই চলছে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট!
কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সেমিফাইনালে কতজন প্রোটিয়াদের ওপর আস্থা রেখেছিলেন? এই অস্ট্রেলিয়াকেই তো লিগ পর্বে ১৩৪ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছিল টেম্বা বাভুমার দল। ৯ ম্যাচের ৭টি জিতে তারা সেমি-ফাইনালে উঠেছে। তারপরও সিংহভাগ মানুষই সেমিফাইনালে প্রোটিয়াদের ওপর আস্থা রাখতে পারেননি। কারণ, সেমি-ফাইনাল এলেই প্রোটিয়ারা ভেঙে পড়বে - এটা যেন নিয়ম হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার হয়েছেও তাই।
চলতি আসরে এই দক্ষিণ আফ্রিকাই তিনশর ওপর রান করেছে ৫ বার। সর্বোচ্চ ৪২৮ রান তোলা দলটি ইডেন গার্ডেন্সে আগে ব্যাট করে থেমে গেল মাত্র ২১২ রানে! অবশ্য লিগ পর্বে এই ইডেনেই ভারতের বিপক্ষে তারা পরে ব্যাট করে মাত্র ৮৩ রানে অলআউট হয়েছিল। স্বল্প পুঁজি নিয়েও বৃহস্পতিবার টেম্বা বাভুমার দল যে লড়াই করেছে, সেটাই তাদের জন্য সান্ত্বনা পুরস্কার।
প্রোটিয়াদের জন্য এই ‘স্বান্ত্বনা পুরস্কারের’ আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯৯ বিশ্বকাপ থেকে। ওই আসরের সেমিফাইনালে হ্যান্সি ক্রনিয়ের দুর্দান্ত দলটির প্রতিপক্ষ ছিল এই অস্ট্রেলিয়া। জয়ের জন্য প্রোটিয়াদের টার্গেট ছিল ২১৩। কী মিল তাই না? সেই রান তাড়ায় শেষ চার বলে প্রোটিয়াদের প্রয়োজন হয় ১ রানের। উইকেটে তখন ফর্মের তুঙ্গে থাকা ল্যান্স ক্লুজনার এবং শেষ ব্যাটার হিসেবে অ্যালান ডোনাল্ড। সবাই নিশ্চিত প্রথমবার ফাইনালে উঠতে যাচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
ঠিক তখনই ঘটল ঘটনাটা। শেষ ওভারের তৃতীয় বলটি ফিল্ডারের হাতে রেখেই কেন যেন রান নিতে ছুটলেন ক্লুজনার! অন্যপ্রান্তে থাকা ডোনাল্ড তখনো বুঝে উঠতে পারেননি যে, ব্যাপারটা কী হচ্ছে! যতক্ষণে বুঝলেন, ততক্ষণে যা ঘটার ঘটে গেছে! ডোনাল্ড রান-আউট, ম্যাচ টাই। আগের পর্ব সুপার সিক্সে দুই দলের পয়েন্ট সমান থাকলেও রান রেটে এগিয়ে থাকায় ফাইনালে চলে গেল অস্ট্রেলিয়া!
১৯৯২ আসরের সেমিফাইনালেও প্রোটিয়ারা ইংল্যান্ডের কাছে ১৯ রানে হেরেছিল। তবে তারা ফাইনালে ওঠার সেরা সুযোগটা পেয়েছিল ১৯৯৯ বিশ্বকাপেই। তাই সেই আসরেই দক্ষিণ আফ্রিকার নামের পাশে ‘চোকার্স’ শব্দটা জুড়ে যায়। এর ৮ বছর পর ২০০৭ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেও সেই অস্ট্রেলিয়াকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পায় প্রোটিয়ারা। সেবার ১৪৯ রানে গুটিয়ে গ্রায়েম স্মিথের দল হারে ৭ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে। ২০১৫ বিশ্বকাপে প্রোটিয়াদের কপাল পোড়ায় বৃষ্টি। ডাকওয়ার্থ লুইস আইনে ডি ভিলিয়ার্সদের কাঁদিয়ে ফাইনালে ওঠে নিউ জিল্যান্ড।
এবারের আসর মিলিয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপে মোট পাঁচবার সেমি-ফাইনাল থেকে প্রোটিয়াদের বিদায় ঘটল। সেমিফাইনালেই কেন শেষ? এ প্রশ্নের জবাব দুই দশক ধরে খুঁজে চলছে দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাব মেলেনি এখনও।
মন্তব্য করুন: