ভারতকে স্তব্ধ করে ষষ্ঠ শিরোপা অস্ট্রেলিয়ার
১৯ নভেম্বর ২০২৩
লড়াইটা ছিল আসর জুড়ে অপ্রতিরোধ্য ভারত আর টানা দুই ম্যাচ হারার পর দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়ানো অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে। নিজেদের চেনা কন্ডিশন ও সমর্থকদের বিশাল সমর্থনে ফাইনাল শুরুর আগে বেশ এগিয়েই ছিল স্বাগতিকরা। তবে একপেশে এক ম্যাচে উড়তে থাকা ভারতকে মাটিতে নামিয়ে কোটি সমর্থকদের কাঁদিয়ে ষষ্ঠবারের মতো ওয়ানডে ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্ব নিজেদের করে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্স জানিয়েছিলেন বিশাল সংখ্যক দর্শককে চুপ করিয়ে দেওয়ার মতো তৃপ্তির কিছু নেই। ফাইনালে যেন ঠিক তাই করে দেখাল অস্ট্রেলিয়া।
রোববার আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে অজি পেসারদের অসাধারণ নৈপুণ্যে ইনিংসের শেষ বলে ২৪০ রানেই গুটিয়ে যায় ভারতের ইনিংস। ট্রাভিস হেডের দারুণ এক শতকে স্বাগতিকদের ৬ উইকেটে হারিয়ে শিরোপা নিজেদের করে নেয় কামিন্সের দল।
অবশ্য লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই যশপ্রীত বুমরাহ ও মোহাম্মদ শামির পেস তোপে দারুণ চাপে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। যার শুরুটা করেন আসর জুড়ে প্রতিপক্ষের মনে ত্রাস সৃষ্টি করা শামি। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই অফ স্ট্যাম্পের বেশ বাইরের বল খেলতে গিয়ে স্লিপে থাকা বিরাট কোহলির হাতে সাজঘরে ফেরান ডেভিড ওয়ার্নার (৭)।
ব্যাটিংয়ে নেমেই বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে খেলতে শুরু করেন মিচেল মার্শ। কিন্তু তাকে ১৫ রানেই থামিয়ে দেন বুমরাহ। পুরো আসরে ব্যাট হাতে নিজের সেরা ছন্দে না থাকা স্টিভ স্মিথও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ৪ রানে এই ব্যাটারকে এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন বুমরাহ।
৪৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে থাকা দলকে টেনে তোলার দায়িত্ব নেন হেড ও মারনাস লাবুশেন। একপ্রান্তে যখন রান তুলতে থাকেন বাঁহাতি হেড এবং তখন অপর প্রান্তে বোলারদের সামলে তাকে সঙ্গ দিতে থাকেন লাবুশেন। তাদের দৃঢ়তায় ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ভারতীয়দের বাইরে চলে যায়।
৯৫ বলে ১৪ চার ও এক ছক্কায় আসরের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন ম্যাচসেরা হেড। ধীরগতির ব্যাটিংয়ে ৯৯ বলে লাবুশেনও তুলে নেন তার অর্ধ-শতক। জয় থেকে মাত্র ২ রান তুলে থাকতে ডিপ মিড উইকেটে শুবমান গিলের হাতে হেড ক্যাচ দিলে থামে হেডের ১২০ বলে ১৩৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংসটি। চতুর্থ উইকেটে হেড ও লাবুশেনের ১৯২ রানের জুটিতে ৪২ বল হাতে রেখেই ম্যাচ নিজেদের করে নেয় অজিরা।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে যথারীতি রোহিত শর্মার দারুণ শুরুর পর রান উৎসবের দিকেই এগুচ্ছিল ভারত। কিন্তু ছন্দপতন ঘটে দলীয় ৩০ রানেই। মিচেল স্টার্কের বলে মিড অনে ক্যাচ তুলে দেন গিল (৪)। তবে ভারত অধিনায়কের দাপুটে ব্যাটিং চলছিল আগের মতোই। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ১০ম ওভারের চতুর্থ বলে ডাউন দ্য উইকেটে আসে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে টাইমিং মিস করেন রোহিত। কভার থেকে দৌড়ে দুর্দান্ত ডাইভে ৩১ বলে ৪৭ রান করা রোহিতের ক্যাচ নেন হেড।
এরপরও প্রথম ১০ ওভারে ৮০ রান তুলে বড় সংগ্রহের দিকে ইঙ্গিত দেয় ভারত। কিন্তু পরের ওভারেই স্টার্কের দ্বিতীয় শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন গত দুই ম্যাচে শতক হাঁকানো শ্রেয়াস আইয়ার (৪)। পরের ১০ ওভারে কোনো উইকেট না হারালেও মাত্র ৩৫ রান যোগ করতে পারেন কোহলি ও রাহুল জুটি। ৫৬ বলে ৪ চারে কোহলি তুলে নেন আসরে তার ষষ্ঠ অর্ধ-শতক। তবে ৫৪ রানে কামিন্সের বল কোহলির ব্যাট ছুঁয়ে বল স্ট্যাম্পে আঘাত হানলে ভাঙে ৬৭ রানের জুটিটি।
এর মাঝে ৯৭ বলে কোনো বাউন্ডারিই হাঁকাতে পারেনি ব্যাটাররা। ৮৬ বলে ১ চারে অর্ধ-শতক করেন রাহুলও। ১০৭ বলে ৬৬ রান করা রাহুল আউট হতেই ভারতের বড় স্কোরের আশা শেষ হয়ে যায়। পরের কোনো ব্যাটার রানের গতি বাড়াতে পারেননি। রবীন্দ্র জাদেজা (৯) এবং সূর্যকুমার যাদব (১৮) দুজনেই ব্যর্থ। পুরো ৫০ ওভার খেলে ২৪০ রানে অল-আউট হয় ভারত।
বল হাতে ৫৫ রানে ৩ উইকেট নেন স্টার্ক। ২টি করে উইকেট শিকার করেন কামিন্স আর জশ হ্যাজেলউড।
মন্তব্য করুন: