নীল সমুদ্র স্তব্ধ করে প্যাট কামিন্সদের বিশ্বজয়

১৯ নভেম্বর ২০২৩

নীল সমুদ্র স্তব্ধ করে প্যাট কামিন্সদের বিশ্বজয়

বহু দূরের এক উপমহাদেশের মাটিতে বিশ্বকাপ ফাইনাল। সেখানকার কন্ডিশন, উইকেট, গ্যালারি, দর্শক সমর্থন- কোনোটাই পক্ষে নেই। শুধু আছে প্রতিকূল পরিস্থিতিকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে লক্ষ্য অর্জনে ছুটে চলার দুরন্ত সাহস এবং হার না মানা মানসিকতা। এই দুয়ের যুগলবন্দিতে আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের ১ লাখ ৩০ হাজার দর্শকের গর্জন স্তব্ধ করে দিল অস্ট্রেলিয়া।

ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে ফাইনালের আগের দিন শনিবার এমন কিছুই বলেছিলেন অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্স, এখানকার জনসমুদ্রকে স্তব্ধ করে দেওয়ার মতো তৃপ্তির কিছু নেই। এটাই আমাদের লক্ষ্য। তার কথা যে অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাবে, সেটা কি কামিন্স নিজেও ভেবেছিলেন? হয়তো ভেবেছিলেন এবং এমন আত্মবিশ্বাস নিয়েই তারা নেমেছিলেন ফাইনালের লড়াইয়ে।

স্টিভ ওয়াহ বা রিকি পন্টিংয়ের সর্বজয়ী অস্ট্রেলিয়াকে যারা দেখেছেন, তাদের কাছে অজিদের এই দুঃসাহস নতুন কিছু নয়। ক্রিকেটটা তারা এভাবেই খেলে থাকে। খেলোয়াড়দের মাঝে প্রচণ্ড প্যাশন কাজ করে খেলাটির প্রতি। হারার আগে তারা হেরে যায় না। ক্রিকেট তাদের কাছে স্রেফ খেলা নয়, মর্যাদার লড়াই। কোনো দল পেশাদারিত্বের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যেতে পারলেই এমনটা সম্ভব। তাই ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে তাদের সমর্থকদের স্তব্ধ করে দেওয়ার হুমকি অস্ট্রেলিয়ানরাই দিতে পারে।

টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই বিধ্বংসী ফর্মে ছিল ভারতীয় দল। বিশেষ করে ভারতীয় ব্যাটারদের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে প্রতিপক্ষ বোলারদের অবস্থা হতো চোখের জলে নাকের জলে। পাশাপাশি বুমরাহ-শামি-সিরাজকে নিয়ে গড়া ভারতের পেসত্রয়ী ব্যাটারদের জন্য আতঙ্ক হয়ে উঠেছিল। এই দুয়ের দারুণ মেলবন্ধনে লিগ পর্বে ভারতের জয় ছিল শতভাগ। এরপর নিউ জিল্যান্ডকে গুঁড়িয়ে তারা সেমিফাইনালের বাধা টপকে যায়। সেই ভারত ভেঙে পড়ল ফাইনালের মঞ্চে।

পাঁচবারের বিশ্বজয়ী অস্ট্রেলিয়ার আগ্রাসী ক্রিকেটের সামনে ভারতের সকল অস্ত্রই যেন ভোঁতা হয়ে গেল। থেমে গেল নীল সমুদ্র হয়ে ওঠা আহমেদাবাদের গ্যালারির গর্জন। অথচ, এই অস্ট্রেলিয়াকেই লিগ পর্বে ৬ উইকেটে উড়িয়ে রোহিত শর্মার দল টুর্নামেন্ট শুরু করেছিল। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান করেছেন বিরাট কোহলি। সর্বোচ্চ উইকেট নিয়েছেন মোহাম্মদ শামি। আগ্রাসী পারফর্মেন্স তো বটেই, হোম কন্ডিশন আর দর্শক সমর্থন মিলিয়ে ফাইনালের ফেভারিট তো ভারতই ছিল।

তাহলে কি ফাইনালের চাপ নিতে পারেননি রোহিতরা? উত্তেজনা সামলাতে ব্যর্থ হয়েছেন? নাকি ধীরগতির পিচ বুঝতে না পেরে তাদের একের পর এক ব্যাটার আত্মাহুতি দিয়েছেন? ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মার কথায় কিন্তু এমন কিছুরই ইঙ্গিত মিলে। টস হারের পর তিনি বলেছিলেন, টস জিতলে ব্যাটিংই নিতেন। পরে সেই পিচ হয়ে উঠল রোহিতদের শত্রু।

আসলে ভারতের ব্যাটিং ইনিংসেই ম্যাচটা শেষ হয়ে গিয়েছিল। বাকি ছিল শুধু আনুষ্ঠানিকতা। যে কোনো ভেন্যুতে, যে কোনো কন্ডিশনে মাত্র ২৪০ রান পুঁজি নিয়ে বিশ্বকাপ ফাইনালের মঞ্চে অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে ঠেকানো স্রেফ অসম্ভব। ভারতকে ৬ উইকেটে উড়িয়ে হেক্সা মিশন পূর্ণ করা প্যাট কামিন্সরা যেন ক্রিকেটবিশ্বকে এই বার্তাটাই দিলেন।

মন্তব্য করুন: