বিশ্বকাপের বিমর্ষ নায়ক
২০ নভেম্বর ২০২৩
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিরাট কোহলির পা যেন আর চলছিল না। মুখায়ববে নেমে এসেছিল রাজ্যের আঁধার। ফুটে উঠেছিল একরাশ হতাশা আর বেদনার প্রতিচ্ছবি। অনেক কষ্টে হেঁটে মঞ্চে উঠলেন। বিশ্বকাপ শিরোপার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মুখ ফিরিয়ে রাখলেন অন্যদিকে। একবারও তাকালেন না। ফাইনালে এমন হৃদয়ভাঙা পরাজয়ের পর বিশ্বকাপ শিরোপার দিকে তাকিয়ে বুকের ভেতর জমে থাকা কষ্টের বোঝা হয়তো আর বাড়াতে চাননি ভারতীয় ক্রিকেটের এই ব্যাটিং দানব। নীরবে টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার নেওয়াটাকেই তার কাছে শ্রেয় মনে হয়েছে।
ঘরের মাঠে সদ্য শেষ হওয়া আসরের ১১ ম্যাচে তিনটি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন কোহলি। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালে ৫০তম সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে গড়েন বিশ্বরেকর্ড। তিন সেঞ্চুরির পাশে পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলেছেন ৬টি। ৯৫.৬২ গড় আর ৯০.৩১ স্ট্রাইকরেটে করেছেন ৭৬৫ রান। যা বিশ্বকাপের ইতিহাসে এক আসরে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের বিশ্বরেকর্ড। এখানেও পেছনে ফেলে দিয়েছেন ২০০৩ বিশ্বকাপে ৬৭৩ রান করা শচীন টেন্ডুলকারকে। ফাইনালেও তার ব্যাট থেকে এসেছে ৫৪ রানের ইনিংস। ভারতের আর কোনো ব্যাটার এক বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনাল ও ফাইনালে পরপর পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলতে পারেননি।
কথায় বলে, ‘শেষ ভালো যার সব ভালো’। কোহলির শেষটা ভালো হলো না। আসরজুড়ে দুর্দান্ত পারফর্মেন্স করা কোহলির হাতে বিশ্বকাপ শিরোপা শোভা পেলে সেটাই হতো সুন্দরতম দৃশ্য। কিন্তু বাস্তবে তা হলো না। আহমেদাবাদের নীল সমুদ্রকে স্তব্ধ করে দিয়ে বিশ্বকাপ ছিনিয়ে নিল প্যাট কামিন্সের দুর্ধর্ষ অস্ট্রেলিয়া। শিরোপার সবচেয়ে যোগ্য দাবিদার হয়েও কোহলিদের ভাসতে হলো চোখের জলে।
টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার নেওয়ার আগেই কোহলি একবার চলে গিয়েছিলেন স্ত্রী আনুশকা শর্মার কাছে। জীবনসঙ্গীকে পরম যত্নে জড়িয়ে ধরেছিলেন বলিউড তারকা আনুশকা। স্ত্রীর কাঁধে মাথা রেখে কিছু সময়ের জন্য হয়তো স্বস্তি পেয়েছেন কোহলি। কিন্তু তার বুকে বেদনা যে হিমালয় চেপেছে, সেটা কি সহজে দূর হবে? এর আগে ২০১১ বিশ্বকাপ জিতেছিলেন। এবার আরেকটি শিরোপার খুব কাছে গিয়ে থেমে যেতে হলো। এই দুঃখ কি সহজে যাবে?
মাঠ ও মাঠের বাইরে কোহলি সবসময়ই বেশ আবেগপ্রবণ। আবেগের আতিশয্যে উদযাপনের বাড়াবাড়িও করেন মাঝেমধ্যে। সেসব হয়তো অনেকে পছন্দও করেন না। কিন্তু কোহলি এমনই। খেলাটির প্রতি তিনি ভীষণরকমের সৎ। ক্রিকেট নিয়ে তার আবেগ, প্যাশন, নিবেদনের কোনো তুলনা হয় না। তার ফিটনেস বিশ্বের বহু ক্রীড়াবিদের কাছে আদর্শ। নিজেকে ফিট রাখতে খাবারের টেবিল থেকে বাদ দিয়েছেন প্রিয় সব পদ। জীবনযাপনে মেনে চলেন কঠোর শৃঙ্খলা। সেইসঙ্গে নিয়মিত শরীরচর্চা তো আছেই। এত কিছু বিসর্জন দেওয়ার ফলও পাচ্ছেন হাতেনাতে। ৩৫ বছর বয়সে এসেও কুইক সিঙ্গেল নিতে কোহলির জুড়ি নেই।
যে দিনটির জন্য এত সব আয়োজন, সেই দিনটিই এবার কোহলির হলো না। বয়সের কারণে চার বছর পর আরেকটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে পারবেন কিনা- সেটা বলা মুশকিল। তবে এটা নিশ্চিত যে, শিরোপার এত কাছে গিয়েও ছুঁতে না পারার যন্ত্রণা দলের বাকি সতীর্থদের মতোই কোহলিকে আরও অনেকদিন কুরে কুরে খাবে।
মন্তব্য করুন: