আমি আর বেশি দিন নাই: পাপন
২৭ নভেম্বর ২০২৩
প্রায় এক যুগ ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নাজমুল হাসান পাপন। তার আমলে বাংলাদেশের ক্রিকেট স্মরণীয় কিছু সাফল্য পেয়েছে। পাশাপাশি দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে বারবার সমালোচিতও হয়েছেন। সেই নাজমুল হাসান পাপন আর বেশিদিন বিসিবি সভাপতি হিসেবে থাকতে চান না। সোমবার নিজ বাসায় তামিম ইকবালের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি নিজেই সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তামিমকে ঘিরে গত কয়েকমাসে বাংলাদেশের ক্রিকেটে প্রচুর নাটক হয়েছে। শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপেও খেলা হয়নি তার। সোমবার পাপনের সঙ্গে দেখা করতে তার গুলশানের বাসভবনে যান তামিম। একান্ত বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের পাপন বলেন, “তামিম দুই-তিন দিন আগে থেকেই বলছিল যে, ও আসবে। সবশেষ ওর সঙ্গে যখন কথা হয়েছিল, তখন ও বলেছিল যে, ‘আপনি অনেক কিছু জানেন না, আপনাকে বলতে চাই।’ আজকে যে সে সব বলে গেছে, তা নয়। কারণ সময় খুব কম।”
বিসিবি সভাপতি বলেন, “আপনাদেরকে অনেক আগে বলেছি, এবার আমি বোর্ডে আসতে চাইনি। অনেকেই বলে, ‘কেন? কোনো চাপ আছে কি না?’ আসলে দুটো কারণ - একটা হচ্ছে, আমার সময় নাই। দ্বিতীয়টা হচ্ছে, এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যেটা মানুষ পছন্দ করবে না। ওখানেই কিন্তু ইঙ্গিতটা ছিল। এখনও তামিমকে আমি সেটাই বলেছি, ‘তুমি তো জানো আমি তোমাদের সঙ্গে আর আগের মতো নাই। প্রথম দুই টার্ম দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। এখন আমি ছেড়ে দিয়েছি। যাদের দায়িত্ব দিয়েছি, তারা পালন করবে। তাদেরকে বলেছি, সমস্যা থাকলে আমি সবসময় সহায়তা করব।”
তবে এখনই বিসিবিতে কোনো পরিবর্তন আনতে চান না পাপন। নির্বাচন এবং বিপিএলের পর কিছু হতে পারে বলে তিনি ইঙ্গিত দেন, “তামিম এমন একটা সময় (কথাগুলো) বলেছে, যখন আমার হাতে একদম সময় নেই। এক মাস পর আমার (জাতীয়) নির্বাচন। আমি আমার এলাকাতেই থাকছি সবচেয়ে বেশি। ওকে বলেছি, নির্বাচন থেকে এলেই বা শেষ হলেই যে সব সমস্যা জানব, তা তো না। আমি কারও কথায় কিছু করব না। আগে আমার নিজের জানতে হবে, সমস্যাটা কোথায়।”
“আমি একদম গভীরে ঢুকতে চাই। সবার সঙ্গে কথা বলব, নিজের সিদ্ধান্তটা নেব। যেটা আগে আমি করতাম। ওর সঙ্গে কথা হয়েছে, যা-ই সিদ্ধান্ত নেই, সেটা হবে বিপিএলের পর। নির্বাচনের পর বিপিএলটা শুরু হলে যে সময়টা পাব… সব ক্রিকেটার, কোচিং স্টাফদের পাব। এই সময়টায় যা তথ্য পাওয়ার, সব পাব। আমরা একসঙ্গে কথা বলে যেটা ক্রিকেটের জন্য ভালো হয়, সেই সিদ্ধান্ত নেব।”
২০১২ সালে প্রথমে সরকারের মনোনয়নে বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছিলেন পাপন। পরের বছর বিসিবির নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। এরপর ২০১৭ এবং ২০২১ সালেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হন পাপন। বিসিবির পরবর্তী নির্বাচন হওয়ার কথা ২০২৫ সালের শেষদিকে। এর আগেও তিনি বেশ কয়েকবার বলেছিলেন, আর বিসিবি সভাপতি থাকতে চান না। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশও নিয়েছেন। সোমবার তামিমের প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বিসিবি সভাপতির মুখে শোনা গেল একই কথা।
পাপন বললেন, “আমি আর বেশি দিন নাই। এই টার্ম তো আর বেশি দিন নাই। এরপর আর এক বছর আছে। আমার পরিকল্পনা হচ্ছে, যাওয়ার আগে অবশ্যই দলটা ঠিক করে যাব। যা যা করা দরকার, এটা আমি করে যাব। সেটা ঠিক হবে কি না, জানি না। আমি যেটা মনে করি করা দরকার, ওটা করব। সেটা যদি অনেক কঠিন সিদ্ধান্তও হয়, সেটাও আমি নেব। এই জিনিসটাই বলছি, একেকজন একটা কথা বলবে। ওটা শুনে সিদ্ধান্ত নেব, তার মধ্যে আমি নাই। আমি নিজে ভেতরে ঢুকব। আগে যেমন আমি সব জানতাম, এখন জানি না। আমি সবার সঙ্গে কথা বলে গভীরে যাব। যা যা সিদ্ধান্ত নিতে হয় নেব। কে পছন্দ না করল, তাতে কিছু যায় আসে না। ক্রিকেটের স্বার্থে যা যা সিদ্ধান্ত নিতে হয়, আমি নেব।”
মন্তব্য করুন: