আরও একটি সুযোগ কাজে লাগাতে পারবেন সৌম্য?
১ ডিসেম্বর ২০২৩
আরও একটি সুযোগ পেলেন সৌম্য সরকার। এই সুযোগে যদি হারিয়ে যাওয়া সৌম্যকে ফিরে পাওয়া যায়, তাতে অন্তত প্রতি ম্যাচে শুরুটা দারুণ হবে সাদা বলের ম্যাচে। তবে সেজন্য দরকার ভয়ডরহীন সৌম্যকে, যিনি ব্যাট হাতে গুঁড়িয়ে দিতে পারেন বিশ্বের যেকোনো বোলিং লাইনআপ।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সৌম্যর কি অসাধারণ শুরুটাই না হয়েছিল। মাত্র এক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে ডাক পান ২০১৫ বিশ্বকাপে। সেই আসরে একটি ফিফটি করলেও প্রতিটি ম্যাচেই ব্যাট হাতে উড়ন্ত শুরু এনে দিয়েছিলেন। যা পুরো দলের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। সেবারের আসরে প্রথমবার কোয়ার্টার-ফাইনাল খেলে বাংলাদেশ। আগ্রাসী কিন্তু নান্দনিক ব্যাটিংয়ে দ্রুতই সৌম্য ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রিয় হয়ে ওঠেন। এরপর পাকিস্তানের বিপক্ষে অপরাজিত ১২৭। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো ৮৮ এবং ৯০ রানের দুটি ইনিংস।
প্রতিটি ক্রিকেটারকেই একদিন মুদ্রার উল্টোপিঠ দেখতে হয়। স্বপ্নের মতো শুরুর পর সৌম্যর ক্যারিয়ারেও আসে সেই ক্ষণ। ফর্ম হারিয়ে ফেলেন। বিশ্বের বহু ক্রিকেটার ফর্ম হারিয়ে আবারও ফিরে এসেছেন ক্রিকেটে। কিন্তু সৌম্য পারেননি এখনও। এই আট বছরে মাঝেমধ্যে দেখিয়েছেন কিছু ঝলক। যেমন ২০১৯ সালে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে ১৪৯ রানের ইনিংস, কিংবা ঘরোয়া লিগে ডাবল সেঞ্চুরি। বিপিএলেও কিছু ঝড়ো ইনিংস আছে তার। কিন্তু এসবই এসেছে বহুদিন পরপর। ২০১৫ সালের সেই ভয়ংকর সৌম্য আর কখনই ধারবাহিক হতে পারেননি। এমনকী ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে একাদশ থেকে পর্যন্ত বাদ পড়েছিলেন! পাড়ার ক্রিকেটে ‘খ্যাপ’ও খেলতে হয়েছে একসময়।
এত ব্যর্থতার পরও বারবার তাকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তাকে নিয়ে হয়েছে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা। কখনও টপ অর্ডারে, কখনো মিডল অর্ডারে, কখনো লোয়ার অর্ডারে খেলানো হয়েছে। কখনো তাকে ব্যাটিং অল-রাউন্ডার, আবার কখনো পেস বোলিং অল-রাউন্ডার বানানোর চেষ্টাও হয়েছে। ক্রিকেট বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, সৌম্যর দীর্ঘ ফর্ম খরার পেছনে এসব পরীক্ষা নিরীক্ষারও ভূমিকা আছে। একটা পর্যায়ে সৌম্য হয়তো নিজেও জানতেন না, দলে তার ভূমিকাটা কী?
সৌম্য সুযোগ পেয়েছেন অনেক। এত সুযোগ আসলে কোনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারের ভাগ্যেই জোটে না। ঘরোয়া লিগে পারফর্ম না করার পরও সৌম্যকে এত সুযোগ দেওয়ার স্রেফ একটাই কারণ - তার সামর্থ্যের প্রতি কোচ চান্ডিকা হাথুরুসিংহের আস্থা। তাই হাথুরুসিংহে দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশের দায়িত্ব নেওয়ার পর আবারও সৌম্য চলে আসেন লাইমলাইটে।
বিশ্বকাপের আগে নিউ জিল্যান্ড সিরিজে ডাক পান জাতীয় দলে। তাকে নিয়ে বিশেষ অনুশীলনও করেন হাথুরুসিংহে। ওই সিরিজে একটা ফিফটি করলেও হয়তো সৌম্য সুযোগ পেয়ে যেতেন ওয়ানডে বিশ্বকাপ দলে। সৌম্য পারেননি। দেশের ক্রিকেটাঙ্গন তখনই ধরে নিয়েছিল, সৌম্য শেষ সুযোগটা হাতছাড়া করেলেন। আর কখনই হয়তো তাকে জাতীয় দলে ডাকা হবে না। কিন্তু সেসব ধারণা উড়িয়ে আসন্ন নিউ জিল্যান্ড সিরিজের ১৫ সদস্যের দলে আবারও ডাক পেলেন সৌম্য।
সদ্য সমাপ্ত জাতীয় ক্রিকেট লিগে (এনসিএল) ব্যাট হাতে বেশ ভালোই পারফর্ম করেছেন সৌম্য। ওয়ান ডাউনে নেমে ৬ ম্যাচের ১১ ইনিংসে ৪৮.৪৪ গড়ে করেছেন ৪৩৬ রান। ফিফটি করেছেন ৪টি, সর্বোচ্চ অপরাজিত ৯৬। বেশ ধারাবাহিক পারফর্মেন্স। আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় সৌম্য সাত নম্বরে। এ কারণেই হয়তো ফের হাথুরুসিংহের নজরে এসেছেন সৌম্য। পেয়েছেন আরও একটি সুযোগ। দিনশেষে একটাই প্রশ্ন থেকে যায়, আরও একটি সুযোগ পাওয়া সৌম্য এবার কি পারবেন কাজে লাগাতে?
মন্তব্য করুন: