বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রথম সুপারস্টার থেকে নিন্দিত ‘স্পট ফিক্সার’
১১ ডিসেম্বর ২০২৩
২০০১ সাল। কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব গ্রাউন্ডে সাদা পোশাকে মুখোমুখি বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা। ম্যাচের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ৬১ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর ব্যাট হাতে মাঠে নামলেন লিকলিকে চেহারার এক কিশোর। বয়স মাত্র ১৭ বছর ৬১ দিন। এর আগে একটিমাত্র টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা ছিল তার। এই কিশোরই সেদিন চামিন্দা ভাস-মুত্তিয়া মুরলিধরনদের তুলোধুনো করে হাঁকান বিশ্বরেকর্ড গড়া সেঞ্চুরি!
ক্রিকেট দুনিয়ায় তোলপাড় পড়ে গেল। কে এই কিশোর? দুর্দান্ত সব শট আর ভয়ডরহীন ব্যাটিংয়ের এমন প্রদর্শনী বাংলাদেশের ক্রিকেটে তো আগে কোনোদিন দেখা যায়নি। দ্রুতই ক্রিকেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ল ‘মোহাম্মদ আশরাফুল’ নামটি। তার নামের মাধ্যমেই বাংলাদেশের ক্রিকেট পেল অন্যকরম এক পরিচিতি। দেশের ক্রিকেটে শুরু হলো 'স্টারডম'। এই আশরাফুলই ছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটে প্রথম সুপারস্টার। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় সেই সুপারস্টার হয়ে উঠলেন দেশের ক্রিকেটেন এক নিন্দিত নাম। আশরাফুল জড়িয়ে পড়লেন ফিক্সিংয়ে!
২০০৪ সালে ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে নিজেদের শততম ওয়ানডেতে বাংলাদেশ হারিয়েছিল মহাশক্তিধর ভারতকে। অবিস্মরণীয় সেই জয়ের ম্যাচেই আশরাফুল প্রথমবার ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে পড়েছিলেন। আশরাফুলের দাবি অনুযায়ী, ওই ম্যাচের আগে ভারতীয় বাজিকর জাভেদের সঙ্গে তার পরিচয় করিয়ে দেন খালেদ মাসুদ পাইলট, খালেদ মাহমুদ সুজন এবং মোহাম্মদ রফিক। প্রথম চুক্তি হয়- ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটির প্রথম ১৫ ওভারে অন্তত ৬০ রান করতে হবে। ম্যাচে সেটি করতে পারায় আশরাফুল পান ৪ লাখ টাকা! সেই শুরু, এরপর আরও আন্তর্জাতিক ম্যাচ, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) এমনকী শ্রীলঙ্কা প্রিমিয়ার লিগেও (এলএসপিএল) স্পট ফিক্সিং করেছেন আশরাফুল। পেয়েছেন লক্ষ লক্ষ টাকা।
জুয়াড়িদের নির্দেশনা অনুযায়ী পারফর্ম করতে না পারায় বিপদেও পড়েছেন। ফেরত দিতে হয়েছে টাকা। ২০১০ সালে ভারতের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে সুনিল ভাটিয়া নামের এক ভারতীয় বুকি আশরাফুলকে স্পট ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দেয়। নির্দিষ্ট তিন ওভারে ৬ রান করার বিনিময়ে আশরাফুলকে অগ্রিম দেওয়া হয় ৭ লাখ টাকা। কিন্তু দুই ইনিংসেই আশরাফুল সেটি করতে ব্যর্থ হন। তাই সুনিল টাকা ফেরত চেয়ে চাপ দিতে থাকেন। ২০১২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে স্পট ফিক্সিং থেকে আয় করে সেই টাকা সুনিলকে ফেরত দিয়েছিলেন আশরাফুল!
আইসিসির তদন্তে বেরিয়ে আসে আশরাফুলের স্পট ফিক্সিংয়ের এমন অনেক ঘটনা। তদন্ত কমিটির কাছে সব কিছু স্বীকার করেন আশরাফুল। শাস্তি হিসেবে তাকে নিষিদ্ধ করা হয়। যদিও রফিক, পাইলট আর সুজন নিজেদের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছিলেন। বাংলাদেশের প্রথম সুপারস্টারের ক্যারিয়ার থেমে যায় এভাবেই। ২০১৮ সালে নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্ত হলেও আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা হয়নি আশরাফুলের। লোভের কাছে হার মেনেছিলেন তিনি। নিজেকে ঠেলে দিয়েছিলেন অন্ধকারের দিকে। বর্তমানে অবশ্য ক্রিকেটের সঙ্গেই আছেন আশরাফুল। একটি টিভি চ্যানেলে তাকে ক্রিকেট ম্যাচগুলো বিশ্লেষণ করতে দেখা যায়।
মন্তব্য করুন: