আমরা ক্রিকেটাররা হাসার চেয়ে বেশি কাঁদি: সৌম্য সরকার
২০ ডিসেম্বর ২০২৩
পারফর্ম করতে পারলে তালি, না পারলে গালি- বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের ক্রিকেটাঙ্গনের এটাই যেন চিরন্তন সত্য। ক্রিকেটারদের খারাপ সময়ে খুব বেশি মানুষ পাশে থাকে না। সবাই থাকে সমালোচনায় ব্যস্ত। সেই সময়টা একজন ক্রিকেটারের জন্য কতটা কঠিন হতে পারে, সেটা সৌম্য সরকার, লিটন দাস কিংবা নাজমুল হোসেন শান্তর চেয়ে বেশি কে জানেন। নেলসনে মহাকাব্যিক সেঞ্চুরির পর সেই কথাটাই যেন মনে করিয়ে দিলেন সৌম্য।
নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে বুধবার দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সৌম্য খেলেছেন ১৫১ বলে ২২ চার ২ ছক্কায় ১৬৯ রানের ইনিংস। পাঁচ বছর পর ওয়ানডে সেঞ্চুরি পেয়ে সৌম্য কৃতজ্ঞতা জানালেন সংশ্লিষ্ট সবাইকে। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে সৌম্য বললেন, “প্রথমত ধন্যবাদ দেব আমার পরিবারকে, আমার স্ত্রীকে সবসময় সমর্থন করার জন্য। সতীর্থরা তো আছেই। (জাতীয় দলে) আসার পর থেকে হাথুর সঙ্গে যতটা ব্যাটিং অনুশীলনের সুযোগ পেয়েছি, আমাকে খুব সহয়তা করেছে। ছোট ছোট জিনিসগুলো ধরিয়ে দিচ্ছে।”
অমিত সম্ভাবনা নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু হয়েছিল সৌম্যর। ভয়ডরহীন ব্যাটিংয়ের ট্রেডমার্ক হয়ে যাচ্ছিলেন। সেই সৌম্যই কেন এতটা অধারাবাহিক? সৌম্যর জবাব, “ক্রিকেট তো সবাই প্রতিদিন ভালো খেলবে না। যেমন একজন মানুষ প্রতিদিন ভালো খাবার আশা করে না, ক্রিকেটাররাও (প্রতিদিন ভালো পারফর্মেন্স) আশা করি না। আমরা ক্রিকেটাররা হাসার থেকে বেশি কাঁদি। কারণ, একটা সিরিজে কেউ হয়তো একটা-দুটো ম্যাচ ভালো খেলে বার খারাপ যায়। কিন্তু সেটা (ব্যর্থতা) নিয়ে পড়ে থাকলে আমরা নিজেরাই পিছিয়ে যাব। তাই পজিটিভ যা আছে, সেগুলো নিয়েই চিন্তা করা হয় বেশি। সামনে কীভাবে ভালো করা যায় সেদিকেই ফোকাস করা হয়। সেটা কতটা পারফেক্টলি করতে পারি, সেই পারফেকশন নিয়েই ম্যাচ খেলার চেষ্টা করি।”
খারাপ সময় যে কোনো ক্রিকেটারের জন্যই কঠিন। সৌম্য বছরের পর বছর সেই খারাপ সময় কাটিয়েছেন। নিজের কষ্টকর অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলেন, “প্রায় এক বছর আমার ফোনে কোনো নিউজ আসে নাই। এমন যদি কোনো ফেসবুক ফ্রেন্ড বা অন্য কেউ যদি থাকে, ক্রিকেট নিয়ে কথা বললে আমি তার সাথে থাকি না। যে পজিটিভ কথা বলে তার সাথেই থাকি। খারাপ খেললে তো ক্রিকেট ছেড়ে চলে যেতে পারব না, যেহেতু আমি ক্রিকেট খেলি। ক্রিকেট দিয়েই এতদূর আসা। পরিশ্রম করছি।”
সৌম্যকে নিয়ে সবচেয়ে বড় অভিযোগ তার অধরাবাহিকতা। আজ ভালো খেললেও আবার কবে তার ব্যাটে রান আসবে- তা অনিশ্চিত। সংবাদ সম্মেলনে তাই প্রশ্ন ওঠে পরবর্তী সেঞ্চুরি কবে আসবে? হাসতে হাসতে সৌম্য জবাব দেন, “পরের ম্যাচেই আসতে পারে।” শেষে ক্যারিয়ার নিয়ে আফসোসের কথাও শোনালেন সৌম্য, “আফসোস বলতে যেদিন জাতীয় দলে ঢুকেছিলাম, সেদিন থেকে অবশ্যই চাইনি যে এখান থেকে বের হয়ে যায়। নিজে থেকে তো খারাপ খেলতে চাইনি। এখন চাইব ভবিষ্যতে যেন এটা কন্টিনিউ করতে পারি। যতটুকু পারি চেষ্টা করব নিজের ওপর বিশ্বাস রেখে দলকে দিয়ে যাওয়ার।”
মন্তব্য করুন: