হাথুরুসিংহেই কি আজ সবচেয়ে খুশি?
২০ ডিসেম্বর ২০২৩
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে প্রতিভাবান ক্রিকেটাদের একজন সৌম্য সরকার আবার সবচেয়ে বড় আক্ষেপও। দলে থিতু হতে না পারা বাঁহাতি এই ব্যাটার আবার পরিচিত জাতীয় দলের কোচ চান্ডিকা হাথুরুসিংহের ‘প্রিয় শিষ্য’ হিসেবে। ক্রমাগত ব্যর্থতায় সমালোচনার তীর ধেয়ে যায় তাই শ্রীলঙ্কান কোচের দিকেও। তবে নিউ জিল্যান্ডে দ্বিতীয় ওয়ানডে শেষে ফল যাই হোক, কোচের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন সৌম্য।
দ্বিতীয় মেয়াদে হাথুরুসিংহে দলের কোচ হয়ে আসতেই ঘরোয়া লিগে বলার মতো পারফর্ম না করেই বিশ্বকাপের আগে নিউ জিল্যান্ড সিরিজে জাতীয় দলে ডাক পান সৌম্য। সেই সিরিজে এক ম্যাচে ব্যাট হাতে মাঠে নেমে শূন্য রানেই সাজঘরে ফেরেন তিনি। বিশ্বকাপে তাই সৌম্যকে নেওয়া হয়নি কোচের। হতাশার বিশ্বকাপ শেষে টিকে গেলেন হাথুরুসিংহে। আবারও সাদা বলের ক্রিকেটের লড়াইয়ে সেই কিউইদের বিপক্ষে সিরিজের দলে অপ্রত্যাশিতভাবে ডাক পেলেন সৌম্য। প্রথম ম্যাচে ব্যাট-বলে চরমভাবে ব্যর্থ এই অল-রাউন্ডার সুযোগ পেলেন দ্বিতীয় ম্যাচেও। এবারও ব্যর্থ হলে সৌম্যর চেয়ে বেশি সমালোচনায় পড়তেন কোচ নিজেই। তবে আরেকটি সুযোগ পেয়ে দুর্দান্ত এক শতক হাঁকিয়ে কোচের অগাধ আস্থার প্রতিদান সৌম্য দিলেন বেশ দুর্দান্তভাবেই। শিষ্য নিজেকে ফিরে পাওয়া সবচেয়ে খুশি বোধহয় তাই হাথুরুসিংহেই!
আরও পড়ুন: দুঃসময়ের প্রহর পেরিয়ে সৌম্য সরকারের পুনর্জন্ম
২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বাংলাদেশ দলে হাথুরুসিংহেরই প্রথম মেয়াদে অভিষেক হয় সৌম্যর। সেই এক ম্যাচের অভিজ্ঞতা নিয়েই ২০১৫ বিশ্বকাপ খেলতে যান তিনি। আসরে ৬ ম্যাচ খেলে এক ফিফটিতে ১৭৫ রান করে নিজের আগমনের জানান দেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। এরপরই দলের নিয়মিত ওপেনার হিসেবে যাত্রা শুরু করে সৌম্য পার করেন স্বপ্নের একটি বছর।
বিশ্বকাপ শেষে ঘরের মাঠে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিন সিরিজে ব্যাট হাতে রানের ফুলঝুড়ি ছড়ান সৌম্য। পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে ক্যারিয়ার প্রথম শতক হাঁকান তিনি। তার দুর্দান্ত ১২৭ রানের ওপর ভর করে পাকিস্তানকে প্রথমবারের মতো হোয়াইটওয়াশ করে টাইগাররা। আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তো সিরিজে পিছিয়ে থেকে এক সৌম্যর নৈপুণ্যে সিরিজ নিজেদের করে নেয় বাংলাদেশ। এই তিন সিরিজে ৯ ম্যাচে ব্যাট হাতে ১০৮ স্ট্রাইক-রেটে ৪৯৭ রান করেন সৌম্য।
কিন্তু এরপরেই যেন খেই হারিয়ে ফেলেন উদীয়মান এই ব্যাটার। পরের চার বছরে ৩৮ ইনিংসে ২৮ গড়ে ১ হাজার ৩৬ রান করেন। যেখানে ৭টি ফিফটি ও একটি সেঞ্চুরির মুখ দেখেন তিনি। এরপর থেকে দলে আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকায় থিতু হতে পারেননি। টপ-অর্ডার এই ব্যাটারকে খেলানো হয় বিভিন্ন পজিশনে।
২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর ওয়ানডেতে শেষ শতক হাঁকানোর পর ২০২৩ সালের ২০ ডিসেম্বরে এসে দেখা পেলেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় শতক। শুধু শতক হাঁকিয়েই থামেননি সৌম্য, ১৬৯ রানের ইনিংসে একই সঙ্গে ভেঙেছেন নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে এশিয়ার কোন ব্যাটার হিসেবে শচীন টেন্ডুলকারের সর্বোচ্চ ১৬৩* রানের রেকর্ড।
ম্যাচ শেষে কোচের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি সৌম্য। জানান, হাথুরুসিংহে তাকে অন্যদের চেয়ে ভালো বোঝে দেখেই হয়তো তিনি ভালো করছেন।
আরও পড়ুন: আমরা ক্রিকেটাররা হাসার চেয়ে বেশি কাঁদি: সৌম্য সরকার
সংবাদ সম্মেলনে বাঁহাতি এই ব্যাটার বলেন, “হয়তোবা তিনি আমাকে ভালো বোঝেন, এজন্য ছোট একটা জিনিস বলেছেন যা আমার জন্য ক্লিক করেছে। আমরা কীভাবে দেখি সেটা বড় বিষয়। একটা মানুষ হেঁটে গেলে তার মধ্যে অনেক নেগেটিভিটি পাবেন। আপনি যদি কেবল নেগেটিভিটি দেখতে চান, তাহলে নেগেটিভিটিই দেখবেন, পজিটিভ চিন্তা করলে পজিটিভ জিনিস পাবেন। হয়তো উনি পজিটিভ জিনিসটাই চিন্তা করেন।… হাথুরুসিংহে আসার পর তার সঙ্গে যতটুকু ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছি, তিনি অনেক সমর্থন যোগাচ্ছেন এবং ছোট ছোট জিনিস ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন আমার ভালোর জন্য।”
সৌম্য এই ফর্ম পরের ম্যাচগুলোতে নিয়ে যেতে পারলে বাংলাদেশ যেমন একজন এ যুগের ক্রিকেটের জন্য মানানসই একজন ওপেনার পাবে, তেমনি দুই মেয়াদে শিষ্যকে নিয়ে অসংখ্য চেষ্টায় অবশেষে সাফল্যের মুখ দেখবেন হাথুরুসিংহে।
মন্তব্য করুন: