সাকিব-তামিম ছাড়াই জিততে পারে বাংলাদেশ
২৩ ডিসেম্বর ২০২৩
সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল – সন্দেহাতীতভাবে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা দুই ক্রিকেটার। একজনের পরিচিতি যদি হয় বিশ্বসেরা অল-রাউন্ডার, অপরজন পরিচিত দেশসেরা ওপেনার হিসেবে। তাদের অভিষেকের পর বাংলাদেশের স্মরণীয় সব জয়েই কোনো না কোনোভাবে অবদান আছে এই দুই ক্রিকেটারের। তবে নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে বিষয়টি পুরোপুরি ভিন্ন। সাকিব ও তামিমকে ছাড়াই কিউইদের মাটিতে তাদেরকে বেশ দাপটের সঙ্গেই টেস্ট ও ওয়ানডেতে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
২০০১ সালের ডিসেম্বরে প্রথম কোনো সিরিজ খেলতে নিউ জিল্যান্ড সফরে যায় বাংলাদেশ দল। সেবার দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে কোনোরকম প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই ইনিংস ব্যবধানে হারে সদ্য টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া দলটি। এর ২০ বছর পর নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে বাংলাদেশ প্রথম কোনো জয়ের দেখা পায়। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে আসে বহু কাঙ্ক্ষিত সেই জয়। এর প্রায় দুই বছর পর সাদা বলের ক্রিকেটেও নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের মাটিতে প্রথম জয় দেখল বাংলাদেশ। মজার ব্যাপার হলো, এই দুটি ঐতিহাসিক জয়ের কোনোটিতেই ছিলেন না সাকিব-তামিম!
এখন পর্যন্তু নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের মাটিতে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে মোট ৩৯টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে সাকিব খেলেছেন ২০ ম্যাচে এবং তামিম ২৭টিতে। দুই ক্রিকেটার একই সঙ্গে মাঠে নেমেছেন মোট ১৮টি ম্যাচে। এর মধ্যে এক ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ম্যাচটি ছাড়া বাকি সবকটিতেই বেশ শোচনীয়ভাবে হেরেছে বাংলাদেশ।
টেস্টে নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে ব্যাট হাতে তামিম গড়ে ৪৭ করে রান তুললেও সাকিবসহ খেলা ৪ ম্যাচে তা নেমে আসে ত্রিশে। অন্যদিকে, নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে খেলা ৪ টেস্টেই ব্যাট হাতে একটি দ্বিশতক ও একটি শতকসহ আলো ছড়ালেও বল হাতে কেবল ৯ উইকেট নিয়েছেন সাকিব।
আর ১০ ওয়ানডেতে একসঙ্গে মাঠে নেমে ব্যাট হাতে সুবিধা করতে পারেননি সাকিব-তামিম কেউই। তিন ফিফটি আর ৩০ গড়ে তামিম ৩০৩ রান করলেও ১৮ গড়ে সাকিব করেছেন মাত্র ১৮২ রান। তবে বল হাতে বাঁহাতি এই স্পিনার শিকার করেছেন ১৭ উইকেট। দুটি ম্যাচ বাদে বাকি আট ম্যাচেই বাংলাদেশ হেরেছে ৫ বা তার বেশি উইকেট কিংবা ৫০ রানের চেয়ে বেশি ব্যবধানে।
এই দুই ক্রিকেটারকে ছাড়াও যে বাংলাদেশ বিদেশের মাটিতে জিততে পারে, তার প্রমাণ মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট। ঐতিহাসিক সেই টেস্টে নিউ জিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে ৩২৮ রানের জবাবে মাহমুদুল হাসান জয় (৭৮), নাজমুল হোসেন শান্ত (৬৪), অধিনায়ক মুমিনুল হক (৮৮) ও লিটন দাসের (৮৬) ব্যাটে চড়ে ৪৫৮ রানের বড় সংগ্রহ পেয়েছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে তো এক ইবাদত হোসেনের তোপে উড়ে যায় কিউইরা। ইনিংসে ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৬ উইকেট নেন ডানহাতি এই পেসার। আর বাংলাদেশ ম্যাচ জেতে ৮ উইকেটে।
এবার নেপিয়ারে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে কিউইদের গুঁড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। এরই সঙ্গে ঘুচেছে ১৬ বছরের অপেক্ষা এবং ১৮ ম্যাচে জয় না পাওয়ার হতাশা। টেস্টের মতো এই ম্যাচ জয়েও বড় অবদান রাখেন পেসাররা। দুই তরুণ শরিফুল ইসলাম ও তানজিম হাসান সাকিব উভয়েই আগুন ঝরানো বোলিংয়ে ৩টি করে উইকেট নেন। এরপর পার্টটাইম মিডিয়াম পেসার সৌম্য সরকারও ৩ উইকেট নিলে মাত্র ৯৮ রানেই গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা। বাংলাদেশ ম্যাচ জিতে নেয় ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে।
ক্রিকেটপ্রেমীরা এখন বলতেই পারেন, দেশ বা বিদেশের মাটিতে ম্যাচ জয়ের জন্য সাকিব-তামিম আর অপরিহার্য নন। তাদেরকে ছাড়াই জিততে পারে বাংলাদেশ। গড়তে পারে ইতিহাস। তারুণ্য নির্ভর দলটি এখন মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটের পরবর্তী প্রজন্ম নিয়ে আর শঙ্কার অবকাশ আছে বলে মনে হয় না।
মন্তব্য করুন: