২০২৩: ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ভুলে যাওয়ার মতো বছর
২৪ ডিসেম্বর ২০২৩
বাংলাদেশ-নিউ জিল্যান্ডের ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে শেষ হয়েছে ২০২৩ সালে ছেলেদের একদিনের ক্রিকেটের লড়াই। সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে কিউইদের মাটিতে তাদেরকে প্রথমবারের মতো ৫০ ওভারের ক্রিকেটে হারিয়ে বছরটা শেষ করলেও ব্যাট-বলের লড়াইয়ে এই ফরম্যাটে চুড়ান্তরূপে ব্যর্থ ছিল টাইগাররা। সিরিজ জয়ের দিক দিয়ে হোক কিংবা বৈশ্বিক কোনো আসরে, কোথাও উল্লেখযোগ্য সাফল্য পায়নি লাল-সবুজের দলটি। ২০২২ সালের সঙ্গে তুলনা করলে ওয়ানডেতে বেশ ব্যর্থ একটা বছরই পার করেছে বাংলাদেশ।
বছরজুড়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অনুষ্ঠিত রেকর্ড ২১৮ ওয়ানডের মধ্যে বাংলাদেশ খেলেছে ৩১টি ম্যাচ। নিজেদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ওয়ানডে খেলার বছরে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতেছে মাত্র ১১টি। যার মধ্যে তুলনামূলক দুর্বল প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেই জয় পেয়েছে ৪ ম্যাচে। আর বছরে খেলা ছয়টি সিরিজের যে দুটিতে জয় পেয়েছে সেটিও এসেছে এই আইরিশদের বিপক্ষেই।
অন্যদিকে, ২০২২ সালে খেলা ১৫ ওয়ানডের ১০টিতেই জয় পেয়েছিল টাইগাররা। পাঁচটি সিরিজের চারটিই নিজেদের করে নিয়েছিল তারা। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথমবারের মতো সিরিজ জয়ের স্বাদও পায় সে বছর। আর বছরটা শেষ হয় ঘরের মাঠে ভারতকে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হারিয়ে।
আরও পড়ুন: ২০২৩: টেস্টে বাংলাদেশের সাফল্যমণ্ডিত বছর
এক দিনের ক্রিকেটে এরকম দুর্দান্ত একটা বছর পার করার পর সমর্থকদের মাঝেও আশা জাগে ২০২৩ হয়তো ভালো কিছু অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের জন্য। কিন্তু এশিয়া কাপ ও ভারত বিশ্বকাপে তার কিছুই করতে পারেনি টাইগাররা। দেশের ক্রিকেট ভক্ত ও অনুরাগীদের হতাশ করে মাত্র ২ জয় নিয়ে নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে বিশ্বকাপ অভিযান শেষ করে সাকিব আল হাসানের দল। আসরে আইসিসির সহযোগী দেশ নেদারল্যান্ডসের কাছেও চলতি বছরে নিজেদের সর্বনিম্ন ১৪২ রানে অল-আউট হয়ে হেরেছিল ৮৭ রানের বড় ব্যবধানে।
বিশ্বকাপে ব্যর্থতার সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে বলা হয় দলের হতাশাজনক ব্যাটিং পারফরমেন্স। আসরের সেরা ২৫ জন রান-সংগ্রহকের মধ্যে ছিলেন না একজন বাংলাদেশিও। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩২৮ রান করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। আর ৯ ম্যাচের বিশ্বকাপে দল আড়াইশর গণ্ডি পেরুতে পেরেছিল মাত্র তিনবার!
এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ ছাড়া ব্যক্তিগত পারফরমেন্সে বেশ ভালো করেছে বাংলাদেশের ব্যাটাররা। ২০২৩ সালে নাজমুল হোসেন শান্ত একাই করেছেন ৯৯২ রান। ২৬ ইনিংসে ৪১ দশমিক ৩৩ গড় এবং ৮ অর্ধ-শতক ও ২ শতকে এই রান করেন তিনি। সমান সংখ্যক ইনিংসে পরের অবস্থানে থাকা মুশফিকুর রহিম করেছেন ৮৪৬ রান।
তবে ব্যাট হাতে দল ও সমর্থকদের সবচেয়ে বেশি হতাশ করেছেন লিটন দাস। ২০২২ সালে দলের সর্বোচ্চ রান-সংগ্রাহক ডানহাতি এই ব্যাটার এ বছর ২৮ ইনিংসে করেন ৬৫১ রান। বেশির ভাগ ম্যাচেই ভালো শুরু পাওয়ার পরেও নিজের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন। এই ২৮ ইনিংসে পাঁচটি ফিফটি হাঁকালেও গড়েছেন একটি লজ্জার রেকর্ডও। টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর ক্রিকেটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ পাঁচবার শূন্য রানে সাজঘরে ফিরেছেন ডানহাতি এই ব্যাটার।
বোলিংয়ের দিক দিয়ে বছর জুড়ে আলো ছড়িয়েছেন বাংলাদেশের পেসাররা। ২০২৩ সালে উইকেট শিকারের দিক দিয়ে শীর্ষ পাঁচজনের তিনজনই হলেন পেসার। ১৯ ইনিংসে ৩২ উইকেট নিয়ে এই তালিকার শীর্ষে আছেন শরিফুল ইসলাম। যেখানে গত বছর ১০ ইনিংসে ১২ উইকেট নিয়ে এই তালিকার পাঁচ নম্বরে ছিলেন বাঁহাতি এই পেসার।
অপরদিকে, ১৭ ইনিংসে ২৬ উইকেট নিয়ে বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হয়েছেন গতি তারকা তাসকিন আহমেদ। আর গত বছরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী মেহেদী হাসান মিরাজ নিয়েছেন ২৩ উইকেট।
বছর জুড়ে নানা আলোচনা ও সমালোচনার মধ্যমণি ছিলেন সাকিব আল হাসান। তবে মাঠের পারফরমেন্সে নিজের সেরাটাই দিয়েছেন এই বিশ্বসেরা অল-রাউন্ডার। এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেওয়া সাকিব এ বছর ২৩ ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে মাঠে নামেন। ব্যাট হাতে দলের হয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ ৭৩৫ রান করার পাশাপাশি বল হাতে চতুর্থ সর্বোচ্চ ২৩ উইকেট শিকার করেন বাঁহাতি এই অল-রাউন্ডার।
মন্তব্য করুন: