একটা আইফোনের লোভ সামলাতে পারলেন না নাসির?

১৭ জানুয়ারি ২০২৪

একটা আইফোনের লোভ সামলাতে পারলেন না নাসির?

পাঁচ বছর ধরে জাতীয় দলের ধারেকাছেও তাকে দেখা যায় না। বিশ্বের অখ্যাত সব ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগে খেলে বেড়ান। ওসব লিগে কোনো ক্রিকেটার নাম লেখালেই লোকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকায়। কারণ সেখানে খেলার চেয়ে জুয়াটাই বেশি হয়। অনেক ক্ষেত্রে স্রেফ জুয়া খেলার জন্যই এসব লিগের আয়োজন করা হয়। নাসির হোসেনও আবু ধাবি টি-টেন লিগ খেলতে গিয়ে আইফোনের লোভে পড়লেন। তারপর নিষিদ্ধ হলেন দুই বছরের জন্য!

অথচ একটা সময় নাসির হোসেন ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অটোচয়েস। সাত বা আট নম্বরে নেমে ধুমধারাক্কা ব্যাটিং আর অফ স্পিনে প্রয়োজনের সময় উইকেট তুলে নিতে নাসিরের জুড়ি ছিল না। ফিনিশার তকমাটা তার নামের সঙ্গে পাকাপাকি যুক্ত হয়ে গিয়েছিল। সেইসঙ্গে ক্ষিপ্রগতির ফিল্ডিং তাকে ব্যাপক পরিচিতি পাইয়ে দেয়। পারফর্মন্সের পাশাপাশি দুষ্টুমিতেও নাসির ছিলেন সেরা। খেলার মাঝে নানান হাস্যকর কাণ্ড ঘটিয়ে সবাইকে মাতিয়ে রাখতেন। কিন্তু এত সুখ যেন নাসিরের কপালে সইল না!

জাতীয় দলের জার্সিতে ১৯টি টেস্ট, ৬৫টি ওয়ানডে আর ৩১টি টি-টুয়েন্টি খেলা নাসির অচিরেই লাইনচ্যুত হয়ে পড়েন। মাঠের চেয়ে মাঠের বাইরে নানা নেতিবাচক কাজে জড়িয়ে শিরোনামে আসতে থাকেন। এর মাঝে সিংহভাগই নারীঘটিত ব্যাপার। স্বাভাবিকভাবেই মাঠের পারফর্মেন্সে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ফর্ম হারিয়ে একাদশ থেকে ছিটকে যান নাসির। একসময় বাদ পড়েন জাতীয় দল থেকে। এরপর আর তাকে জাতীয় দলের আশেপাশেও দেখা যায়নি।

বিপিএলের গত আসরে দারুণ পারফর্মেন্স করেছিলেন নাসির। তখনকার দল ঢাকা ডমিনেটরসের হয়ে ১২ ম্যাচে ৪৫.৭৫ গড়ে ৩৬৬ রানের পাশাপাশি বল হাতে ১৪.৬ গড়ে নেন ১৬ উইকেট। এমন পারফর্মেন্সের পরও তাকে জাতীয় দলের বিবেচনায় আনা হয়নি। এর পেছনে একটাই কারণ- নাসিরের উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাত্রা। এভাবেই নিজের উজ্জ্বল ক্যারিয়ার নিজেই ধ্বংস করেছেন নাসির। ব্যাক্তিজীবনে বিতর্কের পর বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। এবার জড়ালেন ফিক্সিং বিতর্কে।

২০২১ সালে টি টেন লিগে খেলতে গিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজির পক্ষ থেকে নাসিরসহ ৮ ক্রিকেটারকে আইফোন-১২ ‘উপহার’ দেওয়া হয়। যার একেকটির দাম ৭৫০ ডলারের বেশি। আইসিসির নিয়মানুযায়ী, ৭৫০ ডলারের বেশি কোনো উপহার পেলে সাথে সাথে আকসুকে জানাতে হবে। কিন্তু নাসির সেটা করেননি। নাসিরের বিরুদ্ধে বাকি দুটি অভিযোগ হল – ডিএসিওকে দুর্নীতিমূলক আচরণে জড়িত হওয়ার জন্য কোনো প্রস্তাব তিনি পেয়েছিলেন কি না তা বিস্তারিতভাবে জানাতে ব্যর্থ হওয়া এবং সম্ভাব্য দুর্নীতি নিয়ে ডিএসিও পরিচালিত তদন্তে কোনো যুক্তি ছাড়াই সহযোগিতা করতে ব্যর্থ হওয়া বা অস্বীকৃতি জানানো।

শেষ পর্যন্ত সব অভিযোগ স্বীকার করে নেওয়ায় নাসিরকে ২ বছরের জন্য সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬ মাসের সাজা আপাতত স্থগিত থাকবে। এই ঘটনার পর নাসিরের ভক্তরা স্বাভাবিকভাবেই হতাশ। তাদের বক্তব্য, সামান্য একটা আইফোনের লোভ সামলাতে পারলেন না নাসির? আসলে নাসির অনেক ক্ষেত্রেই নিজেকে সামলাতে পারেন না। নাহলে এমন সম্ভাবনাময় আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার কীভাবে তিনি নিজের হাতে ধ্বংস করলেন? একজন ক্রিকেটারের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের কাছে এসব টি-টেন লিগ বা আইফোন-১২ তো অতি তুচ্ছ।

মন্তব্য করুন: