যে তিন বাংলাদেশি ক্রিকেটারকে নিষিদ্ধ করেছে আইসিসি
১৭ জানুয়ারি ২০২৪

বাংলাদেশের ক্রিকেটে ফের কলঙ্কজনক অধ্যায়ের জন্ম দিলেন নাসির হোসেন। আবু ধাবির টি-টেন লিগে দুর্নীতির অভিযোগে তাকে দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আইসিসি। তবে নাসিরই প্রথম নন, এর আগে দেশের দুই সুপারস্টার ক্রিকেটারকেও দুর্নীতির অভিযোগে আইসিসি নিষিদ্ধ করেছিল। তারা হলেন মোহাম্মদ আশরাফুল এবং সাকিব আল হাসান।
মোহাম্মদ আশরাফুল
২০১৪ সালের ১৮ জুন। বাংলাদেশের ক্রিকেটে তোলপাড় পড়ে যায় আইসিসির একটি ঘোষণায়। বিপিএলে স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে এই দিনেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রথম সুপারস্টার মোহাম্মদ আশরাফুলকে নিষিদ্ধ করে আইসিসি। প্রাথমিকভাবে ৮ বছরের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলেও পরে সেটা কমিয়ে ৫ বছর করা হয়। আইসিসির তদন্তে বেরিয়ে আসে একের পর এক থলের বেড়াল। তদন্তকারীদের কাছে আশরাফুল নিজের অপরাধ স্বীকারও করে নেন। জানা যায় শুধু বিপিএলই নয়, আন্তর্জাতিক ম্যাচেও ফিক্সিং করেছেন আশরাফুল! তার মানে দেশের সাথে বেঈমানী। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সেই আশরাফুল ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরলেও নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। তাই জাতীয় দলে ফেরার প্রশ্নই আসে না।
আরও পড়ুন : বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রথম সুপারস্টার থেকে নিন্দিত ‘স্পট ফিক্সার’
সাকিব আল হাসান
বাংলাদেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে বিস্ফোরক ঘটনা ছিল বিশ্বের অন্যতম সেরা অল-রাউন্ডার সাকিব আল হাসানের ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে পড়া। না, তিনি ফিক্সিং করেননি বা তার ফিক্সিংয়ের কোনো ঘটনা প্রমাণিত হয়নি। তবে ভারতের একজন জুয়াড়ির সঙ্গে সাকিবের হোয়াটসঅ্যাপের কথোপকথন চলে যায় আইসিসির হাতে। ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থার নিয়মানুযায়ী, ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পাওয়া মাত্র সংশ্লিষ্ট ক্রিকেট বোর্ড এবং আইসিসির দুর্নীতি বিরোধী শাখাকে (আকসু) অবহিত করতে হবে। সাকিব এর কোনোটাই করেননি। বরং সেই জুয়াড়ির সঙ্গে কথোপকথন চালিয়ে গেছেন! এই অপরাধে ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর সাকিব আল হাসানকে দুই বছরের জন্য সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করে আইসিসি। যার মধ্যে এক বছর ছিল স্থগিত নিষেধাজ্ঞা। সেই নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সাকিব ফের ক্রিকেটে ফিরেছেন। এখন তিনি বাংলাদেশের তিন ফরম্যাটের অধিনায়ক।
আরও পড়ুন : একটা আইফোনের লোভ সামলাতে পারলেন না নাসির?
নাসির হোসেন
ফিক্সিং কেলেঙ্কারির সর্বশেষ সংযোজন নাসির হোসেন। একসময়ের সম্ভাবনাময় এই অল-রাউন্ডার নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের বারোটা বাজিয়েছেন আগেই। গত পাঁচ বছর ধরে তিনি জাতীয় দলের আশেপাশেও নেই। যে কারণে বিশ্বের অখ্যাত সব ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগে খেলে বেড়াতেন। ওসব লিগে কোনো ক্রিকেটার নাম লেখালেই লোকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকায়। কারণ সেখানে খেলার চেয়ে জুয়াটাই বেশি হয়। অনেক ক্ষেত্রে স্রেফ জুয়া খেলার জন্যই এসব লিগের আয়োজন করা হয়। নাসির হোসেনও আবু ধাবি টি-টেন লিগ খেলতে গিয়ে আইফোনের লোভে পড়লেন।
২০২১ সালে টি টেন লিগে খেলতে গিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজির পক্ষ থেকে নাসিরসহ ৮ ক্রিকেটারকে আইফোন-১২ ‘উপহার’ দেওয়া হয়। যার একেকটির দাম ৭৫০ ডলারের বেশি। আইসিসির নিয়মানুযায়ী, ৭৫০ ডলারের বেশি কোনো উপহার পেলে সাথে সাথে আকসুকে জানাতে হবে। কিন্তু নাসির সেটা করেননি। নাসিরের বিরুদ্ধে বাকি দুটি অভিযোগ হল – ডিএসিওকে দুর্নীতিমূলক আচরণে জড়িত হওয়ার জন্য কোনো প্রস্তাব তিনি পেয়েছিলেন কি না তা বিস্তারিতভাবে জানাতে ব্যর্থ হওয়া এবং সম্ভাব্য দুর্নীতি নিয়ে ডিএসিও পরিচালিত তদন্তে কোনো যুক্তি ছাড়াই সহযোগিতা করতে ব্যর্থ হওয়া বা অস্বীকৃতি জানানো। এসব অভিযোগে গত ১৬ জানুয়ারি নাসিরকে দুই বছর সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। যার মধ্যে ছয় মাসের স্থগিত নিষেধাজ্ঞা আছে।
মন্তব্য করুন: