‘ফিক্সিং’ সন্দেহেই শোয়েব মালিকের বিপিএল শেষ
২৫ জানুয়ারি ২০২৪
তৃতীয় স্ত্রীর সঙ্গে সময় কাটাতে দুই দিনের ছুটি নিয়ে দুবাই গেলেন। সেখান থেকে জানালেন, ফিরতে আরও দেরি হবে। অতঃপর নাটকীয়ভাবে বিপিএল থেকে বিদায় ঘটল ফরচুন বরিশালের পাকিস্তানি অল-রাউন্ডার শোয়েব মালিকের। বিপিএলের ঢাকা পর্বের একটি ম্যাচে তার ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকা নিয়ে সন্দেহ ওঠায় বরিশাল চাচ্ছিল না শোয়েবকে আর খেলাতে। এক পর্যায়ে পাকিস্তানি অল-রাউন্ডার নিজেই সেই সুযোগটা তৈরি করে দেন।
আরও পড়ুন : শোয়েবের ‘ফিক্সিং’ নিয়ে বরিশাল মালিকের সুর বদল
গত ২২ জানুয়ারি সোমবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে খুলনা টাইগার্সের মুখোমুখি হয়েছিল ফরচুন বরিশাল। সেই ম্যাচে খুলনার ইনিংসের চতুর্থ ওভারে শোয়েব মালিক তিনটি বড় বড় ‘নো বল’ করেন! তখনই প্রশ্ন ওঠে যে- একজন অফস্পিনার কীভাবে একই ওভারে তিনটি ‘নো বল’ করতে পারেন? ওভারটিতে তিনটি ‘নো বল’ সহ দুই চার ও এক ছক্কায় ১৮ রান দেন মালিক। মূলতঃ ওই ওভারেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় খুলনা। শেষ পর্যন্ত ১৮৭ রান টপকে তারা জিতে যায় ৮ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে।
ওই ম্যাচে শোয়েব মালিককে দিয়ে আর বোলিং করাননি বরিশাল অধিনায়ক তামিম ইকবাল। শুধু তাই নয়, এরপর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষেও তাকে দিয়ে বোলিং করানো হয়নি। বরিশাল ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিক মিজানুর রহমান ‘নট আউট নোমান’কে জানান, দলের ক্রিকেটার, কোচ এবং মালিকপক্ষের সবাই মনে করছেন যে, ওই তিনটি নো বলের পেছনে কোনো ‘ঘটনা’ আছে। সেই ‘ঘটনা’ যে ফিক্সিং নিয়ে- তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এ কারণে টিম ম্যানেজম্যান্টের সিদ্ধান্ত ছিল, শোয়েবকে দিয়ে আর বোলিং করানো হবে না। শুধু তাই নয়, সেই তিন নো বলের ম্যাচ শেষে ডাগ আউটে শোয়েবকে ধমকেছিলেন বরিশালের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর ডেভ হোয়াটমোর। এই খ্যাতিমান কোচেরও সন্দেহ, ওই তিন নো বলের পেছনে কোনো গোলমেলে ব্যাপার আছে!
প্রশ্ন উঠতে পারে, বরিশাল ফ্র্যাঞ্চাইজির যদি ফিক্সিংয়ের সন্দেহ হয়, তাহলে তারা কেন শোয়েব মালিককে আরও একটি ম্যাচে মাঠে নামাল? আসলে শোয়েবের সঙ্গে বরিশালের চুক্তি ছিল ৯ ম্যাচের। তাই বরিশাল যদি মালিককে দুই ম্যাচ খেলিয়ে বিদায় দিত, তাহলে নিয়মানুযায়ী চুক্তির সমস্ত টাকাই তাকে পরিশোধ করতে হতো। পাশাপাশি জরিমানারও আশংকা ছিল। এতে শোয়েবের বদলি আনার ক্ষেত্রে আর্থিক সংকটে পড়ত ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। তাই বিষয়টা নিয়ে তারা দোটানায় ছিল। অতঃপর সুযোগটা তৈরি করে দিলেন শোয়েব মালিক নিজেই।
গত ২৩ জানুয়ারি মঙ্গলবার বিপিএলের ঢাকা পর্ব শেষ হয়। এরপর দুবাইয়ে নববিবাহিত স্ত্রীর (তৃতীয় স্ত্রী সানা জাভেদ) সঙ্গে সময় কাটাতে দু’দিন ছুটি নেন শোয়েব। বিমানের টিকিটও কেটে দেওয়া হয় বরিশালের পক্ষ থেকে। ২৫ জানুয়ারি সিলেটে গিয়ে দলের সঙ্গে যোগ দেওয়ার কথা শোয়েবের। কিন্তু এদিন দুপুরে হুট করেই বরিশালের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শোয়েব আর বিপিএলের বাকি সময়টা খেলবেন না। পরে ফ্র্যাঞ্চাইজিটির সূত্র জানায়, দুবাই থেকে শোয়েব মালিক আবদার করেছিলেন, তিনি ৬ ফেব্রুয়ারির দিকে দলের সঙ্গে যোগ দিতে চান। অর্থাৎ, তিনি মাঝের ম্যাচগুলোতে খেলতে অপারগ। এই সুযোগটাই নেয় বরিশাল। যেহেতু খেলোয়াড়ের পক্ষ থেকে আপত্তি এসেছে, তাই চুক্তি শেষ করে দেয় ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। অবশ্য এর আগেই তাকে ঢাকা পর্বের তিন ম্যাচের টাকা পরিশোধ করে দিয়েছিল বরিশাল।
আরও পড়ুন : শোয়েবের ‘ফিক্সিং’ নিয়ে বরিশাল মালিকের সুর বদল
শোয়েব মালিকের জায়গায় বরিশালে যোগ দিতে আসছেন আরও দুই পাকিস্তানি আহমেদ শেহজাদ এবং আকিফ জাভেদ। তার চেয়েও বড় কথা, শোয়েবের সঙ্গে চুক্তি মাঝপথেই শেষ হওয়ায় হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে বরিশাল। ইতোমধ্যেই তারকাবহুল দলটি নিজেদের প্রথম তিন ম্যাচের দুটিতে হেরে কিছুটা বেকায়দায় আছে। সিলেট পর্বে আছে আরও তিনটি ম্যাচ। তার আগে দলটির মালিকপক্ষ থেকে শুরু করে অধিনায়ক এবং কোচিং স্টাফ সবাই একমত- ৪১ বছর বয়সী শোয়েবকে তাদের আর প্রয়োজন নেই। তাই শোয়েব মালিক যখন দুবাই থেকে বললেন, লিগ পর্বের শেষ তিন ম্যাচ ‘ফ্রি’তে খেলে দেবেন, তাতেও রাজি হয়নি বরিশাল কর্তৃপক্ষ।
শোয়েব মালিকের সেই তিনটি ‘নো বল’ নিয়ে দেশ-বিদেশের মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড় চলছে। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো বক্তব্য দেয়নি বিসিবি কিংবা বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল। তাছাড়া বরিশাল ফ্র্যাঞ্চাইজির পক্ষ থেকে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো অভিযোগও দায়ের করা হয়নি।
মন্তব্য করুন: