বয়সকে তুড়ি মেরে বল হাতে ছুটছেন অ্যান্ডারসন
৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
কথায় বলে বয়স একটা সংখ্যা মাত্র। আত্মবিশ্বাস ও উদ্যম থাকলে যে কোনো বয়সে, যে কোনো কিছু করে দেখানো সম্ভব। তবে ক্রিকেটের মতো খেলায় যে কোনো খেলোয়াড়ের জন্য একটা সময় পর বয়স বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী এক উদাহরণ তৈরি করেছেন ইংল্যান্ডের জেমস অ্যান্ডারসন। ৪১ বছর বয়সেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আলোর ঝলকানি দেখিয়ে চলেছেন ডানহাতি এই পেসার। শুধু কি তাই, এখন পর্যন্ত জাতীয় দলে খেলেছেন তিন প্রজন্মের ক্রিকেটারের সঙ্গেও।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অ্যান্ডারসনের পথচলার শুরু ২০০২ সালের ১৫ ডিসেম্বর, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডেতে। আর পরের বছর ২২ মে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঐতিহাসিক লর্ডসে সাদা পোশাকে অভিষেক হয় এই পেসারের। অভিষেক ইনিংসেই ৫ উইকেট নিয়ে জানান দেন টেস্ট ক্রিকেটে নিজের আগমনী বার্তা। তবে ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর এই ফরম্যাটে আর মাঠে নামেননি ২৬৯ উইকেট শিকার করা অ্যান্ডারসন।
২০০৩ সালে টেস্টে অভিষেকের পর থেকে এখন পর্যন্ত তিনটি ভিন্ন প্রজন্মের ইংলিশ ক্রিকেটারের সঙ্গে মাঠে নেমেছেন অ্যান্ডারসন। যেখানে রয়েছে ষাটের দশকে জন্ম নেওয়া খেলোয়াড় থেকে শুরু করে তার অভিষেকের পরে জন্ম নেওয়া ক্রিকেটারও। দুই দশকেরও বেশি লম্বা ক্যারিয়ারে আটজন অধিনায়কের নেতৃত্বে খেলেছেন তিনি।
টেস্ট ও ওয়ানডেতে অ্যান্ডারসনের ক্যারিয়ারের শুরুটা হয় নাসের হুসেইনের নেতৃত্বে। সাবেক এই ইংলিশ অধিনায়কের যখন অভিষেক হয়, তখন ইংল্যান্ডের ভবিষ্যৎ বোলিং আক্রমণের নেতা ছিলেন সবে ৭ বছরের এক শিশু। নাসেরের নেতৃত্বে খেলা ৩ টেস্টে ১২ উইকেট শিকার করেন অ্যান্ডারসন। অন্যদিকে, সতীর্থ হিসেবে অ্যান্ডারসনের চেয়ে সবচেয়ে বড় ছিলেন অ্যালেক স্টুয়ার্ট। ১৯ বছরের বড় সাবেক এই উইকেটরক্ষকের সঙ্গে দুই ফরম্যাট মিলিয়ে মোট ২১ ম্যাচে মাঠে নামেন অ্যান্ডারসন।
টেস্ট ক্রিকেটে অ্যান্ডারসনের সমসাময়িক খেলোয়াড়দের মধ্যে তাকে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন অ্যালিস্টার কুক। বাঁহাতি এই ব্যাটারের অধীনে ৪৯ ম্যাচে প্রায় ২৬ গড়ে ১৯১ উইকেট নেন অ্যান্ডারসন। আর বর্তমান অধিনায়ক বেন স্টোকসের অধীনে এখন পর্যন্ত খেলা ১৬ টেস্টে শিকার ৫৬ উইকেট।
তবে অ্যান্ডারসনের ক্যারিয়ারের সম্ভবত সবচেয়ে মজার বিষয় হলো তার টেস্ট অভিষেকের পরে জন্ম নেওয়া সবচেয়ে ক্রিকেটারের সঙ্গে মাঠে নামা। ভারতের বিপক্ষে বিশাখাপত্তনম টেস্টে তার সঙ্গী হিসেবে মাঠে নেমেছেন ২০০৩ সালের ১৩ অক্টোবর জন্ম নেওয়া শোয়েব বশির এবং ২০০৪ সালের ১৩ আগস্ট জন্ম নেওয়া রেহান আহমেদ। এই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে এই তিন বোলারই নিয়েছেন তিনটি করে উইকেট। এছাড়াও ইংল্যান্ড টেস্ট দলের কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালামের সাদা পোশাকে অভিষেক হয়েছিল অ্যান্ডারসনের অভিষেকের প্রায় এক বছর পর ২০০৪ সালে।
২১ বছরের ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত ১৮৪ টেস্টে মাঠে নেমেছেন অ্যান্ডারসন। সাড়ে ২৬ গড়ে শিকার ৬৯৩ উইকেট। যার মধ্যে রয়েছে ৩২টি ৫ উইকেট ও তিনবার এক ম্যাচে ১০ উইকেট শিকারের কীর্তি। আগামী জুনে ৪২ বছর বয়সে পা রাখবেন কিংবদন্তি এই পেসার। টেস্ট ক্রিকেটের তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি এই বোলারের সামনে আছে শুধুই দুই স্পিন কিংবদন্তি মুত্তিয়া মুরালিধরন (৮০০) ও শেন ওয়ার্ন (৭০৮)। এখন দেখার বিষয় ক্যারিয়ার শেষে নিজেকে আরও কতটা উপরে নিয়ে যেতে পারেন অ্যান্ডারসন।
মন্তব্য করুন: