ভারতের ‘অস্ট্রেলিয়া ভীতি’র আদ্যোপান্ত
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
ক্রিকেট বিশ্বে সবচেয়ে শক্তিশালী দলগুলোর তালিকা করলে অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের নাম সবসময় সেরা তিনের মধ্যেই থাকবে। কিন্তু ক্রিকেটের বৈশ্বিক আসরগুলোতে একে-অপরের মুখোমুখি হলে সেই শক্তিমত্তার মধ্যে যেন আকাশ-পাতাল পার্থক্য দেখা যায়। বিশেষ করে নক-আউট পর্বের ম্যাচগুলোতে তো অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হলেই ভারতকে যেন জুজুর ভয় চেপে ধরে। তবে এক্ষেত্রে এতদিন ব্যতিক্রম ছিল ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দল। কিন্তু ২০২৪ যুব বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে বিধ্বস্ত হয়ে বড়দের মতো তারাও শিরোপা হাতছাড়া করেছে।
এখন পর্যন্ত আইসিসির বৈশ্বিক আসরগুলোর নক-আউট পর্বে ভারতের যুব দল ও জাতীয় দল সব মিলিয়ে মোট ১২ বার অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয়েছে। এই ১২ বারের দেখায় ভারত ৭ বার জয়লাভ করলেও এর ৪টিই এসেছে যুব দলের কল্যাণে। বাকিগুলো এসেছে ২০০০ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমি-ফাইনাল, ২০০৭ সালের প্রথম টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে এবং ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে। কিন্তু গত এক বছরের হিসেব করলে, ফাইনালে তিনবার অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয়ে তিনবারই বিধ্বস্ত হয়েছে ভারতীয়রা।
সাম্প্রতিক সময়ে নক-আউট পর্বে ভারতের অস্ট্রেলিয়া ভীতির শুরুটা হয়েছিল ২০২৩ বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল থেকে। ২০২১-২৩ টেস্ট চক্রের সেরা দুই দল হিসেবে টুর্নামেন্টের ফাইনালে ওঠে অস্ট্রেলিয়া ও ভারত। পুরো চক্রে নিজেদের অধিপত্য বিস্তার করে খেলতে থাকা ভারতীয়রা ফাইনালে স্টিভ স্মিথ, ট্র্যাভিস হেড, মিচেল স্টার্ক ও প্যাট কামিন্সদের সামনে মুখ থুবড়ে পড়ে। অজি বোলারদের দাপটে ২০৯ রানে হেরে শিরোপা হাতছাড়া করে রোহিত শর্মার দল।
এরপর ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে দিয়ে আসর শুরু করে ভারত। দুর্দান্ত প্রতাপের সঙ্গে পুরো টুর্নামেন্টে একের পর এক দলকে হারিয়ে শিরোপার বড় দাবিদার হয়েই ফাইনালে উঠেছিল স্বাগতিকরা। কিন্তু ফাইনালে এসেই রোহিতের দলকে আবারও সেই অস্ট্রেলিয়া জুজু পেয়ে বসে। মূলত কামিন্সের ক্ষুরধার মস্তিষ্কের অধিনায়কত্ব এবং হেডের বিধ্বংসী শতকে ঘরের মাঠে তাদের বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের স্বপ্নভঙ্গ হয়।
অন্যদিকে, ২০২৪ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের আগে নক-আউট পর্বে ভারতকে কখনোই হারাতে পারেনি অজি যুবারা। এমনকি মাইকেল ক্লার্ক, শেন ওয়াটসন ও মিচেল জনসনদের নিয়ে গড়া দলও পরাস্ত হয়েছিল মোহাম্মদ কাইফ ও যুবরাজ সিংকে নিয়ে গড়া ভারতের কাছে। ২০১২ এবং ২০১৮’র আসরেও অস্ট্রেলিয়া যুবাদের হারিয়ে শিরোপা উল্লাসে মেতেছিল তারা। কিন্তু এবারের দক্ষিণ আফ্রিকা আসরে দাপটের সঙ্গে ফাইনালে ওঠা ভারতীয়রা অজিদের সামনে আর দাঁড়াতেই পারেনি। ঠিক যেমনটা তাদের সিনিয়র দল পারেনি কামিন্স-হেডদের সামনে দাঁড়াতে।
বিশ্ব মঞ্চে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ভারতের এরকম অসহায় আত্মসমর্পণ নতুন কিছু নয়। ২০০৩ বিশ্বকাপ ফাইনালে রিকি পন্টিংয়ের বিধ্বংসী শতকের কাছে হার মানতে হয়েছিল সৌরভ গাঙ্গুলীর দলকে। এরপর ২০১৫’র আসরের সেমি-ফাইনালে মহেন্দ্র সিং ধোনির দলকে চোখের জলে ভাসিয়ে বিদায় করেছিল সহ-আয়োজক অস্ট্রেলিয়া। তবে এখন থেকে ভারতের যুব দলও বড়দের দেখানো পথে হাঁটবে কি না তা হয়তো সময়ই বলে দেবে।
মন্তব্য করুন: