দুঃখের হিমালয় পেরিয়ে ভারতের ৩১৩তম টেস্ট ক্রিকেটার আকাশ

২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

দুঃখের হিমালয় পেরিয়ে ভারতের ৩১৩তম টেস্ট ক্রিকেটার আকাশ

সংগ্রামমুখর জীবন ছিল তার। কিন্তু স্বপ্ন ছিল দেশের হয়ে ক্রিকেট খেলা। সেই স্বপ্নের পথে বারবার বাধা এসেছে। কিন্তু হার মানেননি আকাশ দীপ। দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে শুক্রবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রাঁচিতে ভারতের ৩১৩তম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট অভিষেক হলো তার। নবীন এই পেসারকে টেস্ট ক্যাপ পরিয়ে দেন ভারতের প্রধান কোচ রাহুল দ্রাবিড়। এর আগে দ্রাবিড়ের বয়ানে উঠে আসে আকাশ দীপের সংগ্রামমুখর জীবনের গল্প।

‘দ্য ওয়াল’ খ্যাত দ্রাবিড় বলেন, “আকাশ, তুমি যাত্রা শুরু করেছিলে বাড্ডি নামের একটি জায়গা থেকে। যে জায়গাটা এখান (রাঁচি) থেকে মোটামুটি ২০০ কিলোমিটার দূরে। এই যাত্রাপথে তোমাকে অনেক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। তুমি কঠোর পরিশ্রম করেছ। জীবনে প্রচুর চড়াই-উতরাই দেখেছ। ক্রিকেট খেলার জন্য তুমি নিজেই বাড্ডি থেকে দিল্লি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলে। ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয় তোমাকে অনুপ্রাণিত করেছিল।”

“দিল্লিতে একা একা থেকে নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছ ক্রিকেটার হতে। তারপরও তোমাকে দিল্লি থেকে কলকাতায় যেতে হয়েছিল। বাংলার হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেছ। দীর্ঘ এই যাত্রা তোমাকে রাঁচিতে নিয়ে এসেছে। তোমার গ্রাম থেকে মাত্র ২০০ কিলোমিটার দূরে। এখানেই তুমি ভারতের টেস্ট ক্যাপ পাচ্ছ। জানি তোমার একটা বিশেষ অনুভূতি হচ্ছে। এখানে তোমার মা আছেন, পরিবারের অন্যরাও আছেন। খুবই দুর্ভাগ্যজনক তোমার বাবা এবং বড় ভাই জীবিত নেই। তাঁরা যেখানেই থাকুন, আমরা নিশ্চিত তাদের আশীর্বাদ তোমার সঙ্গে আছে।”

আকাশের জীবনসংগ্রামের কথা বলতে বলতে একপর্যায়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন দ্রাবিড়, “আমাদের পুরো দল তোমাকে টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে স্বাগত জানাচ্ছে। এই বিশেষ মুহূর্ত এবং ম্যাচটি উপভোগ কর। কঠোর পরিশ্রমের জন্যই তোমার এই পর্যায়ে আসার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তোমার স্বপ্ন পূরণের সময় পাশে থাকতে পেরে আমরাও খুব খুশি। আগামী পাঁচ দিন এবং পুরো ক্যারিয়ার আনন্দের সঙ্গে উপভোগ কর। আমি তোমার হাতে ভারতের ৩১৩ নম্বর টেস্ট ক্যাপ তুলে দিচ্ছি।” আকাশ দীপকে টেস্ট ক্যাপ পরিয়ে দেন রাহুল দ্রাবিড়। ছবি : ক্রিকইনফো

এসময় ২৭ বছরের আকাশদীপ বলেন, “ভারতের হয়ে টেস্ট খেলা আমার স্বপ্ন ছিল। স্বপ্ন পূরণ করতে পেরে আমি খুব খুশি। আমার গ্রামের খুব কাছেই স্বপ্ন পূরণের সুযোগ পেলাম। পরিবারের সবাই আজ এখানে উপস্থিত আছে। এর চেয়ে বেশি ভালো লাগার কিছু নেই আমার কাছে। পাশাপাশি আমাকে একটা বড় দায়িত্বও পালন করতে হবে। দেশের জন্য সেরা পারফরম্যান্স করতে হবে।”

২০১৫ সালে ৬ মাসের ব্যবধানে বাবা এবং বড় ভাইকে হারিয়েছিলেন আকাশ দীপ। রাস্তা খারাপ থাকায় এবং গাড়ি জোগার করতে দেরি হওয়ায় সময়মতো তাদের হাসপাতালে নেওয়া যায়নি। সংসারের হাল ধরতে বেশ কিছু সময় আকাশকে ক্রিকেট থেকে দূরে থাকতে হয়েছিল। এরপর ক্রিকেটার হওয়ার জন্য পাড়ি জমান কলকাতায়। করোনা ভাইরাসের মহামারীর সময় তার পরিবারে আবারও নেমে আসে দুর্যোগ। আকাশের ভাবী এবং চাচী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে আসেন আকাশের মা। এই প্রবল শোক সামলে আকাশ ঠিকই নিজের লক্ষ্যে পৌঁছে গেলেন।

মন্তব্য করুন: