‘বাজবল’ যুগে ইংল্যান্ডকে প্রথম সিরিজ হারের স্বাদ দিল ভারত
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
ইংল্যান্ড টেস্ট দলের দায়িত্ব নেওয়ার পরই দলটির খেলার ধরন আমূলে বদলে দিয়েছেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। টেস্ট খেলার রক্ষণশীল ধরন থেকে ইংলিশদের বের করে এনে আক্রমণাত্মক খেলার মন্ত্র জুগিয়েছেন তিনি। লাল বলের ক্রিকেটে কোচের এই আক্রমণাত্মক খেলার ধরন ‘বাজবল’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে শুরু করে। টেস্টে দলটি হয়ে ওঠেছিল অপ্রতিরোধ্য। কিন্তু অপ্রতিরোধ্য এই দলকে হারিয়ে বাজবল যুগে তাদের প্রথম সিরিজ হারের স্বাদ দিয়েছে ভারত।
অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ২০২১-২২ মৌসুমের অ্যাশেজ সিরিজে ইংল্যান্ডের ভরাডুবির পর নড়েচড়ে বসে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। টেস্ট দলের নতুন কোচ খোঁজার অভিযানে নেমে পুরো ক্রিকেট বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে সাবেক নিউ জিল্যান্ড অধিনায়ক ম্যাককালামের কাঁধে দায়িত্ব দেয় তারা। সে সময় আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের কোচিং করানো ছাড়া বিধ্বংসী এই ব্যাটারের আর কোনো অভিজ্ঞতাই ছিল না।
এরপরেও ইংলিশদের দায়িত্ব নিয়েই নিজের প্রথম সিরিজে তার নিজ দেশ নিউ জিল্যান্ডকে ৩-০ তে হোয়াইটওয়াশ করেন ম্যাককালাম। সেই সিরিজ থেকেই শুরু হয় টেস্ট ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের আক্রমণাত্মক খেলার। এরপর ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২-১ ব্যবধানে হারানোর পর পাকিস্তানকে তাদের মাটিতেই ৩-০ তে হোয়াইটওয়াশ করে ইংলিশরা। বাজবলের সুনাম ছড়িয়ে যায় পুরো ক্রিকেট বিশ্বেই।
ঘরের মাঠে ২০২৩ অ্যাশেজ সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার কাছে প্রথম দুই ম্যাচ হারার পর অনেকেই ধরে নেন এবার হয়তো বাজবলের পতন ঘটবে। কিন্তু পরের তিন ম্যাচে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ২-২ ব্যবধানে সিরিজ ড্র করে ম্যাককালামের ইংলিশ দল জানান দেয় তারা অপ্রতিরোধ্য।
ভারতের বিপক্ষে চলমান টেস্ট সিরিজ শুরুর আগেও আলোচনায় ছিল বাজবলের আধিপত্য এই উপমহাদেশেও টিকে থাকবে কি না। তবে সব আলোচনাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে হায়দরাবাদে সিরিজের প্রথম টেস্ট জিতে নেয় ইংল্যান্ড। এরপরই ঘটে ছন্দপতন। আক্রমণাত্মক খেলে ম্যাচ জয়ের নেশায় বুদ ইংলিশরা হেরে বসে দ্বিতীয় টেস্ট। শুরু হয় সমালোচনা। কিন্তু এইসব সমালোচনাকে পাত্তা না দিয়ে তৃতীয় ম্যাচেও জয়ের লক্ষ্যেই থাকে তারা। রাজকোটের স্পিনিং পিচে ভারতের দেওয়া ৫৫৭ রানের লক্ষ্য ড্র করার জন্য না খেলে ইংলিশরা ছোটে জয়ের পেছনে। ম্যাচ হারে ৪৩৪ রানের বড় ব্যবধানে। আর সিরিজে পিছিয়ে পড়ে ২-১ ব্যবধানে।
বাজবল যুগে আগের ৬ সিরিজের কোনোটাতেই হারের মুখ না দেখা অধিনায়ক বেন স্টোকস এরপরেও আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে, তারা এখান থেকেও ঘুরে দাঁড়িয়ে সিরিজ জিততে পারবে। রাঁচির চতুর্থ টেস্টেও যেন সেদিকেই এগুচ্ছিল তারা। প্রথম ইনিংসে জো রুটের দৃঢ়তায় ৩৫৩ রানের সংগ্রহ পেলেও ভারতের উইকেটরক্ষক-ব্যাটার ধ্রুব জুড়েলের একক প্রচেষ্টায় বড় লিড নিতে পারেনি ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতীয়দের ঘূর্ণি জাদুতে তারা ১৪৫ রানেই গুটিয়ে যায়।
তবে সিরিজে ফিরতে ১৯২ রানের লক্ষ্য দিয়েও লড়াই চালিয়ে যায় স্টোকসের দল। ১২০ রানের মধ্যে স্বাগতিকদের ৫ উইকেট তুলে নিয়ে সেদিকেই এগুচ্ছিল তারা। কিন্তু এবারও ধ্রুবের বাধায় আটকা পড়ে তারা। শুবমান গিল ও ধ্রুবের ৭২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ৫ উইকেটে জেতে ভারত। পতন ঘটে বাজবল সাম্রাজ্যের, যার স্থায়িত্ব ছিল ৬৩৫ দিন বা ১ বছর ৮ মাস ২৫দিন।
মন্তব্য করুন: