লিটনের আদর্শ হতে পারেন মাহমুদউল্লাহ
১৬ মার্চ ২০২৪
ছবিটি যেন প্রতীকী। বীরদর্পে এগিয়ে আসছেন মাহমুদউল্লাহ, পিছিয়ে যাচ্ছেন লিটন। ছবি : ক্রিকইনফো
বাংলাদেশের ক্রিকেটে কোনো খেলোয়াড়কে বাদ দেওয়া এবং পুনরায় দলে ফেরানোর ক্ষেত্রে কখনই প্রক্রিয়া মানা হয় না। একজন ক্রিকেটার হয়তো জানেনও না, কেন তাকে বাদ দেওয়া হচ্ছে? দলে ফিরতে হলে তাকে কী করতে হবে? গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর নেতৃত্বাধীন নতুন নির্বাচক কমিটি দায়িত্ব গ্রহণের শুরুতেই এই বিতর্ক থামিয়ে দিল। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের মাঝপথে লিটন দাসকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে প্রধান নির্বাচক স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে, বাজে পারফর্ম্যান্সের জন্যই লিটনকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
লিটনের জন্য বিষয়টা এখন খুবই পরিষ্কার হয়ে গেল যে- জাতীয় দলে ফিরতে হলে তাকে পারফর্ম্যান্স করতে হবে। নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। শৈল্পিক ব্যাটিং কিংবা বিশেষ বিবেচনায় দলে ফেরাটা আপাতত তার জন্য সম্ভব নয়। প্রত্যাবর্তনের এই লড়াইয়ে লিটনের আদর্শ হতে পারেন তারই সতীর্থ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, যিনি ইতোমধ্যেই দেশের ক্রিকেটে পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। দল থেকে বাদ পড়ার পর ৩৭ বছর বয়সেও যে প্রত্যাবর্তন ঘটানো যায়- সেটা মাহমুদউল্লাহর চেয়ে ভালো কে জানে?
২০২৩ সালের মার্চে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের পর থেকেই জাতীয় দলের বাইরে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। তৎকালীন নান্নু-বাশারদের নির্বাচকমণ্ডলী জানায়, তাকে ‘বিশ্রাম’ দেওয়া হয়েছে। এমনকি এশিয়া কাপের দলেও ছিলেন না তিনি। ফলে, অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটারের জন্য হয়তো জাতীয় দলের দরজা বন্ধই হয়ে গেছে। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ যেন অন্য ধাতুতে গড়া। তিনি সিদ্ধান্ত নেন, নিজেকে প্রমাণ করে জাতীয় দলে ফেরার।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে দেশের ক্রিকেটে তখন তোলপাড় চলছিল। ক্রিকেট সমর্থক এবং গণমাধ্যম দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গিয়েছিল মাহমুদউল্লাহকে বাদ দেওয়ার ইস্যুতে। কেউ বলছিলেন, বাদ দেওয়া সঠিক সিদ্ধান্ত। আবার কারও মতে, এটা মাহমুদউল্লাহর জন্য অসম্মানজনক। কিন্তু যাকে নিয়ে এত কথা, সেই মাহমুদউল্লাহ টু শব্দটাও করেননি। মিরপুরে দিনের পর দিনে একা একা অনুশীলন করে গেছেন। নিজের ফিটনেস নিয়ে কাজ করেছেন।
অবশেষে সেই পরিশ্রমের ফল পেয়েছেন হাতেনাতে। বিশ্বকাপের আগে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে তাকে দলে ফেরানো হয়। সেই সিরিজে পারফর্ম করে তিনি বিশ্বকাপের মূল দলে জায়গা করে নেন। বিতর্ক আর ব্যর্থতার বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে তিনি ছিলেন উজ্জ্বল। ছিলেন টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও। পুরো টুর্নামেন্টে টাইগারদের হয়ে একমাত্র সেঞ্চুরিটিও হাঁকান ডানহাতি এই ব্যাটার। ৮ ম্যাচে মাঠে নেমে ১ সেঞ্চুরি ও ১ ফিফটিতে করেন ৩২৮ রান। এরপর আসে বিপিএল। ফরচুন বরিশালের হয়ে তার দুর্দান্ত পারফর্ম্যান্স জায়গা করে দেয় টি-টুয়েন্টি দলেও।
মাহমুদউল্লাহর চেয়ে বয়সে ৯ বছরের ছোট লিটন দাস। তাই মাহমুদউল্লাহ যদি ক্যারিয়ারের শেষপ্রান্তে এসেও প্রত্যাবর্তন ঘটাতে পারেন, তাহলে লিটন কেন নয়? যদি গাজী আশরাফের আমলেও কোনো পারফর্ম না করে দলে ফেরার পুরনো সংস্কৃতি ফিরে আসে তাহলে ভিন্ন কথা; সেটা না হলে মাহমুদউল্লাহর পথ অনুসরণ করে নিজের লড়াইটা চালিয়ে যেতে পারেন লিটন। প্রেস কনফারেন্সে লিটনের বাগাড়ম্বর তো অনেকবারই শোনা গেছে, এবার তার উচিত মাহমুদউল্লাহর মতো চুপচাপ নিজের আসল কাজে মনোযোগী হওয়া।
মন্তব্য করুন: