বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার দ্বৈরথের শুরুটা যেখানে….
১৬ মার্চ ২০২৪
২০১৮ সালের ১৬ মার্চ, নিদাহাস ট্রফির বাঁচা-মরার লড়াইয়ে মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বীরত্বে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচটি জিতে টুর্নামেন্টের ফাইনালে পা রেখেছিল টাইগাররা। তবে ফলাফল ছাপিয়ে ম্যাচটি বেশি উত্তাপ ছড়িয়েছিল কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত এবং মাঠের বাইরে দুই দলের ক্রিকেটারদের আগ্রাসী কর্মকাণ্ডে। বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার চলমান সিরিজের মাঝে ম্যাচটির ৬ বছর পূর্তিতে ফিরে দেখা যাক কীভাবে শুরু হয়েছিল ক্রিকেটের মঞ্চে দেশ দুটির দ্বৈরথ।
১৯৮৬ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। তবে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে প্রথম মাঠে নামে আরও পরে, ২০০২ সালে। সে সময় লঙ্কানদের সঙ্গে মুখোমুখি লড়াইয়ে একদমই পাত্তা পেত না লাল-সবুজের দলটি। মাঝে দু-একটি ম্যাচে বাংলাদেশ জয় পেলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ক্রিকেট খেলতে পেরেছে খুব কমই। তবে সে দৃশ্যপটে পরিবর্তন আসতে শুরু করে ২০১৫ বিশ্বকাপে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ দলের হাত ধরে।
এই সময়ের পর থেকেই মূলত লঙ্কানদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু করে বাংলাদেশ। রঙিন পোশাকে এখন পর্যন্ত দু’দলের ৩১ মুখোমুখি দেখায় ১২টিতে জয় পেয়েছে সাকিব-তামিমরা। তবে মূল দ্বৈরথের শুরুটা হয় সেই ২০১৮ সালের নিদাহাস ট্রফি থেকেই। ‘নাগিন ড্যান্স’ কিংবা হালের ‘টাইমড আউট’ এই সবকিছুর বীজ বপন হয়েছিল সেই ত্রিদেশীয় টি-টুয়েন্টি টুর্নামেন্টে।
টুর্নামেন্টের তৃতীয় ম্যাচে মুশফিকুর রহিমের ৭২ রানের বিধ্বংসী ইনিংসে লঙ্কানদের দেওয়া ২১৫ রানের লক্ষ্য ২ বল ও ৫ উইকেট হাতে রেখে পেরিয়ে যায় বাংলাদেশ। দলকে জিতিয়ে উদযাপনের অংশ হিসেবে নাগিন ড্যান্স দেন মুশফিক। কিন্তু বাংলাদেশের উইকেট নিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে নাগিন ড্যান্সের শুরুটা করেছিল লঙ্কানরাই।
এরপর ১৬ মার্চের ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে লঙ্কানদের দেওয়া ১৬০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ভালোই শুরু করছিল বাংলাদেশ। টাইগারদের কাছে আগের ম্যাচ হেরে আগেই তেতে থাকা লঙ্কানরা এদিন যেন আরও আগ্রাসী ভঙ্গিতে খেলতে থাকে। ম্যাচ চলাকালীন বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের সঙ্গে বাদানুবাদেও জড়ান তারা। তবে আসল বিতর্কের শুরুটা হয় ম্যাচের শেষ ওভারে যখন সাকিব আল হাসানের দলের দরকার ছিল ৬ বলে ১২ রান।
মুস্তাফিজুর রহমানকে করা ইসুরু উদানার শেষ ওভারের প্রথম দুই বল বাউন্সার দিলেও আম্পায়ার নো বল বা ওয়াইডের কোনোটাই দেননি। এতেই মাঠে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু মাঠের বাইরে ততক্ষণে লঙ্কানদের সঙ্গে তৈরি হয়েছে আরও উত্তপ্ত পরিবেশ। বাদানুবাদে জড়ান দু’দলের ক্রিকেটারা। একটা সময় পরিস্থিতি এতোটাই বাজে হয়ে যায় যে, চোট কাটিয়ে ম্যাচে ফেরা অধিনায়ক সাকিব মাহমুদউল্লাহকে মাঠ থেকে বের হয়ে আসতে বলেন। এমনকি মাঠের মাঝেই নুরুল হাসান সোহানের সঙ্গে তর্কে জড়ান লঙ্কান অল-রাউন্ডার থিসারা পেরেরা।
তবে এত বিতর্কের পরেও লঙ্কানদের শেষ রক্ষা আর হয়নি। পঞ্চম বলে স্কোয়ার লেগের উপর দিয়ে দারুণ এক ছক্কা হাঁকিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন মাহমুদউল্লাহ। ১৮ বলে ৪৩ রানের অপরাজিত ইনিংসে ম্যাচসেরাও হন এই অল-রাউন্ডার। খেলার শেষে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা তো বটেই, খালেদ মাহমুদ সুজনের মতো বোর্ড কর্মকর্তাও মাঠে নেমে ‘নাগিন ড্যান্স’ শুরু করেন, যা লঙ্কানদের আরও তাতিয়ে দিয়েছিল।
এই ঘটনার পর থেকে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার সব ম্যাচেই কাজ করে বাড়তি উত্তেজনা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা। গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের ‘টাইমড আউট’ এই দ্বৈরথে যেন নিয়ে গেছে অন্য উচ্চতায়। চলতি সফরে বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টুয়েন্টি সিরিজ জিতেও ‘টাইমড আউট’ উদযাপন করেছিল লঙ্কানরা।
মন্তব্য করুন: