লিটনের কাছে জাতীয় দল যেন তামাশা
২৫ মার্চ ২০২৪
বিশাল টার্গেট তাড়ায় নেমে তখন ৩৭ রানে ৪ উইকেট পড়ে গেছে বাংলাদেশের। একটু আগেই স্টাম্পের বাইরের বড় তাড়া করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। এমতাবস্থায় ক্রিজে এলেন লিটন দাস, যার লাল বলের ফর্ম বেশ ভালো। প্রথম ইনিংসে একটা বলের লাইন মিস করে আউট হয়েছেন ২৫ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে দলের মহাবিপদে সেই লিটনেরই তো দেয়াল হয়ে দাঁড়ানোর কথা। কিন্তু কোথায় কী? চরম দৃষ্টিকটু শটে লিটন মারলেন ‘গোল্ডেন ডাক’।
সিলেট টেস্টের তৃতীয় দিনের শেষ বিকেলে বাংলাদেশি ব্যাটারদের জন্য ক্রিজে টিকে থাকটাই ছিল গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু লিটন বিশ্ব ফার্নান্দোর বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে ছক্কা মারতে গেলেন। তার আগ্রাসন দেখে মনে হচ্ছিল, এটা হয়তো সাদা বলের কোনো ম্যাচ। জয়ের জন্য শেষ বলে ৬ রান প্রয়োজন। তাই তিনি ওভাবে ডাউন দ্য উইকেটে এসে ছক্কা মারতে গিয়েছেন। অথচ, ৫১১ রানের টার্গেট পাওয়া বাংলাদেশ ম্যাচটা আগেই হেরে গিয়েছিল। লিটন কি সেই পরাজয়টা ত্বরান্বিত করতে চেয়েছিলেন?
সম্প্রতি বাজে ফর্মের কারণে ওয়ানডে দল থেকে বাদ পড়েছেন লিটন। সেটাও আবার সিরিজের মাঝপথে। গণমাধ্যমে খবর এসেছে, বাদ পড়ার বিষয়টি ভালোভাবে নেননি এই ব্যাটার। এমনকী তিনি নাকি ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচও খেলতে চাননি। শেষ পর্যন্ত খেললেও আউট হয়েছেন ৫ রান করে। এই কঠিন সময়ে লিটনের উচিত ছিল লাল বলে নিজের সামর্থ্য প্রমাণ করা। পারফর্ম্যান্স দিয়ে সমালোচনার জবাব দেওয়া। কিন্তু পারফর্ম্যান্স তো দূরের কথা, লিটনের আত্মোপলব্ধি হয়েছে বলেও মনে হলো না!
কিপিং গ্লাভস হাতেও তাকে সফল বলার সুযোগ কম। বেশ কয়েকটি ভুল রিভিউ এবং একটি রিভিউ না নেওয়ার ঘটনায় মনে হচ্ছিল, লিটন যেন অন্য কোনো জগতে আছেন। খেলার মাঠে তার মন নেই। প্রথম ইনিংসে তাইজুলের বলে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার এলবিডাব্লিউ হলেও অধিনায়ক শান্তকে তিনি রিভিউ নিতে বারণ করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে সেই ধনাঞ্জয়ার গ্লাভস ছুঁয়ে আসা ক্যাচ নিয়েও আপিল করেননি! সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট সমর্থকেরাও লিটনের এমন মানসিকতা দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে যে ‘অটোচয়েস’ সংস্কৃতি চালু আছে, লিটনের এমন মানসিকতা যেন সেটারই প্রতিফলন। তার যেন জাতীয় দল থেকে বাদ পড়লেও কিছু যায় আসে না। অমন বাজে শট খেলে আউট হলেও কিছু যায় আসে না। তিনি হয়তো এখনো বিশ্বাস করেন, বাদ পড়লেও আজ হোক বা কাল তিনি আবারও দলে ডাক পাবেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নয় বছরের বেশি সময় কাটিয়ে ফেললেও লিটনের মনের বয়স নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। লিটন যদি ফর্মে ফিরতে পারেন, সেটা হবে বাংলাদেশের জন্য সুখবর। কিন্তু লিটনকেও সেটা চাইতে হবে। তিনি কি সেটা চান?
মন্তব্য করুন: