বিশ্বকাপের আগে ‘গরীবের অ্যাশেজ’ খেলে কী পেল বাংলাদেশ?

বিশ্বকাপের আগে ‘গরীবের অ্যাশেজ’ খেলে কী পেল বাংলাদেশ?

ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার ঐতিহ্যবাহী লাল বলের লড়াই ক্রিকেট দুনিয়ায় দ্য অ্যাশেজ হিসেবে সুপরিচিত। বিশ্বের কোটি কোটি ক্রিকেটপ্রেমী অপেক্ষায় থাকে ক্রিকেটের প্রাচীন ফরম্যাটে তাদের দ্বৈরথ দেখার। এদিকে বাংলাদেশ আর জিম্বাবুয়েও নিয়মিত দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলে থাকে। যাদের দ্বৈরথকে সমর্থকেরা ঠাট্টা করে নাম দিয়েছেন গরীবের অ্যাশেজ। খর্বশক্তির জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জিততেও টাইগারদের যে পরিমাণ ঘাম ঝরাতে হয়, তাতেই হয়তো নিহিত আছে এই নামকরণের স্বার্থকতা।

রোববার শেষ হওয়া পাঁচ ম্যাচ টি-টুয়েন্টি সিরিজের দিকে নজর দেওয়া যাক। টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে এই সিরিজ আয়োজন নিয়ে বেশ সমালোচনা হয়েছিল। যে দলটি বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করতে পারেনি, তাদের বিপক্ষে খেলে বাংলাদেশ আসলে কতটা প্রস্তুতি নিতে পারবে- তা নিয়ে সন্দেহ ছিল অনেকের। সংবাদ সম্মেলনে তো প্রশ্নও উঠেছিল, জিম্বাবুয়েকে সিরিজে হারিয়ে তাসকিনরা ফেইক কনফিডেন্স নিয়ে বিশ্বকাপে যাবেন কিনা! কিন্তু পুরো সিরিজের দিকে তাকালে তো ফেইক কনফিডেন্সও পাওয়া মুশকিল!

সিরিজে প্রথম ম্যাচেই শুধু দাপুটে জয় তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ। বাকি তিন ম্যাচ জিততে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত প্রথম ম্যাচে অভিষিক্ত তানজিদ হাসান আর তাওহীদ হৃদয় জিম্বাবুয়েকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তানজিদ সিরিজে দুটি ফিফটি করলেও তার ব্যাটিংয়ে ছিল না ধারাবাহিকতা। শেষ দুই ম্যাচে ভালো করতে পারেননি হৃদয়ও। আর টপ অর্ডারের কথা তো বলাই বাহুল্য! তিন ম্যাচে ৩৬ রান করে বাদ পড়েছেন ওপেনার লিটন দাস। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর অবস্থাও করুণ। ৫ ম্যাচে করেছেন মাত্র ৮১ রান। শেষ ম্যাচে সর্বোচ্চ ৩৬ রান করেছেন।

অধিনায়ক শান্তকে তো আর বাদ দেওয়া যায় না, তাই লিটনকে বসিয়ে ফেরানো হয় সৌম্য সরকারকে। চতুর্থ টি-টুয়েন্টিতে দারুণ ইনিংস খেলা সৌম্য শেষ ম্যাচে ৭ রানেই শেষ। অর্থাৎ, টপ অর্ডারের বড় সমস্যা নিয়েই বিশ্বকাপে যেতে হবে টাইগারদের। জিম্বাবুয়ের মতো দলের বিপক্ষে খেলেও বাংলাদেশের টপ অর্ডার রান করতে ব্যর্থ! শেষ দুই ম্যাচে মাঠে নেমে সাকিব আল হাসানও (১, ২১) ব্যাট হাতে ভরসা দিতে পারেননি। এই সিরিজে ব্যাটিং যে বাংলাদেশকে কতটা ভূগিয়েছে তার প্রমাণ মেলে পরিসংখ্যানেই। তিন ম্যাচে আগে ব্যাট করা বাংলাদেশ একশ ষাটের ঘর ছাড়াতে পারেনি।

সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে টস জিতেও আগে ব্যাটিং নেননি নাজমুল হোসেন শান্ত, যার কোনো যৌক্তিক জবাবও দিতে পারেনি কেউ। কিন্তু শেষ তিন ম্যাচে টস হারায় বাধ্য হয়েছেন আগে ব্যাট করতে। এই তিন ম্যাচে দলীয় স্কোর যথাক্রমে- ১৬৫, ১৪৩ আর ১৫৭। তৃতীয় আর চতুর্থ ম্যাচে জয় এসেছে খুবই কষ্টে। আজ শেষ ম্যাচে তো নাজমুলরা হেরে গেলেন ৮ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে। পুরো সিরিজে বাংলাদেশের বোলিং মন্দ হয়নি। ৮ উইকেট নিয়ে সিরিজসেরা হয়েছেন তাসকিন। কিন্তু ব্যাটিংয়ের অবস্থা হতশ্রী।

পুরো সিরিজে বাংলাদেশের ব্যাটাররা মাত্র তিনটি ফিফটি করতে পেরেছেন, যার দুটিই করেছেন তানজিদ তামিম। স্ট্রাইকরেটের অবস্থা ভয়াবহ। ১৮৭ স্ট্রাইকরেট নিয়ে শীর্ষে জোনাথন ক্যাম্পবেল। দুইয়ে আছেন ১৮৩ স্ট্রাইকরেটে ১৮ বলে ৩৩* করা হৃদয়। বাংলাদেশি ব্যাটারদের মধ্যে ১৫০ এর ওপর স্ট্রাইকরেট আছে আর মাত্র একজনের- মাহমুদউল্লাহ (১৬২)। জিম্বাবুয়ের মতো দলের বিপক্ষে ঘরের মাঠে যদি স্ট্রাইকরেটের এই হাল হয়, তাহলে বিশ্বকাপের আগে এই সিরিজ থেকে একরাশ আশঙ্কা ছাড়া আর পাওয়ার কীইবা থাকতে পারে?

মন্তব্য করুন: