বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের ‘অজুহাতসমগ্র’

বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের ‘অজুহাতসমগ্র’

নিউ জিল্যান্ডের আকাশ বেশ পরিষ্কার, তাই ক্যাচ ধরতে সমস্যা হয়েছে- ২০২১ সালে নিউ জিল্যান্ড সফর থেকে ফিরে এমনই এক অজুহাত দিয়েছিলেন নাসুম আহমেদ! সেই সফরে বাংলাদেশের ফিল্ডিং ছিল যাচ্ছেতাই। প্রতি ম্যাচেই ক্যাচ ফসকেছে। ফলস্বরূপ ওয়ানডে আর টি-টুয়েন্টি সিরিজে জুটেছে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা। নাসুম তখন ছিলেন আনকোরা নতুন ক্রিকেটার। তার কথায় এদিক ওদিক হতেই পারে। কিন্তু বাকিরা?

মুমিনুল হক টেস্ট অধিনায়ক থাকার সময় পরাজয় থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথা নিয়মিতই শোনা যেত। ২০২১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে রেকর্ড ব্যবধানে চট্টগ্রাম টেস্ট হারের পর তিনি বলেছিলেন, এক বছর পর (আসলে ১১ মাস) আমরা টেস্ট খেলতে নামলাম। কাজটা তাই আমাদের জন্য কঠিন ছিল।

কম যান না আরেক সাবেক অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও। ২০২৩ বিশ্বকাপে নিজের বাজে পারফর্ম্যান্স আর দলের দুরবস্থার কারণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন, তিনি তার বাম চোখে ঝাপসা দেখছিলেন। সাকিবের ভাষায়, একটি বা দুটি ম্যাচে নয়, টুর্নামেন্টজুড়েই আমি এই সমস্যায় ভূগছিলাম। ব্যাটিংয়ের সময় আমি ভীষণ সমস্যা অনুভব করেছি।” কিন্তু বিশ্বকাপের আগে সাকিবের কর্মকাণ্ড তার এই বক্তব্যকে 'অজুহাত' হিসেবেই প্রতিষ্ঠা করে।

সাকিব বেশ কয়েকটি দেশে চোখের চিকিৎসা করিয়েছেন- এটা সত্য। অথচ, এই সাকিবই গত ফেব্রুয়ারিতে বিপিএল চলাকালীন সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, এই যে বারবার চোখ, চোখ, চোখ বলছেন, আসলে আমার চোখের কোনো সমস্যা নেই। আসলে এই যে আপনি চশমা পরে যেটা দেখেন, আমি চশমা ছাড়া আপনার চেয়ে ভালো দেখি।

গত মার্চে শ্রীলঙ্কার কাছে সিলেট টেস্টে বিশাল ব্যবধানে হেরেছিল বাংলাদেশ। টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে ব্যাটিং ব্যর্থতার অজুহাত হিসেবে মেহেদি হাসান দায়ী করেছিলেন প্রস্তুতির ঘাটতিকে, আমরা টেস্টের জন্য ভালো প্রস্তুতি নিতে পারিনি। (টি-টুয়েন্টি, ওয়ানডে সিরিজের পর) দুদিনের বিরতিতে টেস্ট খেলতে হচ্ছে। এটাও একটা কারণ হতে পারে। আমাদের আরও স্কিল বাড়াতে হবে। অথচ, একই ঘটনা তো শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রেও ঘটেছে, সেটা এড়িয়ে গেছেন মিরাজ।

তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে আলোচিত অজুহাত- ২০ রান কম হয়েছিল। আবহমান কাল ধরে এই অজুহাত চলে আসছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অধিনায়কেরা মুখস্ত বুলির মতো বলে যাচ্ছেন এই কথা। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের কাছে লজ্জার হারের পর যেমনটা বলেছেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত, আমরা আরও ২০ রান বেশি করতে পারতাম। তাহলে ম্যাচটা অন্যরকম হতে পারত।

আরেকটি কমন অজুহাত হলো- উইকেট। এটাকে অবশ্য পুরোপুরিভাবে অজুহাত বলা যায় না। কারণ, বাংলাদেশ ঘরের মাঠে যেসব উইকেটে খেলে, সেগুলো নিতান্তই বাজে। তাই দেশের বাইরে গিয়ে ধুঁকতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হেরেও যেমন বাজে উইকেটে খেলার কথা বলেছেন শান্ত। আবার এই শান্তদের মুখেই শোনা যায়, উইকেট যেমনই হোক তাদেরকে খেলতেই হবে।

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা টেস্ট জয়ের পর মিরপুরের উইকেটের কঠোর সমালোচনা করে নিউ জিল্যান্ড অধিনায়ক টিম সাউদি বলেছিলেন, মিরপুরের উইকেট অনেক কঠিন ছিল, বিশেষ করে ব্যাটারদের জন্য। আমার মনে হয় এটা একটা অসম্পূর্ণ টেস্ট ম্যাচ। উইকেট অনেক কঠিন ছিল, বিশেষ করে রান করা।

অথচ দুই ইনিংসে একবারও দুইশ ছুঁতে না পারা বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত উইকেটের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছিলেন, আমরা আন্তর্জাতিক টেস্টে উন্নতি করতে আসিনি, জিততে এসেছি। এখানে জেতার জন্য কেমন প্রস্তুতি নেওয়া উচিত, এটা গুরুত্বপূর্ণ। তবে এ ধরনের (উইকেট) সুবিধা অবশ্যই নেওয়া উচিত।

এমন বক্তব্যের পর 'উইকেট' শব্দটা শান্তদের মুখে অজুহাত বলেই মনে হয়।

মন্তব্য করুন: