বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি বয়সী
এনসুবুগার ক্রিকেট শুরু বিলুপ্ত হওয়া দলের হয়ে
৩১ মে ২০২৪
‘কালের সাক্ষী’ কথাটা ফ্র্যাঙ্ক এনসুবুগার সঙ্গে খুব করে যায়। উগান্ডার ৪৩ বছর বয়সী এনসুবুগা এবারের টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের সবচেয়ে বেশি বয়সের খেলোয়াড়। রেকর্ড বই ঘেটে তার ক্রিকেট শুরুর সময়কাল বের করা কঠিন। ক্রিকইনফোতে তার প্রোফাইলে গেলে চোখ আটকে যায় 'পূর্ব আফ্রিকা' নামে। এমন এক টুর্নামেন্ট দিয়ে তার প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু হয়েছিল, যেটায় ‘উগান্ডা’ নামে কোনো দলই ছিল না! এবার তিনি উগান্ডার হয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম এবং সম্ভবত শেষ বিশ্বকাপটি খেলতে এসেছেন।
১৯৯৭ আইসিসি ট্রফির শিরোপা জিতে বাংলাদেশ প্রথমবার বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়েছিল। সেই আইসিসি ট্রফিতেই মাত্র ১৬ বছর বয়সে ‘পূর্ব (ও কেন্দ্রীয়) আফ্রিকা’ দলের হয়ে মাঠে নেমেছিলেন এনসুবুগা। ওয়ানডে ফরম্যাটের সেই টুর্নামেন্টের কোনো ম্যাচেরই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নেই। ওই বছরের ৪ এপ্রিল পশ্চিম আফ্রিকার বিপক্ষে ১০ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে তিনি ‘গোল্ডেন ডাক’ মেরেছিলেন! বল হাতে ১০ ওভারে ৪ মেডেনসহ ১৫ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য। পরে আরও কয়েকটি ম্যাচে তিনি সুযোগ পান।
‘পূর্ব (ও কেন্দ্রীয়) আফ্রিকা’ দলটি গড়া হয়েছিল উগান্ডা, তানজানিয়া, মালাউয়ি, জাম্বিয়ার ক্রিকেটারদের নিয়ে। পরবর্তীতে এই দলটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। ওই টুর্নামেন্ট খেলা ক্রিকেটারদের মধ্যে একমাত্র এনসুবুগাই এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন। ১৯৯৮ সালে উগান্ডা আইসিসির সহযোগী সদস্যের মর্যাদা পায়। তাই উগান্ডার ক্রিকেটের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর সাক্ষী হন এনসুবুগা। একটা সময় স্বপ্ন দেখেন বিশ্বকাপে খেলার। আইসিসি ঢালাওভাবে অনেকগুলো দেশকে টি-টুয়েন্টি মর্যাদা দেওয়ার পর সেই সুযোগটাও তাদের সামনে আসে। বাছাইপর্বে টেস্ট খেলুড়ে দল জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে তারা ২০২৪ টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের মূলপর্বে জায়গা করে নেয়।
এনসুবুগা জানালেন, তার দল যে বিশ্বকাপ খেলতে এসেছে, সেটা নাকি এখনো তার বিশ্বাস হতে চায় না। পুরো ব্যাপারটাই স্বপ্নের মতো, “বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়ার ব্যাপারটা এখনও অদ্ভুত লাগে। জিম্বাবুয়েকে হারানোর পর আরেকবার মাঠে নামতে আমাদের আর তর সইছে না। আমি এটার জন্য শেষ ২৭ বছর ধরে চেষ্টা করে গেছি। স্বপ্ন সত্যি হওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম, অবশেষে তা হলো। আমাদের বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ নিয়ে উগান্ডার জনগন বেশ রোমাঞ্চিত। আমরাই ছেলেদের প্রথম দল, যারা এটা (বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ) করতে পেরেছি। এখন সবাই জানতে চায়, আমরা কখন খেলব? যাতে তারা ম্যাচগুলো দেখতে পারে।”
আইসিসি ট্রফি খেলার ২২ বছর পর ২০১৯ সালে উগান্ডার হয়ে বতসোয়ানার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয় এনসুবুগার। নিঃসন্দেহে তিনি ক্রিকেটের কালের সাক্ষী। এমনকী এই বয়সে খেলা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তার কোনো দ্বিধা নেই, “৪৩ বছর বয়সেও খেলতে পেরে আমি অনেক গর্ববোধ করি। আমি এখনও শক্তিশালী এবং আমি এটার জন্য বেশ কৃতজ্ঞ। আমার একটা রুটিন আছে। আমি সকালে বেশ আগেভাগেই ঘুম থেকে উঠি, ছয়টার কাছাকাছি সময়ে, এবং ৭-৮ কিলোমিটার জগিং করি। এরপর ক্লাবে আসি এবং ট্রেনিং করি।”
আসন্ন টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে গ্রুপ ‘সি’ তে উগান্ডার সঙ্গী আফগানিস্তান, নিউজিল্যান্ড ও দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৫৪ আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টিতে ১৫৮ রান এবং ৫৫ উইকেটের মালিক এনসুবুগার স্বপ্ন বিশ্বের দুই খ্যাতিমান ব্যাটারের উইকেট নিজের ঝুলিতে তোলা, “আন্দ্রে রাসেলকে বোলিং করার তর সইছে না এবং অবশ্যই কেইন উইলিয়ামসনকেও। যদি তার উইকেট নিতে পারি, তাহলে দুনিয়ার সবচেয়ে খুশি মানুষ হব আমি।”
এনসুবুগা জানেন না তিনি আর কতদিন খেলে যেতে পারবেন। তবে তার দেশ উগান্ডার ক্রিকেট বেশ এগিয়ে যাচ্ছে। নিকট ভবিষ্যতে আরও বড় কিছুর স্বপ্নই দেখছেন এনসুবুগা, “এই মুহূর্তে উগান্ডায় ক্রিকেটে অত বড় না। আমরা খেলাটাকে গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টায় আছি। চোখের সামনেই অনেক পরিবর্তন দেখেছি। আমরা একটা সময় এস্টোটার্ফের উইকেটে খেলতাম কিন্তু এখন আমাদের চারটি ঘাসের উইকেট আছে। আমরা প্রায় সারাদিন অনুশীলন করি। বোর্ডের সঙ্গে আমাদের চুক্তিও আছে যাতে পরিবারের দেখভাল করায় কোনো সমস্যা না হয়।”
মন্তব্য করুন: