স্প্রিন্টার বাবা, ভলিবল খেলোয়াড় মায়ের ছেলে সুদর্শন

৫ এপ্রিল ২০২৩

স্প্রিন্টার বাবা, ভলিবল খেলোয়াড় মায়ের ছেলে সুদর্শন

২০১১ সাল। বিশ্বকাপের ফাইনাল। ২৮ বছর পর আবারও বিশ্বমঞ্চের চূড়ায় ভারত। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে বসে উৎসব মুখর সেই ইতিহাসের সাক্ষী তামিলনাডুর ১০ বছরের এক বালক। স্বপ্ন দেখেন, জাতীয় দলের জার্সিতে একদিন দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার। 

না, সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি এখনও। তবে ওই স্বপ্নের পথেই হাঁটছেন ভারদ্বাজ সাই সুদর্শন। আইপিএলে গুজরাট টাইটানসের হয়ে ৪৮ বলে অপরাজিত ৬২ রানের ইনিংস, ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়ে দলকে জেতানো যেন তারই আরেক প্রস্থ প্রমাণ।

জন্মসূত্রে ক্রীড়াজগতের সঙ্গে সম্পর্ক সুদর্শনের। বাবা  আর. ভারদ্বাজ ছিলেন একজন স্প্রিন্টার। ১৯৯৩ সালে ঢাকা সাফ গেমসে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। আর মা ঊষা ভারদ্বাজ ছিলেন রাজ্য পর্যায়ের ভলিবল খেলোয়াড়। সুদর্শন যে ক্রিকেটার হয়েছেন, তাতে তাই আশ্চর্যের কিছু নেই।

সুদর্শনের ক্রিকেটীয় অনুপ্রেরণা মূলত মায়ের কাছ থেকেই। ক্রীড়াবিদ হওয়ার কারণে প্রাথমিক পর্যায় থেকেই ছেলের ফিটনেস ট্রেইনার হিসেবে কাজ করেছেন। পরিবারের সবাই ক্রীড়াজগতের সাথে থাকায় সুদর্শনের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম চাননি তাঁর পরিবার।

সুদর্শনের ক্রিকেটীয় অনুপ্রেরণা মূলত মায়ের কাছ থেকেইএই পরিবারই তাঁর বড় প্রেরণা। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকের এক সাক্ষাৎকারে তো তেমনটাই বলেছিলেন সুদর্শন, ‘মা-বাবা আমার বড় প্রেরণা। দুজনেই ক্রীড়াবিদ ছিলেন। আমাকে ক্রিকেটার হতে তাই উৎসাহ যুগিয়েছেন। দুজনই মানসিকভাবে আমাকে সমর্থন দিয়েছেন সবসময়।’

২০২১ সালে তামিলনাড়ু প্রিমিয়ার লিগে অভিষেক ১৯ বছর বয়সী সুদর্শনের। লাইসা কোভাই কিংসের হয়ে প্রথম ম্যাচেই ৪৩ বলে ৮৭ রানের বিধ্বংসী ইনিংস বাঁহাতি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের। তা দেখেই ভারতের অফ স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন টুইট করেন, ‘এই ছেলেটি স্পেশাল। যত দ্রুত সম্ভব তামিলনাড়ু রাজ্য দলে ওকে নিয়ে আসা হোক।’

ওই টুর্নামেন্টে আট ম্যাচের পাঁচটিতেই ফিফটি পেরোনা ইনিংস সুদর্শনের। ৩৫৮ রান নিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হিসেবে শেষ করেন আসর।  

অশ্বিনের চাওয়ায় তামিলনাড়ু রাজ্য দলে সুযোগ পেতেও দেরি হয়নি সুদর্শনের। ওই বছরের ডিসেম্বরে বিজয় হাজারে ট্রফিতে ‘লিস্ট এ’ ক্রিকেটে পথচলা শুরু। স্বপ্ন দেখেন, আইপিএলে খেলবেন নিজেদের দল চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে। কিন্তু চেন্নাই তাঁকে কেনেনি। ২০২২-এর নিলামে ভিত্তিমূল্য ২০ লাখ রুপিতে সুদর্শনকে দলে ভেড়ায় নতুন দল গুজরাট টাইটানস। আইপিএলে নিজের প্রথম আসরে ৫ ম্যাচে ৩৬.২৫ গড় এবং ১২৭ স্ট্রাইক রেটে করেন ১৪৫ রান। 

বিজয় হাজারে ট্রফিতে তামিলনাড়ুর হয়ে ‘লিস্ট এ’ ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করেন সুদর্শনএরপর কেবলই এগিয়ে চলা। সাম্প্রতিক সময়ে তো নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। গত মাস ছয়েকের কথা ধরুন। বিজয় হাজারে ট্রফিতে তামিলনাড়ুর হয়ে ‘লিস্ট এ’ ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করেন সুদর্শন। যে ইনিংসটি গ্যালারি থেকে দেখেন তাঁর মা এবং বড় ভাই সাই রাম। সেই আসরে ৮ ম্যাচের তিনটিতেই পেয়েছেন সেঞ্চুরির দেখা। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৫৪ রানের দিনে নারায়ণ জগদীসানকে নিয়ে করেছেন দলের হয়ে রেকর্ড ৪১৬ রানের জুটি। একইসাথে ৫০ ওভার শেষে ২ উইকেটে ৫০৬ রানের দলীয় সংগ্রহ ‘লিস্ট এ’ ক্রিকেটে সর্বোচ্চ। এখন পর্যন্ত ‘লিস্ট এ’ ক্রিকেটে ১১ ম্যাচে ৬০ দশমিক ৩৬ গড়ে করেছেন ৬৩৫ রান। 

বিজয় হাজারে ট্রফি শেষের ঠিক পরের মাস ডিসেম্বরেই অভিষেক হয় প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে; রনজি ট্রফিতে। প্রথম ম্যাচেই হায়দরাবাদের বিপক্ষে করেন ১৭৯ রান। 

দিল্লি ক্যাপিটালসের বিপক্ষে পরের ম্যাচে আরও বিস্ফোরক সুদর্শনএবারের আইপিএলে সুদর্শনকে ধরে রাখে গুজরাট টাইটানস। জন্মস্থানের ফ্র্যাঞ্চাইজি চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে যান ‘ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার’ হিসেবে। করেন ১৭ বলে ২২ রান। দিল্লি ক্যাপিটালসের বিপক্ষে পরের ম্যাচে আরও বিস্ফোরক সুদর্শন। এবার ৪৮ বলে অপরাজিত ৬২ রানে জয় জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। হন ম্যাচসেরা। 

তামিলনাড়ু প্রিমিয়ার লিগ থেকে বিজয় হাজারে ট্রফি। রনজি ট্রফি থেকে আইপিএল। সুদর্শনের সুদর্শন ব্যাটিংয়ে মুগ্ধ হচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেট। জাতীয় দল এখন আর তাই দূর আকাশের তারা নয়। বরং তা মুঠোবন্দীর দূরত্বে। সেটা যেন কেবলই সময়ের অপেক্ষা।

সাই সুদর্শনের সেই সময়টা আসবে কবে!

মন্তব্য করুন: