বিশ্বকাপে ভরসা যখন ‘দোয়া’ আর ‘ভাগ্য’

বিশ্বকাপে ভরসা যখন ‘দোয়া’ আর ‘ভাগ্য’

দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত কোনো রোগীকে ডাক্তার যখন জবাব দিয়ে দেন, তখন সৃষ্টিকর্তার দয়া আর মানুষের ‘দোয়া’ কামনা ছাড়া তার আর কিছু করার থাকে না। সব ছেড়ে দিতে হয় ভাগ্যের ওপর। বাংলাদেশের ক্রিকেটও এখন যেন সেই দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত। তাই মিডিয়ার সামনে এলেই ক্রিকেটারেরা দোয়া চান। ভাগ্যের দোহাই দেন!

সোশ্যাল মিডিয়ায় গত কিছুদিন ধরেই ট্রেন্ড হিসেবে চলছে ‘মায়ের দোয়া ক্রিকেট টিম’। ক্রিকেটারেরা একের পর এক জঘন্য পারফর্ম্যান্সের পর যে হারে দোয়া ভিক্ষা করছেন, তাতেই সৃষ্টি হয়েছে এই নামের। বাংলাদেশের ক্রিকেট কী কী রোগে আক্রান্ত- সেটা সবার জানা। তৃণমূল ক্রিকেট নেই, ঘরোয়া লিগের মান নেই, জাতীয় দলের পাইপলাইনে খেলোয়াড় নেই, জাতীয় দলের সংস্পর্শে থাকা ক্রিকেটারদের সঠিক পরিচর্যা নেই…। এসব বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। সহস্রবার লেখা হচ্ছে পত্রিকার পাতায়। কিন্তু এসব রোগের ওষুধ দেওয়ার কেউ নেই।

ঠিক এসব কারণেই ফর্মহীন লিটন দাসকে বিশ্বকাপে নিতে হয়। অধারাবাহিকতার পুরনো রোগ বয়ে চলা সৌম্য সরকারকে নিতে হয়। অধিনায়ক শান্ত স্বয়ং ফর্ম হারিয়ে দোয়ায় ভরসা রাখেন। আসলে বিশ্বকাপ দলে নেওয়ার জন্য এর চেয়ে ভালো অপশন বিসিবির হাতে নেই। ঘুরে ফিরে সেই ১৮-২০ জন থেকেই দল নির্বাচন করতে হয়। এবারের বিশ্বকাপের আগে সেই ১৮-২০ জনের বেশিরভাগই ফর্ম হারিয়ে ফেললেন! ফলে বাধ্য হয়ে তাদেরকে নিয়েই যেতে হলো বিশ্বকাপে। আসর শুরুর আগে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পেতে হলো সিরিজ হারের লজ্জা।

আগামী শনিবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করবে বাংলাদেশ। গত কয়েকমাসে দলের যে পারফর্ম্যান্স, তাতে সবচেয়ে সবচেয়ে অন্ধভক্তও হয়তো এবারের বিশ্বকাপে দলের থেকে নূন্যতম কোনো আশা করছেন না। ক্রিকেটাররাও কি আশা করছেন? সম্ভবত না। তাদের সেই আত্মবিশ্বাস টলে গেছে। তাই ক্যামেরার সামনে এসে বারবার দোয়া চাচ্ছেন। ডালাসে মঙ্গলবার তাসকিন আহমেদ যেমন বললেন, “দোয়া করবেন যেন প্রথম ম্যাচে আমরা ভালো করতে পারি।”

ঠিক তেমনই বিসিবির ভিডিওবার্তায় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বুধবার বললেন, “ট্রফি জিনিসটা আমার মনে হয়, অবশ্যই এটা ভাগ্যেরও সহায়তা লাগে। আমরা হয়তো কয়েকটা বড় টুর্নামেন্টে খুব কাছাকাছি গিয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমরা পারিনি। আরেকটি সুযোগ আসছে। আমাদের সমর্থন করুন।”

৩৮ বছর বয়সী মাহমুদউল্লাহ যে সুযোগ কাজে লাগানোর কথা বললেন, তেমন আরও অনেকেই বলেছেন। সৌম্য সরকার তো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথাও বলেছেন। প্রশ্ন হলো, তারা কি নিজেরা এগুলো বিশ্বাস করেন? ফাইনাল তো দূর, ন্যূনতম সেমিফাইনালে যাওয়ার আত্মবিশ্বাস কি তাদের মাঝে আছে? গ্রুপ পর্বের চারটি ম্যাচে অন্তত দুটি জেতার আত্মবিশ্বাস আছে? প্রশ্নগুলোর উত্তর হয়তো নাজমুলদের কাছে নেই। থাকলে তারা দোয়া কিংবা ভাগ্যের ওপর ভরসা করে বসে থাকতেন না। নিজেদের চেষ্টাটাও চালিয়ে যেতেন।

মন্তব্য করুন: