লেগ স্পিনারের মূল্য বোঝে না বাংলাদেশ: হাথুরুসিংহে
১০ জুন ২০২৪
বাংলাদেশ ক্রিকেটে লেগ স্পিনার অভাব ছিল দীর্ঘদিনের। তবে সম্প্রতি সেই অভাব কিছুটা হলেও পূরণের চেষ্টা করছেন রিশাদ হোসেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে দলের জয়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার রেখেছেন তিনি। তরুণ এই ক্রিকেটারের ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স নিয়ে সন্তুষ্ট চন্ডিকা হাথুরুসিংহেও। কিন্তু দেশের ক্রিকেট কাঠামোতে যে লেগ স্পিনারদের জন্য আলাদা কোনো জায়গা নেই তা নিয়েও আক্ষেপ ঝরেছে হেড কোচের কণ্ঠে।
ডালাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে বিশ্বকাপের মঞ্চে প্রথমবারের মতো কোনো বিশেষজ্ঞ লেগ স্পিনার নিয়ে একাদশ সাজায় বাংলাদেশ। সুযোগ পেয়েই বাজিমাত করেন রিশাদ। ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। জেতেন ম্যাচসেরার খেতাবও।
অথচ জাতীয় দলে অভিষেকের আগে ঘরোয়া ক্রিকেটে তেমন একটা সুযোগই পেতেন না রিশাদ। গত বছর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টুয়েন্টি এবং নিউ জিল্যান্ড সফরে ওয়ানডেতে অভিষেক হয় এই লেগ স্পিনারের। তবে চলতি বছর শ্রীলঙ্কা সিরিজ দিয়ে তিনি মূলত দলের আস্থা অর্জন করেন। এরপর নিয়মিত সুযোগ পান ঘরোয়া ক্রিকেটেও।
দেশের ক্রিকেটে লেগ স্পিনারদের এমন দশার কথা ভালোই জানা আছে হাথুরুসিংহের। ২০১৪ সালে প্রথম মেয়াদে বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর লেগ স্পিনে বাড়তি গুরুত্ব দেন তিনি। সে সময় তিন ফরম্যাটে জুবায়ের হোসেনকে অভিষেক করান এই কোচ। কিন্তু পূর্ণ সমর্থন না পাওয়ায় বেশি দিন টিকতে পারেননি জুবায়ের। খুব একটা সুযোগ পাননি ঘরোয়া ক্রিকেটেও।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনেও উঠে আসে দেশের ক্রিকেটে লেগ স্পিনারদের অবস্থার কথা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে রিশাদের ম্যাচ জেতানো বোলিংয়ের প্রশংসা করতেও ভুল করেননি হাথুরুসিংহে। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতিতে লেগ স্পিনের সামগ্রিক অবস্থান নিয়ে নিজের আক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন হেড কোচ।
“আমরা প্রায় এক বছর ধরে তাকে (রিশাদ) সমর্থন করছি। আমরা জানতাম, সে আমাদের ম্যাচ জেতাবে। ওই ম্যাচটি জেতানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এটা খুবই সন্তোষজনক ছিল। আপনারা সবাই জানেন, আমাদের জন্য দলে লেগ স্পিনার নেওয়াটা কতটা চ্যালেঞ্জের। আমি কাউকে দোষ দিচ্ছি না। এটাই মূলত আমাদের সংস্কৃতি। আমরা লেগ স্পিনারের মূল্য বুঝি না।”
দলের সমর্থন পেয়ে ম্যাচে রিশাদও নিজেকে দারুণভাবে মেলে ধরেন। প্রথম দুই ওভারে ১৬ রান দিলেও ম্যাচের চিত্র পালটে দেন ১৫তম ওভারে। আক্রমণে ফিরেই পরপর দুই বলে তুলে নেন চারিত আসালাঙ্কা ও ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার উইকেট। নিজের শেষ ওভারে সাজঘরে ফেরান ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে। এই স্পেলে ৬ রানে ৩ উইকেট নিয়ে লঙ্কান ইনিংসের লাগাম টানেন ২১ বছর বয়সী এই লেগ স্পিনার।
প্রথম দুই ওভারে খরুচে হওয়ার পরেও রিশাদের ওপর আস্থা রাখায় অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে কৃতিত্ব দিয়ে হাথুরুসিংহে বলেন, “এমকি এই ম্যাচেও (শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে) সে প্রথম দুই ওভারে রান দিয়েছে। এরপরেও শান্ত শেষ দুই ওভারের জন্য ওকে বোলিংয়ে এনেছে এবং ম্যাচ বদলে দিয়েছে। শান্তকে তাই কৃতিত্ব দিতেই হবে। আমার মতে, আমরা এখন দল হিসেবে লেগ স্পিনের মূল্যটা বুঝতে পারছি। তার আত্মবিশ্বাস বাড়ছে।”
সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টায় নিউ ইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। এই ম্যাচ জিতলে ‘ডি’ গ্রুপ থেকে সুপার এইটের পথ অনেকটাই সুগম হয়ে যাবে শান্তর দলের জন্য।
মন্তব্য করুন: