রিংকুর জীবনের গল্পটাও ৫ বলে ৫ ছক্কার মতোই
১০ এপ্রিল ২০২৩
ম্যাচের শেষ ৫ বলে ৫ ছক্কা। তাতেই জয়! এও কী হয়! হওয়া সম্ভব! অবিশ্বাস্য সেই বীরত্ব রিংকু সিংয়ের ব্যাটে। অলৌকিক এক জয় কলকাতা নাইট রাইডার্সের।
৯ এপ্রিল ২০২৩। তারিখ ভুলে গেলেও এই দিনটি কখনও ভুলবেন না ক্রিকেটপ্রেমীরা। বিশেষত কলকাতা নাইট রাইডার্স সমর্থকরা তো নয়ই। আইপিএলে গুজরাট টাইটানসের বিপক্ষে ম্যাচটি এমন এক জায়গায় এসে দাঁড়ায়, যেখান থেকে জয়ের স্বপ্ন হয়তো দেখেনি কলকাতার কেউ। পরাজয়ের নূন্যতম আশঙ্কাও হয়তো ছিল না গুজরাটের কারও। এরপরই তো, যেমনটা বলা হয় আর কী, ইতিহাস! রিংকুর ব্যাটে ইতিহাস।
শেষ ওভারে দরকার ২৯ রান। উমেশ যাদবের সিঙ্গেলে স্ট্রাইকে রিংকু। ৫ বলে প্রয়োজন ২৮ রান। তখন জেতার সমীকরণ কী? একটি বলে চার মারলেও চলবে, তবে বাকি চার বলেই মারতে হবে ছক্কা। অত হিসাব-নিকাশে যাননি রিংকু। যশ দয়ালের ওভারের শেষ পাঁচ বলেই ছক্কায় প্রবেশ তাঁর অমরত্বে।
এমন করে ক্রিকেট ম্যাচ কে কবে জিতিয়েছেন!
রিংকুর ব্যাটে এমন জয়টা হয়ে ওঠে আরও যথার্থ। জীবনের ম্যাচে জিতে জিতেই যে তিনি এত দূর!
উত্তর প্রদেশের আলীগড়ে সাধারণ পরিবারে জন্ম রিংকুর। বাবা খানচন্দ্র সিং কাজ করতেন এলপিজি ডিসট্রিবিউশন কোম্পানিতে। বড় ভাই চালাতেন অটোরিকশা। রিংকুর ভালোবাসা ক্রিকেট। ক্লাস নাইনের পরীক্ষায় ফেল করলে চুকে যায় পড়ালেখার পাট। স্বপ্নটা এরপর কেবলই ক্রিকেট ঘিরে।
দরিদ্র পরিবারের সন্তান হয়েও ক্রিকেটের নেশায় মেতেছিলেন রিংকু। অনেকবার হাল ছেড়ে দেয়ার কথা ভেবেছেন। ক্রিকেট ছেড়ে অন্য কাজ করতে চেয়েছেন। ভাগ্যের পরিহাসে কোন চাকরি খুঁজে পাচ্ছিলেন না তিনি। শুধুমাত্র জীবিকা হিসেবে পরিচ্ছন্ন কর্মীর চাকরি খুঁজে পান। তবে, ক্রিকেট পাগল রিংকু ক্ৰিকেটকে একবারে ছেড়ে দিতে পারেন নি।
ভাগ্যিস ছাড়েননি। নইলে কেকেআর এমন জয়ের নায়ক পেত কোথায়!
রিংকুর ক্যারিয়ার শুরু ২০১৪ সালে বিজয় হাজারে ট্রফিতে। উত্তর প্রদেশের হয়ে লিস্ট ‘এ’-র প্রথম ম্যাচেই করেন ৮৩ রান। বছর দুই বাদে ডাক পান রনজি ট্রফিতে।
আইপিএলে প্রথম ডাক পান ২০১৭ সালে। ১০ লাখ রুপিতে রিংকুকে কেনে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব। তবে পুরো মৌসুমে একটি ম্যাচও একাদশে রাখা হয়নি তাঁকে। তবে, ২০১৮ নিলামে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস এবং কলকাতার মধ্যে ছোট্ট একটা যুদ্ধ হয় রিংকুকে নিয়ে। শেষে ৮০ লাখ রুপিতে রিংকুকে দলে ভেড়ায় কলকাতা।
বড় ক্রিকেটার হবার স্বপ্ন তো আছেই। পাশাপাশি এই অর্থের মূল্যও যে রিংকুর কাছে কতটা, তা বোঝা যায় ওই সময়ে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে, ‘ভেবেছিলাম ২০ লাখ রুপি পাব। কিন্তু আমাকে ৮০ লাখ রুপিতে দলে নেয়া হল। মনের মধ্যে প্রথম চিন্তা আসে, আমি আমার বড় ভাইয়ের বিয়েতে অবদান রাখতে পারব। বোনের বিয়ের জন্যও কিছু সঞ্চয় করতে পারব। আর একটা সুন্দর বাড়ি খুঁজে সেখানে সবাই মিলে থাকব।’
সেই থেকে কেকেআর স্কোয়াডে রিংকু। নিয়মিত না হলেও সুযোগ পেয়েছেন। তবে চোখ ধাঁধানো কিছু সেভাবে করতে পারেননি। হ্যাঁ, দ্রুত রান তোলার দক্ষতার কথা বলেন অনেকে। পুরো আইপিএল ক্যারিয়ারে ২০ ম্যাচে ১৩৯ স্ট্রাইকরেটে ৩৪৯ রান তার কিছুটা সাক্ষ্য দেয়।
তবে বাকি প্রায় পুরোটাই হতাশার। মোটা দাগে এত দিন রিংকু ছিলেন ফ্লপ। সেই তিনিই শেষ পাঁচ বলে পাঁচ ছক্কায় সুপার-ডুপার হিট।
জীবনের খেলায় হারেননি রিংকু সিং। ক্রিকেটের খেলায় তাই হারেন কিভাবে!
মন্তব্য করুন: