যে সমীকরণ মিললে সেমি-ফাইনাল খেলবে বাংলাদেশ

যে সমীকরণ মিললে সেমি-ফাইনাল খেলবে বাংলাদেশ

অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে এক নম্বর গ্রুপের সেমি-ফাইনালে ওঠার লড়াইটা বেশ জমিয়ে দিয়েছে আফগানিস্তান। ভারতের সেমি-ফাইনালে যাওয়া বলতে গেলে মোটামুটি নিশ্চিত। সুযোগ আছে অস্ট্রেলিয়া আর আফগানিস্তান দুই দলেরই। আর কাগজে কলমে টিকে আছে এখন পর্যন্ত সুপার এইটে কোনো পয়েন্ট না পাওয়া বাংলাদেশের সুযোগও। এমনকি সম্ভাবনা আছে টানা দুই ম্যাচ জেতা ভারতের বাদ পড়ারও!

বাংলাদেশ সময় রোববার সকালে সেন্ট ভিনসেন্টে বোলারদের নৈপুণ্যে অস্ট্রেলিয়াকে ২১ রানে হারায় আফগানিস্তান। এই জয়ে ২ পয়েন্ট ও -০.৬৫০ নেট রান-রেট নিয়ে গ্রুপে তিন নম্বরে আছে রশিদ খানের দল। সমান পয়েন্ট নিয়ে নেট রান-রেটে (+০.২২৩) এগিয়ে থাকায় অজিদের অবস্থান দ্বিতীয়। টানা দুই ম্যাচ জিতে ৪ পয়েন্ট ও +২.৪২৫ রান-রেটে সবার ওপরে ভারত। আর দুই ম্যাচ হেরে তালিকার তলানিতে থাকা বাংলাদেশের নেট রান-রেট -২.৪৮৯।

সুপার এইটের লড়াইয়ের শেষ রাউন্ডে ১ নম্বর গ্রুপে বাংলাদেশ সময় সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবে ভারত। বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টায় আফগানদের বিপক্ষে মাঠে নামবে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। এই ম্যাচে বাংলাদেশ বড় ব্যবধানে জিতলে আর অস্ট্রেলিয়া খুব বড় ব্যবধানে হারলে নেট রান-রেটের হিসেবে সেমি-ফাইনালের টিকিট পেতে পারে বাংলাদেশ। সেই হিসেবটা করা যাক।

অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ১ নম্বর গ্রুপের সেমি-ফাইনালের রেস জমিয়ে দিয়েছে আফগানিস্তানভারত আর বাংলাদেশ আগে ব্যাট করলে প্রতিপক্ষরা কত ব্যবধানে হারলে এই সমীকরণ কীভাবে মিলতে পারে তার একটা ধারণা সহজে পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে ভারত ও বাংলাদেশের জয়ের সমষ্টি হতে হবে ৮৬ রানের।

ধরা যাক, ভারত জিতল ৪০ রানে। তাহলে পরের ম্যাচে বাংলাদেশকে জিততে হবে ৪৬ রানে। তাহলে জয়ের যোগফল হবে ৮৬ রান। পয়েন্ট তখন বাংলাদেশ, আফগানিস্তান আর অস্ট্রেলিয়া তিন দলেই সমান ২ হবে। কিন্তু রানরেটে দুই প্রতিপক্ষ থেকে এগিয়ে সেমি-ফাইনালে যাবে বাংলাদেশ।

এখানে আরেকটা শর্ত আছে। ভারত যত বেশি ব্যবধানেই অস্ট্রেলিয়াকে হারাক না কেন, বাংলাদেশকে আগে ব্যাট করলে জিততে হবে কমপক্ষে ৩১ রানে। কারণ ৩১ রানের কম ব্যবধানে জিতলে তো আফগানিস্তানের নেট রান-রেটই টপকাতে পারবে না বাংলাদেশ।

উদাহরণ হিসেবে ভারত ৬০ রানে জিতলেও বাংলাদেশকে জিততে হবে ৩১ রানে। এভাবে ৫৫ রানে ভারত জিতলে বাংলাদেশকে জিততে হবে ৩১ রানেই। তবে এরপর পর থেকে ভারত যত কম রানে জিতবে বাংলাদেশকে ৩১ -এর তত বেশি রানে জিততে হবে, যেন যোগফল হয় কমপক্ষে ৮৬।

বাংলাদেশ বা ভারত যদি পরে ব্যাট করে তাহলেও কিন্তু কত ওভারে কোন দল কীভাবে জিতলে টাইগাররা শেষ চারে যাবে, সেটা বের করা সম্ভব। কিন্তু দুটি ম্যাচে চার দলের আগে-পরে ব্যাট করার বিন্যাস এবং সমাবেশের পর হিসেবটা এত জটিল হবে যে শুধু লিখে তা বোঝানো যাবে না।

তবে শুধু বাংলাদেশের ম্যাচটা ধরে হিসাবটা করে ফেলা যাক। আফগানিস্তান যদি আগে ব্যাট করে ১৬০ রান করে তবে বাংলাদেশ ১৬ ওভার ২ বলে ১৬১ করলে আফগানদের নেট রান-রেট ছাড়িয়ে যেতে পারবে। তখন আগের ম্যাচের ওপর নির্ভর করবে এটাই যথেষ্ট হবে নাকি বাংলাদেশকে আরও কম ওভারের মধ্যে জিততে হবে।

আগের ম্যাচে ভারত জিতলে বাংলাদেশ দলের অ্যানালিস্টকে বের করতে হবে আগে ব্যাট করলে কত রানে জিততে হবে আর পরে ব্যাট করলে আফগানিস্তানের দেওয়া লক্ষ্যে কত ওভারের মধ্যে পৌঁছতে হবে।

আর অস্ট্রেলিয়া জিতে গেলে বাংলাদেশের অ্যানালিস্টের কোনো কষ্ট করতে হবে না। আফগান দলের অ্যানালিস্টের তখন কম্পিউটারের সামনে ব্যস্ত সময় কাটবে। তাকে হিসেব করতে হবে বাংলাদেশকে কী ব্যবধানে হারাতে হবে অস্ট্রেলিয়ার নেট রান-রেট টপকাতে। এমনকি অস্ট্রেলিয়া হেরে গেলেও হয়তো আফগান দলকে হিসেব করতে হবে কী ব্যবধানে বাংলাদেশের কাছে হারলেও আফগানিস্তানের নেট রান-রেট অস্ট্রেলিয়ার উপরে থাকবে।

আফগানিস্তানের কাছে হারায় সুপার এইট থেকেই বাদ পড়ার শঙ্কায় আছে অস্ট্রেলিয়াআবারও রানের ব্যবধানে জয়-পরাজয়ের হিসেব করে একটা ধারণা দেওয়া যেতে পারে। অস্ট্রেলিয়া ১ রানে ভারতকে হারালে আফগানিস্তানকে তখন জিততে হবে ৩৬ রানে।

আবার অস্ট্রেলিয়া আর আফগানিস্তান দুই দলই যদি পরে ব্যাট করে হারেতখন অস্ট্রেলিয়া আগের ম্যাচে ৩০ রানে হারলেও তারা নেট রান রেটে এগিয়ে ভারতের সঙ্গী হবে। অজিরা ৩১ রানে হারলেই কেবল আফগানিস্তান ১ রানে হেরে সেমি-ফাইনালে উঠবে। অস্ট্রেলিয়া ৩১ রানের বেশি ব্যবধানে হারলে আফগান অ্যানালিস্ট তখন বের করবেন, হারলেও ব্যবধান কত রানের মধ্যে তাদের রাখতে হতে হবে।

এখানেও কত ওভারে জিততে হবে সেই হিসাবটা লিখে বোঝানো কঠিন। ধরে নিয়ে একটা হিসাব দেওয়া যাক। ধরা যাক, অস্ট্রেলিয়া পরে ব্যাট করে শেষ বলে মানে পুরো ২০ ওভার খেলে ভারতের দেওয়া লক্ষ্য পার হয়ে গেল। তখন বাংলাদেশ ১৬০ রান করলে আফগানিস্তানকে লক্ষ্যে পৌঁছতে হবে ১৫ ওভার ৪ বলে। তবেই নেট রান-রেটে তারা এগিয়ে যাবে। এখন অস্ট্রেলিয়া আরও আগে লক্ষ্যে পৌছে গেলে বা বাংলাদেশ আরও বেশি বা কম লক্ষ্য দিলে আফগানিস্তানকে কত ওভারের মধ্যে জিততে হবে সেটা বের করার দায়িত্ব অ্যানালিস্টের।

কাগজে কলমে বাংলাদেশকে সেমি-ফাইনালে ওঠানো যেমন দুরূহ, তেমনি টানা দুই ম্যাচ জেতা ভারতের বাদ পড়া প্রায় অসম্ভব। সেই হিসাব আর নাই-বা করা হলো।

মন্তব্য করুন:

Add