আগেই কি হাল ছেড়ে দিল বাংলাদেশ?

আগেই কি হাল ছেড়ে দিল বাংলাদেশ?

আগের ওভারেই রশিদ খানকে পরপর দুটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দলকে সেমি-ফাইনালে তোলার পথেই রেখেছিলেন লিটন দাস। তবে পরের ওভারেই আশা উবে গেল ৫টি ডট বলে। ক্রিজে নতুন আসা ব্যাটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এক বাউন্ডারিতে পুরো ওভারে নিলেন কেবল রান। তার হাল ছেড়ে দেওয়া ব্যাটিং দেখে বিস্ময় প্রকাশ করছিলেন টিভির ধারাভাষ্যকাররাও। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাখ্যাও কি সন্তোষজনক?

সেন্ট ভিনসেন্টে বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার সকালে সুপার এইটের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানকে ১১৫ রানে আটকে রাখে শান্তর দল। সমীকরণ অনুযায়ী ১২ ওভার বলে ১১৬ রান করতে পারলে প্রথমবারের মতো টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে খেলা সুযোগ পেত বাংলাদেশ।

দ্রুত রান তুলতে গিয়ে উইকেট হারাতে থাকা দলকে সে পথেই রাখছিলেন লিটন। রশিদের নবম ওভারে দুই বাউন্ডারিতে যোগ করেন ১০ রান। ফলে পরের ১৯ বলে ৪৩ রান করতে পারলে শেষ চারের টিকিট পেত টাইগাররা। ম্যাচের পরিস্থিতি, বৃষ্টির শঙ্কা, আফগানদের ফর্মে থাকা বোলারদের কথা বিবেচনা করলে অবশ্য এটা অনেক কঠিন, কিন্তু অসম্ভব তো নয়। আর না পারলেও চেষ্টা করতে তো দোষের কিছু ছিল না। 

কিন্তু ম্যাচে প্রথমবারের মতো বোলিংয়ে আসা নুর আহমেদের দশম ওভারে সব আশায় পানি ঢেলে দেন মাহমুদউল্লাহ। চতুর্থ বলে একটি চার ছাড়া বাকি পাঁচ বলে কোনো রানই নিতে পারেননি ৩৮ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার। পুরো ওভারেঅভিজ্ঞএই ক্রিকেটারের এমন ব্যাটিং দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন তিন ধারাভাষ্যকার।

সেমি-ফাইনালে ওঠার চেষ্টা বাদ দিয়ে কেবল জয়ের জন্য খেলার মনোভাবের কঠোর সমালোচনাও করেন তারা। সেমি-ফাইনালে খেলার চেয়ে আর কী গর্বের বিষয় হতে পারে তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন একজন। নিউ জিল্যান্ডের জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার সাইমন ডুল তো বলেই বসেন ম্যাচ জয়ের অর্থ পুরস্কার পাওয়ার জন্য খেলছে বাংলাদেশ।

তাদের সামনে সেমি-ফাইনালে খেলার সুযোগ আছে। তবে তাদের দেখে একদমই চিন্তিত মনে হচ্ছে না।

এটা অবিশ্বাস্য তাই না? কেউ হয়তো বলবে বাংলাদেশ মান বাঁচাতে খেলছে। কিন্তু শেষ ম্যাচ জিতে বাড়িতে যাওয়ার চেয়ে সেমিতে যাওয়া বেশি সম্মানের।

তারা যদি জেতে তাহলে কিছু পরিমাণে টাকা পাবে।... তারা কি এটার জন্যই খেলছে?”

আমরা তোমাদের (আফগানিস্তান) সেমিতে যেতে দেব না - জন্যই কি তারা খেলছে?”

নুর আহমেদের দশম ওভারেই বাংলাদেশের সেমির আশা শেষ করে দেন মাহমুদউল্লাহঅবশ্য বাংলাদেশের সামনে ছিল আরেক প্রতিপক্ষ বৃষ্টি। যে কোনো সময় সম্ভাবনা ছিল বৃষ্টিতে বাকি খেলা না হওয়ার। তখন চার-ছক্কা মারার চেষ্টায় উইকেট পড়ে গেলে ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে স্থির করা লক্ষ্যের চেয়ে পিছিয়ে থেকে হেরে যেত বাংলাদেশ। সেমি-ফাইনাল বা জয় কোনোটাই তখন এমনিতেই হতো না। সেজন্যই কি রানের গতি না বাড়িয়ে উইকেট ধরে রাখায় সচেষ্ট ছিল বাংলাদেশ? তবে নুর আহমেদের করা দশম ওভারে অন্তত সমীকরণ মেলানোর চেষ্টাটা করা উচিত ছিল বলে বেশিরভাগই হয়তো একমত হবেন।

তবে শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত জয়টুকুও পায়নি বাংলাদেশ। রানে ম্যাচ জিতে প্রথমবারের মতো শেষ চারের টিকিট নিশ্চিত করে আফগানরা।

ম্যাচ শেষে অধিনায়ক শান্ত জানান, শুরুতে উইকেট হারিয়ে ফেলার পর তারা সেমি-ফাইনালের জন্য খেলার পরিকল্পনা থেকে সরে আসেন। আর শেষ পর্যন্ত ম্যাচ হারায় দায়টা তিনি দিলেন মিডল-অর্ডারদের।

আমাদের পরিকল্পনা ছিল প্রথম ওভার চেষ্টা করব। শুরুতে যদি খুব বেশি উইকেট না হারাই তাহলে সেই সুযোগটা নেব। কিন্তু দ্রুত উইকেট পড়ে যাওয়ায় আমরা পরিকল্পনা করি কীভাবে ম্যাচটা জেতা যায়। তারপর আমি বলব মিডল-অর্ডাররা রকম ভালো সিদ্ধান্ত নেয়নি। যে কারণে আমরা ম্যাচটা হেরে গেছি।

বাংলাদেশের উইকেট তো পড়ে তৃতীয় ওভারে মুখোমুখি প্রথম বলেই সাকিব আল হাসানের আউটে। ওই ওভার শেষ সেমি-ফাইনালে ওঠার সমীকরণ মেলাতে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ওভার বলে ৯২ রান, হাতে ছিল উইকেট। শান্তর কথা অনুযায়ী, এত আগেই হাল ছেড়ে দিল বাংলাদেশ? তবে টাইগারদের হাল ছাড়ার বিষয়টা প্রকট হয়ে ওঠে সেই ডট বলের দশম ওভারে।

এখন তিন ওভার শেষেই হোক বা নয় ওভার শেষেই হোক, আগেভাগেই কি হাল ছেড়ে দিল বাংলাদেশ?

মন্তব্য করুন: