ফিনিশারের হাতে শেষ বাংলাদেশ ক্রিকেট

ফিনিশারের হাতে শেষ বাংলাদেশ ক্রিকেট

নিভৃতচারী ক্রিকেটার হিসেবে তিনি বহুল পরিচিত। মিডিয়ার সামনে আসেন না বললেই চলে। নিরবে নিভৃতে নিজের কাজটা করে যান। কিন্তু তার সেই কাজটা কী? লোয়ার মিডল অর্ডারে নেমে দলকে জেতানো- তাই তো? এমন কিছু ম্যাচ জিতিয়েই তিনি ‘ফিনিশার’ উপাধি পেয়েছেন। কিন্তু তিনি যত না জিতিয়েছেন, তার চেয়ে বেশি ডুবিয়েছেন দলকে! সেই পরাজয়গুলো এমন সব মঞ্চে, যাতে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বিব্রত হওয়াই উচিত।

২০১২ এশিয়া কাপ ফাইনাল কিংবা ২০১৬ টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে সেই ৩ বলে ২ রান নিতে না পারার ম্যাচ- দুটিতেই জড়িয়ে আছেন মাহমুদউল্লাহ। সেগুলো তো বহুবার চর্চিত হয়েছে। এবার ২০২৪ টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে তার কারিশমা দেখা যাক। 

গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ। রান তাড়ায় দ্বাদশ ওভারে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে তিন ছক্কা মেরে ম্যাচটা বের করে ফেলেছিলেন তাওহীদ হৃদয়। বাকি ছিল শুধু ফিনিশিং। ৪৮ বলে চাই ৩৩ রান। কিন্তু ‘ফিনিশার’ মাহমুদউল্লাহর কল্যাণে সেই ম্যাচের সমীকরণ দাঁড়াল ১২ বলে ১১ রানে। পরিস্থিতির দাবির বিপরীতে পুরনো অভ্যাসমতোই তিনি বোলারদের স্ট্রাইকে পাঠিয়ে সেইফ জোনে থাকছিলেন। তাই সহজ ম্যাচটি জিততে বাংলাদেশকে রীতিমতো ঘাম ঝরাতে হয়েছে! ১৯তম ওভারে ছক্কা মেরে তিনি নায়ক বনে যান বটে, কিন্তু সবসময় কি শেষ ওভারে ছক্কা হয়?

দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচেই দেখুন না, মাহমুদউল্লাহ ছক্কা মারতে গিয়ে কী করেছিলেন! শক্তিশালী দলটিকে বাংলাদেশ প্রায় হারিয়েই দিয়েছিল। কিন্তু মাহমুদউল্লাহর অযৌক্তিক ব্যাটিংয়ে ম্যাচটি গড়ায় শেষ ওভারে, প্রয়োজন পড়ে ১১ রানের। সেই শেষ ওভারেও তিনি নিজেকে নিরাপদে রেখে স্ট্রাইক দিতে থাকেন বোলারদের! এক পর্যায়ে শেষ দুই বলে প্রয়োজন হয় ৬ রানের। স্ট্রাইকে মাহমুদউল্লাহ থাকায় অনেকে ধরেই নেয় যে, বাংলাদেশ জিতে যাচ্ছে! কিন্তু কেশব মহারাজের ফুলটস বলে ছক্কা মারতে গিয়ে ধরা পড়েন সীমানায়! ঠিক একই কাজ তিনি করেছিলেন ২০১৬ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে! এবারও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রায় জিতে যাওয়া ম্যাচটি বাংলাদেশ হেরে যায় ৪ রানে।

এরপরও গ্রুপ পর্বে তিনটি ম্যাচ জেতে বাংলাদেশ, যা নিজেদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ। আর এবারের বিশ্বকাপের ৭ ম্যাচে ১৫ গড়ে ৯৫ রান করা মাহমুদউল্লাহ তার পরিস্থিতির বিপরীতে ব্যাটিংয়ের চরম প্রদর্শনী দেখান মঙ্গলবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে সুপার এইটের ম্যাচে। সমীকরণ অনুযায়ী, তখন ১৯ বলে ৪৩ রান করলে বাংলাদেশ সেমিফাইনালে যাবে। সবাইকে বিস্মিত করে তিনি নূর মোহাম্মদে করা দশম ওভারে নিলেন মাত্র ৪ রান! পাঁচ বলে কোনো রানই নিতে পারেননি। তার ব্যাটিং দেখে মনেই হচ্ছিল না যে, রান নেওয়ার বা চার-ছক্কা মারার কোনো ইচ্ছে আছে! একের পর এক বল ডিফেন্ড করে যাচ্ছিলেন।

ধারাভাষ্যকারেরা পর্যন্ত হতভম্ব হয়ে যান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৭ বছর কাটিয়ে ফেলা ৩৮ বছর বয়সী একজন ক্রিকেটারের এমন কাণ্ড দেখে! সাইমন ডুল তো এক পর্যায়ে বলেই ফেলেন, “তারা যদি জেতে তাহলে কিছু পরিমাণে টাকা পাবে।... তারা কি এটার জন্যই খেলছে?” তবে এদিন মাহমুদউল্লাহ সেটাও করতে পারেননি। রশিদ খানের বলে আউট হয়েছেন ৯ বলে ৬ রানে।

গত টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের পর সাদা বলের দল থেকে বাদ পড়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। তার ভায়রা ভাই মুশফিকুর রহিম অবসর নিলেও তিনি নেননি। বরং দল থেকে বাদ দেওয়ায় তার স্ত্রী-শ্যালিকারা পর্যন্ত ফেইসবুকে সরব হয়েছিলেন। এক পর্যায়ে তাকে দলে ফেরানো হয়। গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি করেন, সেই ম্যাচে দল হেরে যায়। এরপর ফেরেন টি-টুয়েন্টি দলেও।

কোনো অবদান ছাড়াই বারবার মাহমুদউল্লাহকে দলে সুযোগ দেওয়ার কারণ- বিকল্প নেই। পাইপলাইন শূন্য। দলে জায়গা ধরে রাখা নিয়ে প্রতিযোগিতা নেই। হাথুরুসিংহের ওপর অভিমান করে একবার টেস্ট থেকে অবসর নিয়েছিলেন। তাকে কেউ ফেরাতে যায়নি। সাদা বলেও তিনি এমন কিছু চিন্তা করতে পারেন। মনে হয় না, কেউ তাকে ফেরাতে যাবে।

মন্তব্য করুন: