দক্ষিণ আফ্রিকাকে ‘চোকার্স’ বানিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারত

দক্ষিণ আফ্রিকাকে ‘চোকার্স’ বানিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারত

অবিশ্বাস্য! এমন ম্যাচও হারা সম্ভব! আবারও বৈশ্বিক আসরে চোক করল দক্ষিণ আফ্রিকা! ভারতের বিপক্ষে প্রায় জিতে যাওয়া ফাইনাল তারা হেরে বসল ৭ রানে! ক্যারিবিয়ান সাগর পাড়ে রোমাঞ্চকর ফাইনাল জিতে ১৭ বছর পর আরও একবার টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুলল রোহিত শর্মার ভারত। এর মাধ্যমে ঘুচল আইসিসির আসরে তাদের ১১ বছরের শিরোপা খরা। বল হাতে শেষ ওভারের নায়ক হার্দিক পান্ডিয়া। যদিও ম্যাচসেরা হয়েছেন বিরাট কোহলি। ১৫ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টসেরা জসপ্রিত বুমরাহ।

প্রোটিয়াদের ব্যাটিংয়ের শুরুতেই ভারতকে ব্রেক থ্রু এনে দেন জসপ্রিত বুমরাহ। দ্বিতীয় ওভারেই বোল্ড করে দেন রেজা হেনড্রিকসকে (৪)। পরের ওভারেই আর্শদীপ সিংয়ের শিকার প্রোটিয়া অধিনায়ক এইডেন মার্করাম (৪)। ১২ রানে ২ উইকেট হারানো দলকে টেনে তোলার দায়িত্ব নেন কুইন্টন ডি কক আর ট্রিস্টান স্টাবস। দুজনের জুটি দারুন জমে ওঠে। মাঝেমধ্যেই দুজনে পাল্টা আক্রমণে রানরেট বাড়িয়ে নিচ্ছিলেন। নবম ওভারে ৩৮ বলে ৫৮ রানের এই জুটি ভাঙেন অক্ষর প্যাটেল।

স্কুপ খেলতে গিয়ে পরিস্কার বোল্ড হয়ে যান ২১ বলে ৩ চার ১ ছক্কায় ৩১ রান করা স্টাবস। এই ধাক্কায় কোনো ক্ষতিই হয়নি প্রোটিয়াদের। বরং হাইনরিখ ক্লাসেন এসে ডি ককের সঙ্গে ব্যাটিং তাণ্ডব শুরু করেন।  ভারতের কোনো বোলার দাঁড়াতেই পারছিলেন না। ৭০ বলে একশ রান করে ফেলে দক্ষিণ আফ্রিকা। ৩১ বলে ৩৯ করা ডি কক আউট হলেও রান তোলার ধারা অব্যাহত থাকে। ক্লাসেনের সঙ্গী হন ডেভিড মিলার। ভারত ম্যাচ থেকে ছিটকে যায়। শেষ ৫ ওভারে প্রোটিয়াদের দরকার পড়ে মাত্র ৩০ রান।

সপ্তদশ ওভারে ২৭ বলে ৫২ রান করা ক্লাসেনকে ফিরিয়ে ২২ বলে ৪৫ রানের টর্নেডো জুটি ভাঙেন হার্দিক পান্ডিয়া। জয়ের জন্য চাই ২৬ রান। ১৮তম ওভারে জসপ্রিত বুমরাহর অসাধারণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে যান মার্কো ইয়ানসেন (২)। ওই ওভারে বুমরাহ দেন মাত্র ২ রান। হঠাৎই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ভারত। ১৯তম ওভারে আর্শদীপ দেন ৪ রান। শেষ ওভারে দরকার পড়ে ১৬ রানের। প্রথম বলেই হার্দিক পান্ডিয়াকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সীমানা দড়ির ওপর সূর্যকুমারের অসাধারণ ক্যাচে পরিণত হন ১৭ বলে ২১ রান করা ডেভিড মিলার।

বল একবার হাতে নিয়ে ভারসাম্য না রাখতে পেরে সীমানার বাইরে চলে যাচ্ছিলেন সূর্যকুমার। দড়ি পেরোনোর আগে বল ভেতরে ছুড়ে দিয়ে ফের মাঠে প্রবেশ করে ক্যাচ নেন। পরের বলে বাউন্ডারি হাঁকান রাবাদা। পরের দুই বলে লেগ বাই থেকে আসে দুটি সিঙ্গেল। শেষ দুই বলে চাই ১০ রান। পরের বলে একটা ওয়াইড। পঞ্চম বলে রাবাদা ক্যাচ তুলে দিতেই ভারতীয় দলে শুরু হয় উৎসব। নো বল ছাড়া ১ বলে তো আর ৯ রান সম্ভব না। ৭ রানের জয়ে বিশ্বকাপ জিতে নেয় ভারত। জয়ের নায়ক হার্দিক ২০ রানে নেন ৩ উইকেট।

এর আগে বার্বাডোজে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে শনিবার টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ৭ উইকেটে ১৭৬ রান তোলে ভারত। শুরুতেই তাদের কাঁপিয়ে দিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তাদের আগ্রাসী বোলিংয়ে ৩৪ রানেই নেই ৩ উইকেট। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে অধিনায়ক রোহিত শর্মা (৯) আর রিশাভ পান্তকে (০) ফিরিয়ে বড় ধাক্কা দেন কেশব মহারাজ। চারে নেমে সূর্যকুমার যাদবও জ্বলে উঠতে পারেননি। কাগিসো রাবাদার বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ৪ বলে ৩ রান করে। এরপরই বিরাট কোহলির সঙ্গে দারুণ জুটি গড়েন অক্ষর প্যাটেল।

চাপের মধ্যে ধীরগতির ব্যাটিংয়ে ৪৮ বলে ফিফটি পূরণ করেন কোহলি। এরপর তিনি হাত খোলেন। ৫৪ বলে ৭২ রানের এই জুটি ভাঙে অক্ষর প্যাটেলের বিদায়ে। ৩১ বলে ১ চার ৪ ছক্কায় ৪৭ রান করা অক্ষর রান-আউট হয়ে যান। এরপর কোহলিও ৫৯ বলে ৬ চার ২ ছক্কায় ৭৬ রান করে শিকার হন মার্কো ইয়ানসেনের। শেষ ওভারে আনরিখ নর্কিয়ার বলে ক্যাচ দেওয়ার আগে শিবম দুবে খেলেন ১৬ বলে ২৭ রানের ক্যামিও। ইনিংসের শেষ বলে আউট হন রবীন্দ্র জাদেজা (২)। ২০ ওভারে ভারত ৬ উইকেটে তোলে ১৭৬ রান। ২টি করে উইকেট নেন কেশব মহারাজ আর আনরিখ নর্কিয়া। একটি করে নেন মার্কো ইয়ানসেন আর কাগিসো রাবাদা।

মন্তব্য করুন: