শত বিদ্রূপ সয়ে বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক হার্দিক পান্ডিয়া
৩০ জুন ২০২৪
বিশতম ওভারের শেষ বলটি আনরিখ নরকিয়ার ব্যাট ছুঁয়ে মিড উইকেটে আর্শদীপ সিংয়ের হাতে জমা পড়তেই বোলিং প্রান্তে বসে পড়লেন হার্দিক পান্ডিয়া। চোখে বিশ্বকাপ জয়ের হাসি, চোখে জল। সেই জল দ্রুতই অশ্রুধারা হয়ে ঝরতে লাগল। গত তিন মাস ক্যারিয়ারের দুর্বিসহ সময় কাটিয়ে, শত বিদ্রূপ সয়ে তিনিই তো ভারতকে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ এনে দিলেন! ১৭ বছর পর।
অথচ গত আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়কের অধিনায়ক হওয়াকে কেন্দ্র করে কতই না বিদ্রুপ সইতে হয়েছিল হার্দিককে। মাঠে নামলেই দর্শকরা তাকে দুয়ো দিত। চোটের কারণে বোলিং করতে পারতেন না। ব্যাটিংয়ে ছিলেন চরম ব্যর্থ। তার দল মুম্বাইও প্লে অফে যেতে পারেনি। সব দায় চাপে হার্দিকের ওপর। ভারতীয় দর্শকদের বড় একটা অংশ তাকে মেনেই নিতে পারছিলেন না।
আইপিএলে ব্যর্থ হওয়ার পর টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে হার্দিক পান্ডিয়াকে রাখায় সমালোচনার মুখে পড়েন ভারতের নির্বাচকেরা। কারণ ইনফর্ম রিংকু সিং সুযোগ পাননি। দাবি ওঠে দলে পরিবর্তন আনার। কিন্তু ভারতের নির্বাচকমন্ডলী, অধিনায়ক রোহিত শর্মা আর কোচ রাহুল দ্রাবিড় তাদের অবস্থানে অনড় থকেন। মুখ বুজে সবকিছু সহ্য করে বিশ্বকাপ খেলতে যান হার্দিক।
বিশ্বকাপের মঞ্চে যেন হার্দিকের পারফর্মেন্স বদলে যায়। বড় মঞ্চে তিনি ফর্ম ফিরে পান। তার পারফর্মেন্স এতটাই ভালো ছিল যে, বার্বাডোজে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে রুদ্ধশ্বাস ফাইনালের শেষ ওভারে প্রোটিয়াদের যখন ১৬ রান প্রয়োজন, তখন হার্দিকের হাতেই বল তুলে দেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। সেই ওভারে মাত্র ৮ রান দিয়ে হার্দিক তুলে নেন জোড়া উইকেট। যাতে ডেভিড মিলারের মহাগুরুত্বপূর্ণ উইকেটও ছিল।
১১ বছর পর ভারতের বৈশ্বিক শিরোপা জয়ের মঞ্চে হার্দিক ৩ ওভারে ২০ রানে নেন ৩ উইকেট। ম্যাচ শেষে প্রতিক্রিয়ায় তিনি দুঃসময়ের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “খুবই আবেগী মুহূর্ত। এতদিন কিছু একটা ক্লিক করছিল না, কিন্তু পুরো দেশ এটাই চেয়েছিল। গত ছয় মাস আমি একটা কথাও বলিনি। আমার সঙ্গে অন্যায় হয়েছিল। কিন্তু আমি জানতাম, একদিন আসবে যেদিন আমি জ্বলে উঠব। এমন বড় মঞ্চে সেটা করতে পেরে খুব ভালো লাগছে। শেষ ওভারে আমি জানতাম, আমাকে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে্ আমি শান্ত ছিলাম। কারণ, আমি চাপের পরিস্থিতি উপভোগ করি।”
প্রচণ্ড চাপকে মোকাবেলা করে হার্দিক এখন বিজয়ী। বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসে লেখা হয়ে গেল তার নাম। ১৭ বছর পর ভারত টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতল হার্দিকের হাত ধরেই। ফাইনালে ম্যাচসেরার পুরস্কার বিরাট কোহলির হাতে উঠলেও আসল নায়ক তো হার্দিকই।
মন্তব্য করুন: