ব্যাটারদের যুগে বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় বুমরাহ

ব্যাটারদের যুগে বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় বুমরাহ

বোলিংয়ের রান-আপ অন্য সব ফাস্ট বোলারদের মতো খুব একটা বড় না হলেও ২২ গজের পিচে গতির ঝড় তোলেন বেশ। স্লোয়ার ডেলিভারিও দিতে পারেন দুর্দান্ত। নিখুঁত লাইন লেন্থের সঙ্গে রয়েছে দুর্ধর্ষ ইয়োর্কার। এভাবেই দারুণ দক্ষতার সঙ্গে যে কোনো পিচ কিংবা কন্ডিশনে প্রতিপক্ষ ব্যাটিং লাইন-আপে ভীতি ধরিয়ে দিয়ে আসছেন যশপ্রীত বুমরাহ। ব্যাটারদের ধুম-ধাড়াক্কা ক্রিকেটের যুগে ভারতের এই পেসার হয়েছেন এবারের টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়।

শনিবার বার্বাডোজের ফাইনালে শিরোপা প্রায় নিজেদেরই করে নিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ওভারে তাদের প্রয়োজন ছিল কেবল ৩০ রান। ডেভিড মিলারের সঙ্গে ক্রিজে ছিলেন আগের ওভারেই ২৪ রান তোলা হাইনরিখ ক্লাসেন। ১৬তম ওভারে বোলিংয়ে এসে এই দুই বিধ্বংসী ব্যাটারের বিপক্ষে মাত্র রান দেন বুমরাহ। পরের ওভারে ৫২ রান করা ক্লাসেনকে ফিরিয়ে ভারতকে কিছুটা স্বস্তি দেন হার্দিক পান্ডিয়া।

এরপরের ওভারেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের দিকে নিয়ে আসেন বুমরাহ। সময় ধারাভাষ্যে থাকা ইয়ান স্মিথ বারবার বলছিলেন, বুমরাহ বলকে কথা বলাতে পারে। হয়েছেও ঠিক তাই। গতি স্লোয়ারের মিশেলে করা নিজের শেষ ওভারে ৪টি ডট বলসহ রান দিয়ে তুলে নেন মার্কো ইয়েনসেনের উইকেট। এরপর আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি প্রোটিয়ারা। রানে ম্যাচ জিতে দ্বিতীয়বারের মতো টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতে নেয় ভারত। ১৮ রানের বিনিময়ে বুমরাহর শিকার উইকেট।

আসর জুড়ে বল হাতে দুর্দান্ত পারফর্ম করে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম কোনো বোলার হিসেবে টুর্নামেন্ট সেরার খেতাব জেতেন বুমরাহ। আট ম্যাচে দশমিক ২৬ গড়ে ডানহাতি এই পেসারের শিকার ১৫ উইকেট। ওভার প্রতি রান দেন মাত্র দশমিক ১৭ করে।

বল হাতে বুমরাহর ঝড় তোলার শুরুটা হয়েছিল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম ম্যাচে। রানের বিনিময়ে উইকেট নিয়ে আসর শুরু করেন তিনি। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে বল হাতে দলকে জেতান এই পেসার। জয়ের দারুণ অবস্থানে থাকা বাবর আজমের দলের কাছে সেদিন বুমরাহর সামনে কোনো জবাব ছিল না। ১৪ রানে উইকেট শিকার করে হন ম্যাচসেরা।

এরপর যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ছিলেন উইকেট শূন্য। এই ম্যাচ ছাড়া পরের সব ম্যাচেই বুমরাহ ছিলেন আরও ভয়ংকর। সুপার এইটে আফগানিস্তানের বিপক্ষে মাত্র রানের খরচায় তুলে নেন উইকেট। এরপর বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও ছিলেন দুর্দান্ত। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ৩০ বছর বয়সী এই পেসারের সামনে অসহায় ছিলেন ইংল্যান্ড ব্যাটাররা। দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে তার শিকার ১২ রানে উইকেট।

ফাইনালে ম্যাচের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অধিনায়কের ডাকে সাড়া দিয়ে বোলিংয়ে আসেন বুমরাহ। এসেই নাগালের বাইরে চলে যাওয়া শিরোপা নিজেদের হাতে তুলতে বেশ বড় ভূমিকাও রাখেন। টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার নিতে গিয়ে নিজের চাপ সামলানোর রহস্যের কথা জানান এই ফরম্যাটে ৮৯ উইকেট শিকার করা এই পেসার।

আমি ব্যাপারটা (চাপ) এভাবে দেখি না। যখন মানসিক অবস্থা চূড়ায় থাকে, আমি স্রেফ একটি করে ডেলিভারি নিয়ে ভাবি এবং একটি করে ওভার ভাবনায় রাখি। ম্যাচের পরিস্থিতি নিয়ে একটু আগেভাগেই ভাবল অতিরিক্ত চেষ্টা করে কখনও কখনও নিজের ওপর চাপ নিয়ে ফেলি। কাজেই আমার জন্য যেভাবে কাজে দিচ্ছে, সেভাবেই চেষ্টা করেছি।

মন্তব্য করুন: