বোলারদের বিশ্বকাপে ছক্কার ফুলঝুরি

বোলারদের বিশ্বকাপে ছক্কার ফুলঝুরি

এ বছরের আইপিএলে কিংবা সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রান উৎসব দেখে অনেকেই ভেবেছিলেন টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপটা হবে ব্যাটারদের। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রে টুর্নামেন্টের নবম আসর শুরু হতেই সব ধারণা যেন পাল্টে যায়। আসর জুড়ে ব্যাটারদের উপর ছড়ি ঘুরিয়েছেন বোলাররা। প্রথমবারের মতো টুর্নামেন্ট সেরাও হয়েছেন একজন বোলার। তবে ব্যাটাররা সুবিধা করতে না পারলেও এবারের আসরেই হয়েছে সবচেয়ে বেশি ছক্কা।

বিশ্বকাপে বল হাতে ভারতের শিরোপা জয়ে বেশ বড় অবদান রাখেন যশপ্রীত বুমরাহ। দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের স্বীকৃতি হিসেবে প্রথম কোনো বোলার হিসেবে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের সেরা খেলায়াড় হয়েছেন ডানহাতি এই পেসার।

এক আসরে একশ’র বেশি বল করা বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে কম ইকোনমিও বুমরাহর। আট ম্যাচে ওভার প্রতি রান দিয়েছেন ৪ দশমিক ১৭ করে। বোলিংয়ে ২৯ ওভার ৪ বল করে বাউন্ডারির চেয়ে উইকেট বেশি নিয়েছেন তিনি। টুর্নামেন্টে তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৫ উইকেট শিকার করা এই বোলার বাউন্ডারি খেয়েছেন মাত্র ১২টি। এর মধ্যে আছে স্রেফ দুটি ছক্কা।

কমপক্ষে ১০০ বল করা বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে কম ইকোনমি টুর্নামেন্ট সেরা বুমরাহরসদ্য শেষ হওয়া টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপকে বোলারদের আসর বলার কারণ হলো প্রায় সব ম্যাচেই তাদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স। এই আসরেই চার ওভারের বোলিং স্পেলে সবচেয়ে বেশি ডট বল দেওয়ার রেকর্ড ভেঙেছে বেশ কয়েকবার। তবে পাপুয়া নিউ গিনির বিপক্ষে চার ওভারের ২৪টি বলই ডট দিয়ে সেই রেকর্ডের মালিক এখন নিউ জিল্যান্ডের লকি ফার্গুসন।

শুধু তাই নয়, রান দেওয়ার ক্ষেত্রের এবারের আসরে কিপটেমির রেকর্ড গড়েছে বোলাররা। পুরো আসর মিলিয়ে ওভার প্রতি রান এসেছে ৭.০৯ করে। আগের রেকর্ডটি ছিল ২০২১ আসরে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত সেই আসরে ওভার প্রতি রান হয় ৭.৪৩ করে।

তবে বোলাররা রান দেওয়াতে কিপটেমি করলেও এবারের আসরেই প্রথমবারের মতো পাঁচশ ছক্কার রেকর্ড হয়েছে। ৫৫ ম্যাচের এবারের টুর্নামেন্টে মোট ছক্কা হয়েছে ৫১৭টি। আগের রেকর্ডটি ছিল ২০২১ আসরে ৪০৫টি।

টুর্নামেন্টের ১৭ বছরের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো এবারের বিশ্বকাপে কোনো সেঞ্চুরির মুখ দেখেনি ক্রিকেট বিশ্ব। টুর্নামেন্টে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৯৮ রানের ইনিংসটি খেলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের নিকোলাস পুরান। এর আগে ২০০৯ আসরে সবশেষ সেঞ্চুরিহীন আসর হয়েছিল। সেবার ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৯৬ রানের ইনিংসটি ছিল শ্রীলঙ্কার তিলকারত্নে দিলশানের।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসটি খেলেন পুরানউইকেট শিকারের দিক দিয়েও এগিয়ে ছিল এবারের বিশ্বকাপ। সবচেয়ে বেশি ১৭ বার ৪ বা তার বেশি উইকেট নিয়েছে বোলাররা। আগের রেকর্ডটি ছিল ২০২১ আসরে। সেবার ১৪ বার এই কীর্তি গড়েন বোলাররা।

এবারের আসরের সেরা বোলিং ফিগার উগান্ডার বিপক্ষে ফজলহক ফারুকির ৯ রানে ৫ উইকেট। দুই ম্যাচে ৪ বা তার বেশি উইকেট শিকার করেন আফগানিস্তানের বাঁহাতি এই পেসার। সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকার সবার উপরেও আছেন তিনি। তার সঙ্গী ভারতের আর্শদ্বীপ সিং। এক আসরে সর্বোচ্চ ১৭ উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়েছেন এই দুই তরুণ পেসার। ভেঙে দিয়েছেন ২০২১ আসরে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার ১৬ উইকেটের রেকর্ড।

এবারই প্রথম টি-টুয়েন্টির কোনো বিশ্ব আসরে পাঁচটি পূর্ণ ২০ ওভারের ম্যাচে ১২০ বা তার কম রানের লক্ষ্য দিয়ে ম্যাচ জয়ের রেকর্ড হয়েছে। আগের আট আসরে এই ঘটনা ঘটে স্রেফ একবার। ২০১৪ আসরে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ১১৯ রানে অল-আউট হয়েও ম্যাচ জেতে শ্রীলঙ্কা।

সবচেয়ে বেশি মেডেন দেওয়ার রেকর্ডও হয়েছে এবারের আসরেই। ফল আসা ৫২টি ম্যাচে মেডেন হয়েছে মোট ৪৪টি। এর আগে এক আসরে সবচেয়ে বেশি মেডেনের রেকর্ডটি ছিল ২০১২ সালে। সেবার ২৭ ম্যাচে মেডেন হয় ২১টি।

সবচেয়ে বেশি ৪টি মেডেন দেন নিউ জিল্যান্ডের লকি ফার্গুসনকমপক্ষে ১০ ওভার বোলিং করেছে এমন বোলারদের মধ্যে কোনো ছক্কা না খেয়েই এবারের আসর শেষ করেছেন মোহাম্মদ আমির। পাকিস্তানের হয়ে বাঁহাতি এই পেসার এবারের টুর্নামেন্টে বোলিং করেন ১৬ ওভার বা ৯৬ বল। একমাত্র বোলার হিসেবে দুই বিশ্বকাপে এই কীর্তি গড়লেন তিনি।

এর আগে ২০১০ আসরে ১৩৯ বল করে কোনো ছক্কা খাননি আমির। অবশ্য এই তালিকায় বাঁহাতি এই পেসারের উপরে আছেন তারই স্বদেশি উমর গুল। ২০০৯ আসরে ১৪৭ বলে কোনো ছক্কা না খেয়ে পাকিস্তানকে শিরোপা জিতিয়ে আসর শেষ করে ডানহাতি এই পেসার।

মন্তব্য করুন: