ফিফটি-ফিফটি সিদ্ধান্ত এবার বাংলাদেশের পক্ষে
১৩ মে ২০২৩
ধরুন, বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ডের এই ম্যাচে পরে ব্যাটিং করা দল আয়ারল্যান্ড। ধরুন, বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের মত ঠিক একই পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে জিতেছে তাঁরা। ধরুন, ম্যাচে আম্পয়ারদের সিদ্ধান্তগুলো গেল বাংলাদেশের বিপক্ষে। রান আউট, নো বল সবকিছুই। তখন কেমন লাগত আপনার? এমনটি কি ঘটেনি বাংলাদেশের সাথে?
ঘটেছে। বেশ কয়েকবারই ঘটেছে। এমন ফিফটি-ফিফটি সিদ্ধান্ত আসেনি বাংলাদেশের পক্ষে। যার খেসারত দিতে হয়েছে ম্যাচ হেরে। ফাইনাল হেরে। টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গিয়ে। বিশেষত ভারতের বিপক্ষে এমনটা হয়েছে বারবার।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে অন্তত দুটি ফিফটি-ফিফটি সিদ্ধান্ত এসেছে বাংলাদেশের পক্ষে। নইলে ম্যাচের ফল তো অন্যরকম হতেই পারত!
প্রথমটি যেমন মুশফিকুর রহিমের রান আউট। মাঠের আম্পায়ার সিদ্ধান্তের জন্য পাঠান টিভি আম্পায়ারের কাছে। স্ট্যাম্পের বেলস উঠেছে আগে নাকি মুশফিকের ব্যাটের লাইনের ভেতরে ঢুকেছে আগে। অনেকবার অনেক অ্যাঙ্গেল থেকে দেখেও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
কে জানে, স্ট্যাম্পে যদি এলইডি লাইট থাকত, তাহলে কী হত! কিংবা যদি ক্যামেরার আরেকটি অ্যাঙ্গেলে ধরা পড়ত মুহূর্তটি! সেক্ষেত্রে মুশফিক রান আউট হলেও হতে পারতেন।
কিন্তু ফিফটি-ফিফটি সিদ্ধান্তটি এল এবার বাংলাদেশের পক্ষে। মুশফিক বেঁচে গেলেন; বেঁচে রইল দলের জয়ের আশা।
এরপর শেষ ওভারের নো বল বিতর্ক। ফুল টস বলে ক্যাচ দেন মুশি। কিন্তু বলের উচ্চতা কি কোমড়ের উপরে ছিল? লেগ আম্পায়ার সহায়তা নেন টিভি আম্পায়ারের। এবারও বারবার রিপ্লে দেখে নিশ্চিত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর উপায় নেই।
শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত আসে বাংলাদেশের পক্ষে। নো বল এবং ফ্রি হিট। ফ্রি হিট বলে চার মেরে খেলা শেষ করেন মুশফিক। ওই সময় তিনি আউট হলে ম্যাচটি হারতেও পারত তামিম ইকবালের দল।
কিন্তু এমনি সিদ্ধান্ত কি বাংলাদেশের বিপক্ষে যায়নি? অনেকবার।
২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের কথা মনে করুন। মেলবোর্ন। বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ। রোহিত শর্মাকে ‘আউট’ করেছিলেন রুবেল হোসেন। কিন্তু উচ্চতার কারণে ঘোষণা করা হয় ‘নো বল’, যা না দিলেও হত। বেঁচে যান রোহিত। পরাজয়ের পেছনে সেটিকে বড় কারণ হিসেবে ধরে বাংলাদেশের ক্ষোভ যায়নি আজও।
কিংবা ধরুন, ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কথা। এবারও ফিফটি-ফিফটি সিদ্ধান্ত গেল ভারতের পক্ষে। বিরাট কোহলি করেন ‘ফেক ফিল্ডিং’। ক্রিকেট আইনে শাস্তি হিসেবে ব্যাটিংয়ে থাকা দল বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে ৫ রান যোগ হবার কথা। বাংলাদেশের ফিল্ডাররা এ ব্যাপারে আম্পায়ারের দৃষ্টি আকর্ষণও করেছিলেন। লাভ হয়নি।
ম্যাচটি বাংলাদেশে ঠিক ৫ রানে হেরে যাওয়ায় দুঃখটা বেড়ে যায় আরও।
আরেকটি ঘটনা, ২০১৮ সালের নিদাহাস ট্রফির। ওই ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে শ্রীলংকার বিপক্ষে ম্যাচে আম্পায়ারের এমন একটি সিদ্ধান্ত যায় বাংলাদেশের বিপক্ষে।
শেষ ওভারে মুস্তাফিজুর রহমান ব্যাটিংয়ে। লংকান বোলার ইসুরু উদানার প্রথম দুটি বল বাউন্সার। প্রথমটি নিয়ে সমস্যা না হলেও পরেরটি নিয়ে বাঁধে বিপত্তি। বাংলাদেশের দাবি, দ্বিতীয় বাউন্সারটি ‘নো বল’। কিন্তু আম্পায়ার সেটি দেননি। টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসান তো দুই ব্যাটসম্যানকে উঠে পড়ার ইঙ্গিত পর্যন্ত করেন। পরিস্থিতি হয়ে যায় তুমুল উত্তপ্ত। শেষে মাহমুদুল্লাহর ব্যাটে বাংলাদেশ জয় পায় বলে রক্ষা!
এ তো কয়েকটি মাত্র উদাহরণ। অতীতে এমন আরও অনেক ফিফটি-ফিফটি সিদ্ধান্ত গিয়েছে বাংলাদেশের বিপক্ষে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে রান আউট ও নো বলের সিদ্ধান্ত দুটি না হয় পক্ষেই এল!
অবস্থাটা নিঃসন্দেহে কষ্টদায়ক আইরিশদের জন্যে। হয়তো এই অনুভূতি তাদের জন্য নতুনও। কিন্তু বাংলাদেশী সমর্থকদের জন্য?
মন্তব্য করুন: