কেমন ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটে হাথুরুসিংহে অধ্যায়
১৫ অক্টোবর ২০২৪
ধুঁকতে থাকা অবস্থায় বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন চান্ডিকা হাথুরুসিংহে। সেখান থেকে টাইগারদের গড়ে তুলেছিলেন ওয়ানডের সেরা দলগুলোর একটি হিসেবে। এরপর হঠাৎ করেই সেই দলকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন এই শ্রীলঙ্কান কোচ। দ্বিতীয় দফায় দলের দায়িত্ব ফিরলেও আগের মতো আর জাদু দেখাতে পারেননি তিনি। হতাশাজনক পারফরম্যান্স ও মাঠের বাইরের নানা ইস্যুতে সমালোচিত হয়েই শেষ হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেটে তার যাত্রা।
মঙ্গলবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে হাথুরুসিংহেকে বরখাস্ত করার ঘোষণা দেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ।
দুই মেয়াদে সাকিব-তামিমদের গুরুর দায়িত্ব পালন করা হাথুরুসিংহে একই সঙ্গে দেশের ক্রিকেটের উত্থান-পতনের সাক্ষী হয়েছেন। প্রথম দফায় দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল কোচ হিসেবে দায়িত্ব ছাড়ার পর দ্বিতীয় দফার দায়িত্ব শেষ হয়েছে সম্ভবত দেশের সবচেয়ে সমালোচিত কোচ হিসেবে।
২০১৪ সালের মে মাসে প্রথম দফায় বাংলাদেশের হেড কোচের দায়িত্ব নেন হাথুরুসিংহে। লঙ্কান এই কোচ দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম সিরিজটি বেশ হতাশার কাটে টাইগারদের। দ্বিতীয় সারির ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ হারে তারা। মিরপুরে দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতকে ১০৫ রানে অলআউট করেও ম্যাচ হেরেছিল ৪৭ রানে। অলআউট হয় মাত্র ৫৮ রানে।
সেখান থেকে সাকিব-তামিম-মাশরাফি-মুশফিকদের নিয়ে বাংলাদেশ দলকে ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন ওয়ানডের অন্যতম সেরা হিসেবে। ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রথম ও শেষবারের মতো কোয়ার্টার-ফাইনালে খেলে টাইগাররা। একই বছর ঘরের মাঠে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো জেতে ওয়ানডে সিরিজ।
ধারাবাহিকভাবে ভালো করে র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থেকে ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার সুযোগ পায় বাংলাদেশ। কার্ডিফে নিউ জিল্যান্ডকে হারিয়ে সেমি-ফাইনালে উঠেছিল দলটি। সেই মেয়াদে হাথুরুসিংহের অধীনে খেলা ৫২ ওয়ানডের ২৫টিতেই জয় পায় বাংলাদেশ।
সাফল্য এসেছিল টেস্ট ক্রিকেটেও। ঘরের মাঠে স্পিনিং উইকেট বানিয়ে সাদা পোশাকের ইতিহাসে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াকে হারায় বাংলাদেশ। নিজেদের শততম টেস্টে শ্রীলঙ্কার মাটিতেই তাদের হারিয়েছিল দল। এই মেয়াদে তার অধীনে ২১ টেস্টের ৬টিতে জয় পায় বাংলাদেশ। ড্র করেছিল ৪টি।
এরপর ২০১৭ সালের অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সিরিজ চলাকালে ইমেইলের মাধ্যমে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব ছেড়েছিলেন হাথুরুসিংহে।
দ্বিতীয় দফায় ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে আবারও দলের দায়িত্ব নেন ৫৬ বছর বয়সী এই কোচ। ইংল্যান্ডের কাছে ওয়ানডে সিরিজে হারলেও তিন ম্যাচের টি-টুয়েন্টি তখনকার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হোয়াইটওয়াশড করে ভালোর শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন হাথুরুসিংহে। তবে পরে তা আর ধরে রাখতে পারেননি।
ভারতে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভরাডুবি হয় বাংলাদেশের। ৯ ম্যাচের মধ্যে জয় পায় মাত্র দুটিতে। হারের মুখ দেখে নেদারল্যান্ডসের কাছেও। এরপর চলতি বছর টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার এইটে উঠলেও দলের পারফরম্যান্স ছিল যাচ্ছে তাই। তার আগে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে টি-টুয়েন্টি সিরিজ হেরেছিল বাংলাদেশ।
এই মেয়াদে হাথুরুসিংহের অধীনে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাফল্যটা আসে টেস্ট ক্রিকেটে। পাকিস্তানের মাটিতে গত আগস্ট-সেপ্টেম্বরে হওয়া দুই ম্যাচের সিরিজে স্বাগতিকদের হোয়াইটওয়াশড করে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। তবে ভারতের বিপক্ষে পরের টেস্ট সিরিজেই জঘন্য পারফরম্যান্সে হোয়াইটওয়াশড হয় টাইগাররা।
টেস্টের পর টি-টুয়েন্টি সিরিজেও বেশ বাজেভাবে হারে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের একটিতেও সামান্যতম প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি পুরো দল।
দ্বিতীয় মেয়াদে হাথুরুসিংহের অধীনে ১০ টেস্টে ৫টিতে জয় পায় বাংলাদেশ। হেরেছে সমান সংখ্যক ম্যাচে। ৩৫ ওয়ানডের মধ্যে জয়ের দেখা পেয়েছে মাত্র ১৩টিতে। তবে টি-টুয়েন্টি প্রথমবারের তুলনায় বেশ সফল ছিলেন তিনি। ৩৫ ম্যাচের ১৯টিতেই জয় তুলে নেয় টাইগাররা, যেখানে প্রথম মেয়াদে তার অধীনে খেলা ২৯ টি-টুয়েন্টির ১০টিতে জয় পায় বাংলাদেশ।
তবে এই দফায় মাঠের পারফরম্যান্সে চেয়ে বাইরের কর্মকাণ্ডে বেশি সমালোচিত ছিলেন হাথুরুসিংহে। তার বিরুদ্ধে রয়েছে ক্রিকেটারদের গায়ে হাত তোলা থেকে শুরু করে অতিরিক্ত ছুটি কাটানোসহ নানা অভিযোগ। দলের মধ্যে ক্রিকেটারদের মাঝে দ্বন্দ্বের বিষয়টিও তার সময়ে সামনে আসে।
মন্তব্য করুন: