যে কারণে দেশে ফিরলেন না সাকিব
১৮ অক্টোবর ২০২৪
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্ট ম্যাচ দিয়ে সাদা পোশাকের ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে চেয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। ডাক পেয়েছিলেন মিরপুরে শুরু হতে যাওয়া সেই দলেও। এরপর যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশের উদ্দেশে রওনা দিলেও মাঝপথে এসে মত পাল্টেছেন দেশসেরা এই ক্রিকেটার। এবার জানা গেছে, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়কের সিদ্ধান্ত বদলানোর পেছনের কারণ।
বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে অংশ নিতে দেশে আসার কথা ছিল সাকিবের। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই পর্যন্তও চলে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু এরপর আর বাংলাদেশগামী বিমানে আর ওঠেননি এই ক্রিকেটার। এদিন ইএসপিএন ক্রিকইনফোসহ দেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমকে সাকিব জানান, বাংলাদেশে তার নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকায় তিনি হয়তো দেশে ফিরবেন না। তার নিরাপত্তার কথা ভেবেই সংশ্লিষ্টরা তাকে এই পরামর্শ দিয়েছে।
প্রথম টেস্টের দলে থাকার পরেও শেষ মুহূর্তে সাকিবের সিদ্ধান্ত বদলানো নিয়ে যে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল, তা কেটেছে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার এক বিবৃতিতে। মূলত খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা ও দেশের ক্রীড়াঙ্গনের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে জানিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে নিজের ফেইসবুক পেইজে জানান তিনি।
“আমি নিজেও চেয়েছি, সাকিব আল হাসানের মতো একজন ক্রিকেটার দেশের মাটিতে অবসর নিক। সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে। তবে, প্রথম দিকেই বলেছি সাকিব আল হাসানের আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের সাথে সংশ্লিষ্টতার কারণে জনমনে ক্ষোভ রয়েছে, যা স্বাভাবিক। রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করাসহ জনমনের ক্ষোভ নিরসনে তিনি ফেসবুক পোস্ট দিলেও সাম্প্রতিক প্রতিবাদে প্রতীয়মান হয়েছে যে তা যথেষ্ট ছিল না। যারা প্রতিবাদ করছে তাদেরও তা করার সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে।”
“সাউথ আফ্রিকা ও বাংলাদেশের মধ্যকার সিরিজে কোনোপ্রকার অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতেই আপাতত দেশে খেলতে আসার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে বিসিবিকে পরামর্শ দিতে হয়েছে। খেলোয়াড়দের নিরাপত্তার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি রক্ষার আশু ব্যবস্থা হিসেবেই এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তবে সকলেরই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত বলে মনে করি। কোন অভিযোগ থাকলে আইনি প্রক্রিয়ার আশ্রয় নিয়েই তার সমাধান খোঁজা যেতে পারে।”
গত ২৬ সেপ্টেম্বর টি-টুয়েন্টি ও টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন সাকিব। সে সময় সাদা পোশাকের ক্রিকেটকে দেশের মাটি থেকে বিদায় জানানোর ইচ্ছার কথাও বলেন তিনি। তবে এর সঙ্গে নিজের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা নিয়েও কথা বলেন তিনি।
এরপর বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদ বিষয়টি সরকারের ওপর ছেড়ে দিয়েছিলেন। ক্রীড়া উপদেষ্টা সাকিবকে গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান নিয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এরই প্রেক্ষিতে সেই ঘটনার দুই মাস পর চলতি মাসের শুরুতে দুঃখ প্রকাশ করে ফেইসবুকে পোস্ট দেন সাকিব।
সাকিবের এই পোস্টের পর আরও ফুঁসে ওঠে দেশের ক্রিকেট সমর্থকদের অনেকেই। গত কয়েক দিনে মিরপুর শের-ই- বাংলা স্টেডিয়ামে দেশের সর্বকালের সেরা এই ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে গ্রাফিতি অঙ্কনসহ কিছু মানুষ বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে মিছিল করেছেন। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়েছে।
আগামী সোমবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে মাঠে নামবে বাংলাদেশ।
মন্তব্য করুন: