স্পিনের ফাঁদ পাতা বাংলাদেশ ধরা খেল পেসে

২৪ অক্টোবর ২০২৪

স্পিনের ফাঁদ পাতা বাংলাদেশ ধরা খেল পেসে

প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকাকে টেস্টে হারাতে স্পিন দিয়ে ঘায়েল করার ছক কষেছিল বাংলাদেশ। টস জয়ের সিদ্ধান্ত থেকে শুরু করে একাদশ নির্বাচন, সব ক্ষেত্রেই ছিল সেই পরিকল্পনার ছাপ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নাজমুল হোসেন শান্তর দল ধরাশায়ী হয়েছে প্রোটিয়া পেসারদের কাছে।

বৃহস্পতিবার মিরপুরে প্রথম টেস্টের চতুর্থ দিন বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারিয়ে দুই ম্যাচ সিরিজে এগিয়ে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের স্পিনিং কন্ডিশনে ম্যাচের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি কাগিসো রাবাদা। দুই ইনিংস মিলিয়ে প্রোটিয়া এই পেসারের শিকার ৯ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে একাই নিয়েছেন ৬ উইকেট।

চতুর্থ ইনিংসে উইকেটে স্পিনাররা বাড়তি সুবিধা পাবে এই বিবেচনায় টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। এই পরিকল্পনা থেকেই স্পিন দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে একাদশে মাত্র একজন পেসার নিয়ে মাঠে নামে বাংলাদেশ। স্পিনে ছিলেন তাইজুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাঈম হাসান। অন্যদিকে দুইজন করে পেসার ও স্পিনার নিয়ে মাঠে নামে দক্ষিণ আফ্রিকা।

স্পিনিং কন্ডিশন হিসেবে পরিচিত মিরপুরের উইকেটে ব্যাটিংয়ে নেমে পেসারদের কাছেই প্রথম ধাক্কাটা খায় স্বাগতিকরা। ৫০ রানের আগেই হারায় ৫ উইকেট, যার প্রতিটিই নেন প্রোটিয়া পেসাররা। উইয়ান মুল্ডারের বলে তো রীতিমত চোখে সর্ষে ফুল দেখছিলেন বাংলাদেশ ব্যাটাররা। নিজের প্রথম তিন ওভারেই ডানহাতি এই পেসার তুলে নেন সাদমান ইসলাম, মুমিনুল হক ও শান্তকে। এরপর রাবাদার গতিতে দিশেহারা হয়ে ফেরেন মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস।

প্রথম ৬ ওভারেই বাংলাদেশের টপ-অর্ডার গুঁড়িয়ে দেন মুল্ডারশুরুর এই ধাক্কা আর সামলে উঠতে পারেনি পরের ব্যাটাররা। ৪০ ওভার ১ বলে কেবল ১০৬ রানেই গুটিয়ে যায় শান্তর দল। মিরপুরে এটি স্বাগতিকদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ। মুল্ডার ও রাবাদা মিলে নেন ৬ উইকেট।

এরপর বল হাতে প্রথম দিনের খেলা শেষ হওয়ার আগেই প্রোটিয়াদের ৬ উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ, যার ৫টিই নেন তাইজুল। কিন্তু পরের দিন তেমন কোনো সুবিধা করতে পারেননি এই বাঁহাতি স্পিনার। সফরকারীদের শেষ চার উইকেটের দুটি করে নেন একমাত্র পেসার হাসান মাহমুদ ও মিরাজ।

২০২ রানে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসেও প্রোটিয়া পেস তোপে দিশেহারা হয়ে পড়ে। তবে এবার একাই তাণ্ডব চালালেন রাবাদা। তৃতীয় ওভারেই তুলে নেন সাদমান ও মুমিনুলের উইকেট। এরপর তৃতীয় দিনের শুরুতে আবারও এক ওভারে জোড়া আঘাত হানেন টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে কম বলে তিনশ উইকেট নেওয়া এই পেসার। এবার তার শিকারে পরিণত হন মাহমুদুল হাসান জয় ও মুশফিক। প্রথম ইনিংসের মতো এবারও একই ধরণের ইনসুইং ডেলিভারিতে বোল্ড হন টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক মুশফিক।

দুই ইনিংসেই ইনসুইং ডেলিভারিতে মুশফিকের স্টাম্প লণ্ডভণ্ড করে দেন রাবাদাইনিংস ব্যবধানে পরাজয়ের শঙ্কায় থাকলেও মিরাজ ও জাকেরের ব্যাটে সেই শঙ্কা কাটায় স্বাগতিকরা। এমনকি দিনের খেলা শেষে এই ম্যাচে জয়ের আশার কথাও শোনান টাইগারদের স্পিন বোলিং কোচ মুশতাক আহমেদ। কিন্তু চতুর্থ দিন সকালে দ্বিতীয় নতুন বল হাতে সব আশা ধুলোয় মিশিয়ে দেন রাবাদা।

দিনের তৃতীয় বলে এই ডানহাতি পেসার তুলে নেন নাঈমকে। এরপর তাইজুলকে ফেরান মুল্ডার। একপ্রান্ত আগলে রেখে লড়াই চালিয়ে যাওয়া ৯৭ রান করা মিরাজকে ফিরিয়ে ৩০৭ রানে ইনিংসের ইতি টানেন রাবাদা।

অপেক্ষাকৃত কম অভিজ্ঞ দক্ষিণ আফ্রিকাকে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে হারানোর জন্য এবারের চেয়ে ভালো সুযোগ হয়তো আর পাবে না বাংলাদেশ। প্রথম টেস্টে নিজেদের সুবিধা মতো ফাঁদ পেতেও সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারল না শান্তর দল। এখন দেখার বিষয় চট্টগ্রামের ব্যাটিং সহায়ক কন্ডিশনে সিরিজের শেষ ম্যাচে নতুন কোন পরিকল্পনায় মাঠে নামে স্বাগতিকরা।

মন্তব্য করুন: