টেস্টে বাংলাদেশের জয়সোয়াল-ব্রুকরা কোথায়?

২১ নভেম্বর ২০২৪

টেস্টে বাংলাদেশের জয়সোয়াল-ব্রুকরা কোথায়?

চলতি বছর টেস্ট ক্রিকেটে একদমই বাজে সময় পার করছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জয় ছাড়া বাকি সবকটি ম্যাচেই হেরেছে বাজেভাবে। ছন্নছাড়া ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটারদের দায়িত্বহীনতা, সব মিলিয়ে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে বেশ কঠিন সময়ই পার করছে টাইগাররা। এখনও তাদের তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বিকেলে থাকা ব্যাটারদের দিকে। যেখানে অন্য দেশগুলোতে ইতোমধ্যেই অনেক তরুণ ব্যাটার দলের ব্যাটিং স্তম্ভে জায়গা করে নিয়েছেন।

অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপগুলোতে ব্যাট হাতে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করতে দেখা যায় বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের। সাদমান ইসলাম, নাজমুল হোসেন শান্ত থেকে শুরু করে হালের মাহমুদুল হাসান জয়, সবাই নিজেদের খেলা যুব বিশ্বকাপে ছিলেন দুর্দান্ত। কিন্তু বয়সভিত্তিক দল থেকে জাতীয় দলে আসার পর সেই চিত্র পাল্টে যায়। কিন্তু তাদের সঙ্গে যুব বিশ্বকাপে খেলা অন্য দেশের ক্রিকেটাররা ঠিকই বিশ্ব মঞ্চে নিজেদের আলাদাভাবে তুলে ধরছেন প্রতিনিয়ত।

গত কয়েক বছরে যুব বিশ্বকাপ খেলা ক্রিকেটারদের এই তালিকা করলে সবার আগে আসবে ভারতের যশস্বী জয়সোয়াল, শুবমান গিল, ইংল্যান্ডের হ্যারি ব্রুক, শ্রীলঙ্কার কামিন্দু মেন্ডিস ও নিউ জিল্যান্ডের রাচিন রবীন্দ্রর নাম। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে এদের মতো রান করা তো দূরের কথা, জাতীয় দলে ধারাবাহিকই হতে পারছেন না বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।

শান্ত ও মুশফিককে ছাড়াই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট খেলবে বাংলাদেশএখনও ক্যারিয়ারের শেষ দিকে থাকা মুশফিকুর রহিমের ওপরই ভরসা করতে হচ্ছে পুরো দলকে। এছাড়া মুমিনুল হক ও লিটন দাসের ব্যাটিংয়ের ওপর নির্ভর করতে হয় টেস্ট দলকে। তুলনামূলক তরুণ ক্রিকেটারদের মধ্যে এই তালিকায় আছেন শান্ত। আর সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাটিংয়ে বেশ উন্নতি করে এই তালিকায় যুক্ত হয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজও। কিন্তু তরুণদের মধ্যে ভরসা করার মতো আদৌ কেউ আছে কি না সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।

জয়সোয়ালের সঙ্গে ২০২০ যুব বিশ্বকাপ খেলা জয় এখন জাতীয় দলের টেস্ট ওপেনার। ডানহাতি এই ব্যাটার এখন পর্যন্ত ১৫ টেস্ট খেলে ফেললেও ধারাবাহিক হতে পারেননি। ২৮ ইনিংসে ৪টি ফিফটি ও এক সেঞ্চুরিতে ২৫ দশমিক ৫০ গড়ে মোটে রান করেছেন ৭১৪। এর মধ্যে কোনো রান না করেই সাজঘরে ফিরেছেন ছয়বার।

দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ক্যারিয়ারের একমাত্র সেঞ্চুরিটি হাঁকান জয়অন্যদিকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চলতি বছর পাঁচ ম্যাচের এক টেস্ট সিরিজেই ৭১২ রান করেছেন জয়সোয়াল। এর মধ্যে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন দুই ইনিংসে। শুধু তাই নয়, মাত্র ১৪ টেস্ট খেলেই হয়ে উঠেছেন ওপেনিংয়ে ভারতের ভরসার নাম।

একই কথা বলা যায় গিল, ব্রুক, মেন্ডিস ও রবীন্দ্রর ক্ষেত্রেও। তারা সবাই খেলেছিলেন ২০১৮ যুব বিশ্বকাপে। তাদের সঙ্গে সেই আসরে ছিলেন বাংলাদেশের জাকির হাসানও। এই বাঁহাতি এই ব্যাটার বর্তমানে টেস্ট দলের ওপেনার। কিন্তু ভারতের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি হাঁকানো ছাড়া এখন পর্যন্ত বলার মতো কিছুই করতে পারেননি তিনি। ১২ টেস্টে মাত্র ২৫ দশমিক ২৩ গড়ে করেছেন ৫৭৮ রান।

আরেক ওপেনার সাদমান টেস্টের জন্য বিশেষজ্ঞ ব্যাটার হলেও দলের হাল ধরতে পেরেছেন খুব কমই। এখন পর্যন্ত ১৯ টেস্ট খেলা এই বাঁহাতি ব্যাটার এক সেঞ্চুরিতে ২৩ দশমিক ২২ গড়ে করেছেন ৮১৩ রান। ২০১৪ যুব বিশ্বকাপে ৪০৬ রান তুলে তিনি ছিলেন সর্বোচ্চ রান-সংগ্রাহক। তার সঙ্গে ওই বিশ্বকাপে খেলা এইডেন মারক্রাম এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন দক্ষিণ আফ্রিকাকে। আর সাদমানের সমসাময়িক সাদিরা সামারাবিক্রমা শ্রীলঙ্কার টেস্ট দলের মিডল-অর্ডারের অন্যতম সদস্য।

২০১৪ যুব বিশ্বকাপে সাদমান ছাড়া ৪০০ রানের বেশি করতে পারেনি আর কেউইচোটের কারণে শুক্রবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শুরু হতে যাওয়া টেস্ট সিরিজের দলে নেই অভিজ্ঞ মুশফিক ও অধিনায়ক শান্ত। এই দুই ক্রিকেটারের বদলে দলে জায়গা পেয়েছেন মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন ও শাহাদাত হোসেন দিপু। এদের মধ্যে অঙ্কনের অভিষেক হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সবশেষ টেস্টে। দুই ইনিংস মিলিয়ে করেছেন ২৯ রান। অন্যদিকে ২০২০ যুব বিশ্বকাপ জয়ী দলের আরেক সদস্য দিপুর অভিষেক আরও আগে। প্রথম চার টেস্টে ১৪ দশমিক ৭৫ গড়ে ১১৮ রানের হতাশাজনক পারফরম্যান্সের কারণে দল থেকে বাদ পড়েছিলেন।

সব মিলিয়ে ক্যারিবিয়ান পেসারদের সামনে যে বাংলাদেশের নড়বড়ে এবং অধারাবাহিক ব্যাটিং-অর্ডারের জন্য যে কঠিন পরীক্ষা অপেক্ষা করছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

মন্তব্য করুন: